উৎসবের মরসুমে মোটরবাইকের দৌরাত্ম্যের মাঝে পথচলা কার্যত অভ্যেস হয়ে গিয়েছে শহরবাসীর। এ বার পুজোয় সেই দাপট বন্ধ করাই ছিল পুলিশ-প্রশাসনের কাছে বড় মাথাব্যথা। শক্ত হাতে সেই কাজ করা গিয়েছে, পুজো শেষে দাবি করল আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট। যদিও চার দিনে বেশ কিছু মোটরবাইক দুর্ঘটনা ঘটেছে, মত্ত অবস্থায় মোটরবাইক নিয়ে পথে বেরিয়ে গ্রেফতারও হয়েছে কয়েক জন। কিন্তু বিক্ষিপ্ত কিছু দুষ্কর্ম ছাড়া পুজো শান্তিতেই মিটেছে বলে স্বস্তির শ্বাস নিচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর দুর্গাপুরে নেশা করে গাড়ি চালানো, প্রকাশ্যে মদ্যপান, অভব্যতা-সহ নানা অভিযোগে পুলিশ প্রায় তিনশো জনকে গ্রেফতার করে। এই বছর সেই সংখ্যা একশোর আশপাশে দাঁড়িয়েছে। শহরবাসী জানান, এ বার সিটি সেন্টার, বেনাচিতির মতো এলাকায় পুলিশি টহল বেশি ছিল। বিভিন্ন মোড়ে সিভিক ভলান্টিয়াররা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন। শহরের এ-জোনের বাসিন্দা অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গত বার পুজোর সময় মোটরবাইক আরোহীদের খুব উপদ্রব ছিল। এ বার সেই তুলনায় অনেকটা কম।’’
তবে তা সত্ত্বেও বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর চার দিন জনা দশেক মোটরবাইক আরোহী জখম অবস্থায় এসেছেন। শহরের পথে অনেক আরোহীকে হেলমেট ছাড়াই ঘুরতে দেখা গিয়েছে বলেও পথচারীদের অভিযোগ। যদিও পুলিশের দাবি, সেই সংখ্যাটা খুব কম। এই ধরনের কিছু দেখা গেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কমিশনারেট সূত্রের খবর, আসানসোলের নানা এলাকায় চার দিনে গোটা দশেক মোটরবাইক দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে কারও মৃত্যু হয়নি। এসিপি (সেন্ট্রাল) বরুণ বৈদ্য বলেন, ‘‘মত্ত অবস্থায় লাগামছাড়া মোটরবাইক চালানোয় বেশ কয়েক জন গ্রেফতার হয়েছে।’’
বাসিন্দাদের একাংশের অবশ্য অনুমান, মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য এ বার কম থাকার পিছনে অন্যতম কারণ বৃষ্টি। অষ্টমী ও নবমীতে প্রবল বৃষ্টিতে অনেকেই বাড়ি থেকে বেরোতে পারেননি। নবমী ও দশমীতে বাইরে থেকে প্রচুর গাড়িতে করে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান দুর্গাপুরের বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে।
পুজোর সময়ে বাসিন্দাদের বাইরে বেড়াতে যাওয়া বা প্রতিমা দর্শনে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে বেশ কিছু বাড়িতে লুঠপাটের ঘটনা ঘটে প্রায় প্রতি বছরই। তা ঠেকাতে এ বার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছিল বলে কমিশনারেট জানিয়েছে। ভিড়ের মাঝে সাদা পোশাকের পুলিশও মোতায়েন ছিল। এসিপি (সেন্ট্রাল) জানান, পুজোর মধ্যেই আসানসোল বাজার এলাকা থেকে বান্টি গুপ্ত নামে এক ব্যক্তিকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে।
অষ্টমীর সকালে আসানসোলের ঘাগড়বুড়ি মন্দিরের কাছে একটি হিমঘর থেকে গ্যাস লিকের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়। তবে পুলিশ ও দমকল দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সে দিনই বারাবনির নুনি গ্রাম লাগোয়া একটি অটো স্ট্যান্ডে দুই পাড়ার যুবকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ গিয়ে সামাল দেয়। তবে থানায় কোনও অভিযোগ হয়নি বলে জানান এডিসিপি (পশ্চিম) অনামিত্র দাস।