Advertisement
E-Paper

মজুত আলু কিনবে কে, চিন্তায় জেলার হিমঘর

হিমঘরে রাখার পরে যে আলুর দর বস্তা পিছু ছিল ৫৫০ টাকা, এখন ৫০ টাকাতেও সে আলুর বন্ড কেনার লোক নেই। বস্তা পিছু ৫০ টাকাও দাম উঠছে না।

কালনার হিমঘরে জমে রয়েছে আলু। —নিজস্ব চিত্র।

কালনার হিমঘরে জমে রয়েছে আলু। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:২১
Share
Save

হিমঘরে রাখার পরে যে আলুর দর বস্তা পিছু ছিল ৫৫০ টাকা, এখন ৫০ টাকাতেও সে আলুর বন্ড কেনার লোক নেই। বস্তা পিছু ৫০ টাকাও দাম উঠছে না। বন্ডের দর হিমঘরে রাখার ভাড়ার থেকে কমে যাওয়ায় মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও বহু চাষি ও ব্যবসায়ীর আলু পরে রয়েছে জেলার হিমঘরগুলিতে। হিমঘর মালিকদের আশঙ্কা, বর্তমান পরিস্থিতিতে পরে থাকা আলু নিলামে চড়ালেও কেনার লোক মিলবে যৎসামান্য। তাঁরা প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে দাবি করে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ, নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকেই হু হু করে নেমেছে আলুর দর।

কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বর্ধমান জেলায় মোটামুটি ৭০ হাজার হেক্টর জমি থেকে ২১ লক্ষ মেট্রিক টন আলু মেলে। তা রাখা হয় জেলার ১১০টি হিমঘরে। মজুত আলু জেলার চাহিদা মিটিয়ে ব্যবসায়ীরা পাঠান অন্ধ্রপ্রদেশ, ও়ড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, অসমের মতো ভিন্ রাজ্যে। স্থানীয় সূত্রের খবর, জমি থেকে গতবার আলু ওঠার পর বস্তা পিছু দর ছিল চড়া। হিমঘরে মজুত রাখার পর বস্তা (৫০ কেজি) পিছু আলুর বন্ডের দর ওঠে ৫৫০ টাকারও বেশি। তবে ভিন্ রাজ্যের আলুর চাহিদা কম থাকায় হিমঘরে মজুত আলুর দর কিছুটা পড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নোট বাতিলের আগে পর্যন্ত বস্তা পিছু আলুর বন্ডের দর ছিল ৪০০ টাকার আশপাশে।

এখন হিমঘরে দু’ধরনের আলু মজুত রয়েছে। একটি আলু আকারে ছোট (ক্যাট)। চাষিদের একাংশ এই আলু বীজ হিসাবে ব্যবহার করেন। এ বার অনেকেই এই আলু হিমঘর থেকে নিয়ে যাননি। এই আলুর বন্ড বস্তা পিছু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। সাধারণ জ্যোতি আলুর বন্ডের দর বস্তা পিছু ৫০ টাকা। আলু ব্যবসায়ীদের দাবি, নভেম্বরে পুরনো পাঁচশো ও হাজারের নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকেই নগদের সঙ্কট দেখা দেয়। ভিন্ রাজ্যের আলু ব্যবসায়ীরা নগদের অভাবে আলু কেনা অনেকটাই বন্ধ করে দেন।

একই সঙ্গে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে বাজারে চলে আসে নতুন আলু। ফলে হিমঘরে মজুত আলুর দর ক্রমশ তলানিতে ঠেকে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মজুত আলু রাখার নিয়ম থাকলেও বহু আলুর বস্তা পড়ে থাকার কারণে সময়সীমা বাড়ানো হয় আরও সাত দিন। হিমঘর মালিদের দাবি, জেলার হিমঘরগুলিতে ২-৬ লক্ষ বস্তা পর্যন্ত আলু মজুত করা যায়। সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও এখনও হিমঘরে পড়ে রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাংশ আলু। তুলনায় বেশি আলু রয়েছে কালনা ও জামালপুরের হিমঘরগুলিতে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষার পরে মজুত আলু নিলামে তুলে ভাড়ার টাকা কিছুটা তোলার চেষ্টা হবে।

হিমঘরে রাখার জন্য বস্তা পিছু আলুর ভাড়া দিতে হয় ৭২ টাকা ৫০ পয়সা। এই অবস্থায় দশ গুণেরও বেশি আলুর দর পড়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পরেছে জেলার সাধারণ চাষি এবং হিমঘর মালিকেরা। কালনার আলু চাষি পরিমল সরকার বলেন, ‘‘১৬০ বস্তা আলু ছিল হিমঘরে। এর মধ্যে ৬০ বস্তা বীজ আলু ছিল। ওই আলু হিমঘর থেকে আনলেও বাকিটা বিক্রি করতে পারিনি।’’ তাঁর দাবি, বস্তা পিছু ৫০ টাকাতেও আলুর বন্ড কেনার লোক নেই।

কালনার হিমঘর মালিক সুশীল মিশ্রের কথায়, ‘‘মজুত আলু পড়ে থাকা-সহ নানা কারণে এবার আমাদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।’’ মার্চ নাগাদ হিমঘরগুলিতে ফের আলু রাখার কাজ শুরু হবে। জেলা হিমঘর মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নবকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘অনেক হিমঘর কর্তৃপক্ষই ব্যাঙ্কের কাছে ঋণখেলাপি হয়ে গিয়েছেন। আগামী দিনের কথা ভেবেই আমরা চিন্তিত।’’

Cold Storage

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy