Advertisement
E-Paper

ভোটের আগেই জয়, ভোট তাই নিরুত্তাপ

আলো জ্বালিয়ে রাত জেগে দেওয়াল লিখন সে ভাবে চোখে পড়ছে না। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে নিস্পৃহ কালনার সাধারণ মানুষ। বিরোধীদের অভিযোগ, হুমকি আর সন্ত্রাস দিয়ে ভোট হওয়ার ঢের আগে, মনোনয়ন পর্বেই অর্ধেকের বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসন জিতে ফেলেছে শাসকদল।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০০:১৫
প্রস্তুতি: ফ্লেক্সেও শাসকদল, কালনায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

প্রস্তুতি: ফ্লেক্সেও শাসকদল, কালনায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

এ কেমন ভোট!

পুকুরধারে বাঁশের মাচায় প্রার্থী নিয়ে আলোচনা নেই। বৌদি-ননদ বা কাকা-ভাইপোর টক্কর ঘিরে ফি-ভোটে যে জমজমাট তর্ক হত, তা-ও নেই। আলো জ্বালিয়ে রাত জেগে দেওয়াল লিখন সে ভাবে চোখে পড়ছে না। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে নিস্পৃহ কালনার সাধারণ মানুষ। বিরোধীদের অভিযোগ, হুমকি আর সন্ত্রাস দিয়ে ভোট হওয়ার ঢের আগে, মনোনয়ন পর্বেই অর্ধেকের বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসন জিতে ফেলেছে শাসকদল। সেই ভোট নিয়ে কেনই বা ভাববে আমজনতা? তাই তাঁরা এ বারের ভোট নিয়ে নিরুত্তাপ।

কালনা মহকুমায় গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ১২১টি এবং ১৫টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে তৃণমূল। অনেক আসনে তৃণমূল বনাম তৃণমূল (গোঁজ প্রার্থী) লড়াই হচ্ছে। কিন্তু, সেখানেও বহু ক্ষেত্রে দলের নির্দেশে অনেক গোঁজ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন বা নেবেন বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। অর্থাৎ, সেই সব আসনও হবে শাসকদলের জন্য নিষ্কণ্টক। বিরোধী শিবির এ-ও মানছে, অনেক আসনে তাদের এমন কিছু প্রার্থী আছেন, যাঁরা শাসকদলের সামনে আদৌ লড়াই তুলে ধরতে পারবেন না।

বিজেপির রাজ্য সম্পাদক রাজীব ভৌমিক কটাক্ষের সুরে বলছেন, ‘‘প্রশাসনই জানিয়েছে, এ বার পূর্ব বর্ধমানে ৩২৩৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনের মধ্যে নির্বাচনের আগেই শাসক দল ১৭১৯টি আসনে জিতে গিয়েছে। এর পরেও ভোট নিয়ে মানুষের আগ্রহ আসবে কোত্থেকে?’’

এমনিতে বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট মানে এক হইহই রইরই ব্যাপার। রাজনৈতিক দলগুলির অফিসে গিজগিজ করে মাথা। রং, তুলি, ফেস্টুন, ব্যানার কোন কোন সংসদে কত যাবে, তা নিয়ে পার্টি অফিসে হিসাব কষতে বসেন নেতারা। দেওয়াল দখল নিয়েও শুরু হয়ে যায় রেষারেষি। বাড়ির সামনের পাঁচিলে দেওয়াল লিখনের দাবিদার একধিক রাজনৈতিক দল হয়ে যাওয়ায় অনেক কর্তাকেই ভাগ করে দিতে হয় লেখার এলাকা। গ্রামে গ্রামে রাত জেগেও চলে দেওয়াল লিখন। কোথাও দুই জা, কোথাও বৌদি-ননদ আবার কোথাও দাদা-ভাই লড়াই নিয়ে পাড়ায় জমে ওঠে পারিবারিক ভোট যুদ্ধ। এ বার মনোনয়ন পর্ব মিটে যাওয়ার পরেও এ-সব ছবি অমিল।

বরং সাধারন মানুষ বেশি আগ্রহ চৈত্র সেলে। সম্প্রতি কালনা শহরের হয়েছে বড়সড় এক শপিংমল। সেলে তাদের সস্তার পণ্য কিনতে বিকেলে হলেই মানুষের ঢল। শহরে আলোচনাও রয়েছে সেলের বাজার নিয়ে। পঞ্চায়েত ভোট তাতে ঠাঁই পায়নি। শুক্রবার ওই শপিংমলে কেনাকাটা করতে আসা নাদনঘাটের এক যুবক জ্যোতি মণ্ডলকে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে প্রশ্ন করতেই বললেন, ‘‘ফল তো আগেই জানা হয়ে গিয়েছে! তাই ভোট ঘিরে আগ্রহ নেই।’’ শেষ চৈত্রের দুপুরে তিলের জমিতে কাজ করছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব হাবু শেখ। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক ভোট দেখেছি। এ বারেরটা যেন আলাদা। ভোটের আগেই তো সব হিসেবনিকেশ স্পষ্ট।’’

বিজেপি নেতা রাজীবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন জমার সময়সীমা বাড়ানোর নির্দেশ রাতে দিয়ে পরদিন সকালেই তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার দৃশ্য সাধারণ মানুষ দেখেছেন। এর পরে তাঁদের ভোটের প্রতি আগ্রহ না থাকাটাই স্বাভাবিক।’’ মহকুমা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডলের দাবি, ‘‘শাসকদল ব্লকে ব্লকে সন্ত্রাসের ছবি তুলে না ধরলে ভোটের উত্তাপটা থাকতো।’’ তাঁদের আরও অভিযোগ, ইতিমধ্যেই মনোনয়ন জমা দেওয়া বিরোধী প্রার্থীদের উপরে তা তুলে নেওয়ার চাপও শুরু হয়ে গিয়েছে। এক বিরোধী নেতার কথায়, ‘‘অন্য বার পঞ্চায়েত ভোটের জন্য বিপুল পরিমাণ ফ্ল্যাগ-ফেস্টুন কেনা হয়। এ বার কেনা মানেই অর্থের অপচয়। কারণ, ফল আগেই প্রকাশিত!’’

বিরোধীদের সব অভিযোগ নস্যাৎ করে বিদায়ী জেলা সভাধিপতি তথা জেলা তৃণমূল নেতা দেবু টুডু বলে দিচ্ছেন, ‘‘সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিরোধীরা আসলে নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতাই ঢাকছে। ওদের হয়ে কেউ প্রার্থী হতে চাইছেন না বলেই প্রার্থী পাচ্ছে না।’’

West Bengal Panchayat Elections 2018 TMC Uncontested Election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy