Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
গলসিতে বাসের ধাক্কায় মৃত তিন আদিবাসী শিল্পী

পরব পাল্টে গেল শোকে

ফেরার আগেই দুর্ঘটনায় গ্রামের দুই যুবক প্রাণ হারানোয় উৎসবের বদলে শোকের ছায়া গ্রামে। খবর পেয়ে অন্য নাচের দলের সদস্যেরাও ফিরে এসেছেন

আউশগ্রামে রাধামোহনপুর গ্রামে মৃতদের বাড়ির সামনে পড়শিদের ভিড়। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

আউশগ্রামে রাধামোহনপুর গ্রামে মৃতদের বাড়ির সামনে পড়শিদের ভিড়। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৫১
Share: Save:

ষষ্ঠীর দিন থেকে গ্রামে শুরু হয়েছিল ডাঁসাই পরব। তারই অঙ্গ হিসাবে অন্য গ্রামে গিয়েছিল নাচের দল। সেখান থেকে পার্বণী আদায় করে গ্রামে ফিরে উৎসবে মেতে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু, ফেরার আগেই দুর্ঘটনায় গ্রামের দুই যুবক প্রাণ হারানোয় উৎসবের বদলে শোকের ছায়া গ্রামে। খবর পেয়ে অন্য নাচের দলের সদস্যেরাও ফিরে এসেছেন। কান্নার রোল উঠেছে আউশগ্রামের রাধামোহনপুর গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রাম থেকে পাঁচ জনের একটি দল মঙ্গলবার দুপুরে ‘চাদরবাঁধনি’ নিয়ে গলসির সোনাডাঙা গ্রামে যান। সেখানকার এক জনকে সঙ্গে নিয়ে দলটি এলাকার বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ ও বাড়ি-বাড়ি ঘুরে গান গেয়ে কাঠের পুতুলের নাচ দেখাচ্ছিলেন। শনিবারই দলটির গ্রামে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ মোটরভ্যানে করে গলসির ইটুরি গ্রাম থেকে সোনাডাঙা ফেরার সময়ে গলসির খানোর কাছে রাস্তা পেরোতে গেলে একটি বাস তাঁদের ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনাস্থলেই ওই দলের তিন সদস্য প্রাণ হারান। তাঁদের মধ্যে বরকা বেসরা (৩৫) ও সুনীল মুর্মুর (৩১) বাড়ি রাধামোহনপুরে। সুনীলের আত্মীয় চুরকো সরেন (৪৮) বাড়ি গলসির সোনাডাঙার বাসিন্দা ছিলেন। মোটরভ্যানের আরও তিন আরোহী গুরুতর আহত হন। তাঁরা প্রত্যেকেই রাধামোহনপুরের বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে এক জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

শনিবার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাসিন্দারা ভিড় করে রয়েছেন মৃতদের বাড়ির সামনে। পরিজনেরাও এসেছেন বাইরে থেকে। বরকার বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী শিবানি বেসরা ও দুই নাবালক ছেলে। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে শিবানি কেঁদে চলেছেন। দুই ছেলে সোম ও বিজয় রয়েছে বাড়িতেই। দিনমজুর বরকা নাচের দলে মাদল বাজাতেন।

সুনীলের বাড়িতেও একই ছবি। তাঁর বাবা হোপনা মুর্মু বলেন, ‘‘তিন ছেলের মধ্যে আমার একমাত্র সম্বল ছিল ও। দুর্ঘটনায় সে-ও চলে গেল।’’ সুনীলের বাড়িতে রয়েছেন তাঁর মা চুরকি মুর্মু, স্ত্রী ধানি মুর্মু ও দুই ছেলেমেয়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় তাঁরা বাকরুদ্ধ। মাস সাতেক আগে মোটরভ্যানটি কিনেছিলেন সুনীল। সেই ভ্যানেই ওই দলটি গিয়েছিল।

দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বাড়িতে রয়েছেন কানু হেমব্রম। তিনি গান গাইতেন। তাঁর কথায়, ‘‘মোটরভ্যানে ছ’জন ছিলাম। রাস্তা পেরোনোর সময়ে একটি সরকারি বাস ধাক্কা দেয়। ভ্যানের সামনের দিকে থাকা তিন জন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পিছনের দিকে থাকা তিন জন প্রাণে বেঁচে যাই।’’

বরকার পড়শি, বছর পঁয়ষট্টির দিবাই বেসরা জানান, ‘‘ফি-বছর আমরা ডাঁসাই পরব পালন করি, যাতে কোনও অশুভ শক্তি আমাদের ক্ষতি করতে না পারে। কিন্তু সেই পরবের মাঝেই গ্রামের দু’টি ছেলে চলে গেল!’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নাচন দলের পার্বণী থেকে কালীপুজোর রাতে গোটা গ্রামের উৎসবে মেতে ওঠার রীতি রয়েছে। এই ঘটনার পরে তা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Tribal Galsi Bus Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE