Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Cattle

হেঁটে সেতু পেরিয়ে হাটে আনা হচ্ছে গরু

হাটে আসা লোকজনের অনেকের দাবি, বছর পনেরো আগেও বেশিরভাগ গরু বিভিন্ন এলাকা থেকে হাঁটিয়েই আনতেন বিক্রেতারা। তার পরে ধীরে ধীরে ট্রাকে আনা শুরু হয়।

Picture of cattle.

বীরভূম থেকে অজয় পার করে সালানপুরের লালগঞ্জের পথে গরু। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:২১
Share: Save:

সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার হাট বসে সালানপুরের লালগঞ্জে। জেলায় প্রাচীন গরুর হাট বলে পরিচিত সেই হাটে এ রাজ্যের নানা জেলা তো বটেই, ভিন্‌ রাজ্য থেকেও গরু এনে কেনাবেচা হয়। অতীতে গরুগুলিকে লাগোয়া জেলা থেকে হাঁটিয়ে আনা হত। সময়ের সঙ্গে ট্রাক বা পিক-আপ ভ্যানে পরিবহণ চালু হয়েছে। গত কয়েক মাসে গরু পাচার মামলা নিয়ে রাজ্য তোলপাড় হয়েছে। চলেছে ধরপাকড়। এই পরিস্থিতিতে, ট্রাকে গরু আনা খানিক কমেছে, তবে লাগোয়া জেলা থেকে হাঁটিয়ে আনা গরু কেনাবেচা চলছেই— জানা গেল ব্যবসায়ীদের সূত্রে। ধরপাকড়, গরু নিয়ে যাওয়া গাড়ি আটকে বিক্ষোভের জেরে ফলের কন্টেনার বা গাড়ির ডিকিতে গরু নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নজরে এসেছে বলে জানা যায় পুলিশ সূত্রে।

সম্প্রতি লালগঞ্জের হাটে যাওয়ার পথে দেখা যায়, কয়েক কিলোমিটার আগে গোটা পঞ্চাশ গরু হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন জনা কয়েক ব্যক্তি। হাটে ঢুকে দেখা গেল, শ’চারেক গরু কেনাবেচার জন্য আনা হয়েছে। লাল রঙের নানা রকম চিহ্ন আঁকা আছে বিভিন্ন গরুর গায়ে। বিক্রেতারা জানালেন, গরু চিনে নিতে নিজেদের মতো চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়। জোড়া গরু বিক্রি পিছু হাট মালিককে তিনশো টাকা দিতে হয়। নানা বয়সের গরুর মূল্য ১৫ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। জোড়া বাছুর বিক্রি হচ্ছে ৯-১০ হাজার টাকায়। হাটে বিক্রেতাদের অনেকে জানালেন, এখন বেশির ভাগ গরু আসছে বীরভূমের নানা প্রান্ত থেকে। এ ছাড়া, ঝাড়খণ্ডের নলা, জামতাড়া, নিরসা, মিহিজামের মতো এলাকা থেকেও আনা হচ্ছে। এ ছাড়া বারাবনি, জামুড়িয়া-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মাঝে-মাঝে কিছু বিক্রেতা আসেন।

হাটে আসা লোকজনের অনেকের দাবি, বছর পনেরো আগেও বেশিরভাগ গরু বিভিন্ন এলাকা থেকে হাঁটিয়েই আনতেন বিক্রেতারা। তার পরে ধীরে ধীরে ট্রাকে আনা শুরু হয়। বছর পাঁচেক পিক-অ্যাপ ভ্যানের চল বেড়েছে। ভ্যান ও ট্রাকে ত্রিপল দিয়ে ঢাকা থাকে। সম্প্রতি ফল পরিবহণের কন্টেনারে গরু নিয়ে যাওয়ার সময়ে আটকায় জামুড়িয়ার পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূমের ইলামবাজার থেকে অজয়ের শিবপুর সেতু, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট-সহ বীরভূমের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাণ্ডবেশ্বর সেতু, জামুড়িয়ার দরবারডাঙা, বাঘডিহা, চুরুলিয়া, বারাবনির রুনাকুড়া ঘাট হয়ে হাঁটিয়ে বা গাড়িতে গরু নিয়ে লালগঞ্জ হাটে আসছেন বিক্রেতারা। দরবারডাঙার এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘ছোট বাছুর মোটরবাইকে বেঁধেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। লালগঞ্জের হাটের আগের দিন এই সব ঘাট দিয়ে বীরভূম ও ঝাড়খণ্ড থেকে গরু আনা হয়।’’ বিক্রেতাদের একাংশের দাবি, লালগঞ্জে বিক্রি না হলে তাঁরা গরু নিয়ে চলে যান পুরুলিয়ার কাশিপুরের হাটে। সেখানে বিক্রি বেশি। কাশিপুর থেকে নানা গাড়িতে তুলে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় গরু যায় বলে দাবি তাঁদের।

ধরপাকড় সত্ত্বেও গরু পাচার চলছে বলে অভিযোগ বিজেপির। গরুগুলিকে নানা গাড়িতে ঠাসাঠাসি করে, অমানবিক ভাবে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও দলের নেতাদের দাবি। বিজেপি নেতা মদন ত্রিবেদী, গৌতম মণ্ডলেরা দাবি করেন, বিভিন্ন সময়ে জেলার রাস্তায় তাঁরা গরু বোঝাই ট্রাক, ভ্যান আটকেছেন। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে সেই সময়ে হয়তো পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে, কিন্তু ওই ভাবে গরু নিয়ে যাওয়া বন্ধ হয়নি, দাবি বিজেপি নেতাদের। তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের পাল্টা দাবি, ‘‘প্রশাসন তৎপর রয়েছে। বেআইনি ভাবে গরু কেউ পাচার করতে পারবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cattle Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE