Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ডেঙ্গি রোধে সচেতনতার প্রচার শিক্ষক-পডুয়াদের

ডেঙ্গির মশার আঁতুড়ঘর শুধু পরিষ্কার জমা জল নয়, বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কও হতে পারে। সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তা হাতে আসার পরেই শহরবাসীকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে রাস্তায় নেমেছেন আসানসোলের বিবি কলেজের এক দল শিক্ষক ও পড়ুয়া।

বাসিন্দাদের বোঝাচ্ছেন শিক্ষকেরা। নিজস্ব চিত্র।

বাসিন্দাদের বোঝাচ্ছেন শিক্ষকেরা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০৮
Share: Save:

ডেঙ্গির মশার আঁতুড়ঘর শুধু পরিষ্কার জমা জল নয়, বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কও হতে পারে। সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তা হাতে আসার পরেই শহরবাসীকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে রাস্তায় নেমেছেন আসানসোলের বিবি কলেজের এক দল শিক্ষক ও পড়ুয়া। এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে কী করা উচিত, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে শহরবাসীকে জানাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের এই অভিযানে সাহায্যের হাত বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন আসানসোল পুর কর্তৃপক্ষও।

আসানসোল শিল্পাঞ্চলে সাম্প্রতিক কালে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের ঘটনা বিশেষ নেই। কিন্তু তা বলে সাবধানতার মার নেই। তাই বছর দুয়েক ধরে শহরে একটি গবেষণা চালিয়েছেন আসানসোলের বিবি কলেজের প্রাণিবিদ্যা ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক-অধ্যাপকেরা। এমনই এক জন অধ্যাপক অরূপ ঘোষ জানান, বর্ষায় সাধারণত জল এক জায়গায় জমে থাকে না। বৃষ্টির তোড়ে মশার লার্ভা ধুয়ে যায়। আবার সরকারের ধারাবাহিক প্রচারের ফলে শহরবাসীও বাড়ি বা চারপাশের অঞ্চলে জল জমতে দিচ্ছেন না। তাহলে তার পরেও ডেঙ্গির আক্রমণ থামছে না কেন, সেটাই তাঁদের ভাবিয়ে তুলেছিল। অরূপবাবু বলেন, ‘‘আমরা আশঙ্কা করছিলাম, সেপটিক ট্যাঙ্কগুলিও ডেঙ্গির মশার উৎসস্থল হতে পারে। শহর জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সেপটিক ট্যাঙ্কগুলি পরীক্ষার কাজ শুরু করলাম। সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিজেদের রসায়নগারে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হলাম, সেখানেও ডেঙ্গি মশার লার্ভা তৈরি হতে পারে।’’

কলেজে এই গবেষণায় যুক্ত শিক্ষক-অধ্যাপকেরা জানান, এই বিষয়টি নিয়ে তাঁরা একটি বিশদ রিপোর্ট তৈরি করেন। কলকাতায় আয়োজিত ১৯তম রাজ্য বিজ্ঞান ও কারিগরি কংগ্রেসের অধিবেশনে সেই রিপোর্ট তুলে ধরা হয়। সেখানে বিশেষজ্ঞেরা এই রিপোর্টের সম্পর্কে একমত হন ও কাজের স্বীকৃতি হিসেবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে পুরস্কৃতও করেন। এর পরেই তাঁদের গবেষণার রিপোর্ট হু-এর কাছে পাঠান কলেজ কর্তৃপক্ষ।

কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আর এক গবেষক সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, ‘‘হু-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টেও ডেঙ্গির মশার অন্যতম প্রধান উৎসস্থল হিসেবে সেপটিক ট্যাঙ্কগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর পরেই আমরা শহর জুড়ে প্রচার অভিযানে নেমেছি।’’ অধ্যাপকেরা জানান, সেপটিক ট্যাঙ্কগুলির কারিগরি ব্যবস্থায় সামান্য পরিবর্তন করলেই বিপদ কাটানো যাবে। তাঁরা জানান, সে জন্য ট্যাঙ্ক থেকে জল বেরোনোর পাইপের মুখে একটি সাইফোন বসাতে হবে। সেটির বাইরের অংশে একটি তারের জালি লাগাতে হবে। তা হলে ট্যাঙ্কে মশা ঢুকে বংশবৃদ্ধি করতে পারবে না।

কলেজের অধ্যাপক ও পড়ুয়ারা ছোট-ছোট দলে ভাগ হয়ে আসানসোল শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বাসিন্দাদের সে কথাই বোঝাচ্ছেন। পুজোর সময় থেকে শুরু হয়েছে তাঁদের এই প্রচার। কিছু পুজো মণ্ডপে ব্যানার টাঙিয়ে দর্শনার্থীদের সচেতন করেছিলেন তাঁরা। তার পরে মাঝে কিছু দিন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সাত থেকে দশ জন করে শিক্ষক ও পড়ুয়া তিন-চারটি দলে ভাগ হয়ে এলাকা ঘুরে প্রচার শুরু করেছেন। শনিবার আসানসোলের শান্তিনগরে কিছু বাড়িতে যান তাঁরা। এলাকার কিছু মানুষজনও তাতে সামিল হচ্ছেন।

এই কাজে পুরসভাকে পাশে পেতে চেয়ে মেয়রের কাছে আবেদন করেছেন অধ্যাপকেরা। মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি জানান, এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। রাজ্য জুড়ে ডেঙ্গির প্রভাব রুখতে তিনি প্রসঙ্গটি স্বাস্থ্য দফতরেও জানাবেন বলে জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Asansol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE