রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সাংসদ দিলীপ ঘোষ-সহ অন্য নেতৃত্ব। নিজস্ব চিত্র
ভোটে সাফল্যের জন্য অনেক দিন ধরেই ‘রাঢ়বঙ্গ জ়োন’ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে দলের কাছে। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম— এই পাঁচটি জেলার সংগঠনকে নিয়ে আগে আলাদা ভাবে দুর্গাপুরে বৈঠকও করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এ বার দলের দু’দিনের রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকও আয়োজন হচ্ছে এই শহরে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, রাঢ়বঙ্গে শক্তি বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখেই এই অঞ্চলের কার্যত কেন্দ্রস্থল দুর্গাপুরকে বৈঠকের জন্য বেছে নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এ ছাড়াও, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এখানে বৈঠক আয়োজনের অন্যতম কারণ বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
দল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ‘রাঢ়বঙ্গ জোনে’ সাফল্য পেলেও, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে সে প্রভাব ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। ২০২০-র নভেম্বরে দুর্গাপুরে এই জ়োনের দু’দিনের সাংগঠনিক বৈঠকের আয়োজন হয়েছিল। বিজেপির বিশেষ কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক বিনোদকুমার সোনকার পাঁচ জেলার মোট সাতটি দলীয় সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। সংগঠনের কোথায় কী খামতি, তা কী ভাবে পূরণ করা যাবে— এমন নানা বিষয়ে তিনি নির্দেশ দেন। দল সূত্রের খবর, বিধানসভা ভোটে এই অঞ্চলে মোট ৫৭টি আসনের মধ্যে ৫০টিতে জয়ের লক্ষ্যে বিজেপি ঝাঁপাবে বলে আলোচনা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জয় এসেছিল ১৮টি আসনে। তবে হাল ছাড়তে রাজি নন বিজেপি নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত ভোটেও এই এলাকায় বিশেষ জোর দিতে চান তাঁরা।
বিজেপি সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপুর বরাবরই নেতৃত্বের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায় ভৌগলিক অবস্থান ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে। এখানে বৈঠকের আয়োজন করলে বাকি জেলাগুলি থেকে কর্মকর্তারা সহজে যাতায়াত করতে পারেন। শহরের অদূরে অন্ডাল বিমানবন্দর থাকায়, কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের যাতায়াতেও সুবিধা হয়। যেমন, এ দিন সুনীল বনসল দিল্লি থেকে বিমানে অন্ডালে নেমে সোজা বৈঠকে এসে যোগ দেন। আবার, এই শহরে দলের ভাল ‘ভোটব্যাঙ্ক’ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বিজেপি নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটে দুর্গাপুর থেকে বিপুল ভোট পেয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া জয়ী হন। বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুর পশ্চিমে জেতে বিজেপি। পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনায় দুর্গাপুর অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের এক নেতা বলেন, “দুর্গাপুরে রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠক আয়োজনের পিছনে পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের আগে এই অঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে।’’ সামনে দুর্গাপুরের পুরভোটও রয়েছে। দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, “দুর্গাপুরে এই বৈঠক হওয়ায়, স্বাভাবিক ভাবেই পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটের আগে কর্মীদের মনোবল বাড়বে।” তৃণমূল নেতা উত্তম মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য টিপ্পনী, “ঝাঁ চকচকে হোটেলে দলীয় সম্মেলন হচ্ছে। দলের সাধারণ কর্মীদের নেতাদের কাছে ঘেঁষতেও দেওয়া হচ্ছে না। এ ভাবে কি কর্মীদের মনোবল বাড়ে!”
এ দিন বিকেলে সিটি সেন্টারের একটি হোটেলে বৈঠক শুরুর আগে বিজেপির রাজ্য স্তরের নেতাদের নিয়ে বর্ণাঢ্য পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। কর্মীরা মোটরবাইক মিছিল করেন। সেখানে অনেকে হেলমেট পরেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব সে অভিযোগ মানেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy