Advertisement
০৩ মে ২০২৪

থিমের বাগ্‌দেবী টক্করে বহু দূর

নোটবন্দি থেকে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প, তুলসি কাঠ থেকে নারকেল মালায় সজ্জিত বাগ্‌দেবী— থিমের কালনায় জোর টক্কর জারি রইল এ বারও। তারই কিছু ঝলক এই প্রতিবেদনে।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:২৯
Share: Save:

নোটবন্দি থেকে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প, তুলসি কাঠ থেকে নারকেল মালায় সজ্জিত বাগ্‌দেবী— থিমের কালনায় জোর টক্কর জারি রইল এ বারও। তারই কিছু ঝলক এই প্রতিবেদনে।

নোটবন্দির ফের

নোট বাতিলের জেরে কম ভুগতে হয়নি আমজনতাকে। দুর্ভোগের সেই রোজনামচা মণ্ডপে ফুটিয়ে তুলেছে হাটকালনা পঞ্চায়েতের রংপাড়া দক্ষিণের যুবশক্তি সঙ্ঘ। খড়, মাটি, থার্মোকলের নানা মডেল দিয়ে দেখানো হয়েছে ব্যাঙ্কের লম্বা লাইন। নোটবদল চলাকালীন আয়কর দফতরের অভিযান, টাকার অভাবে মেয়ের বিয়ে আটকে যাওয়া, চিকিৎসার সমস্যা, মজুরির টাকা জোগাড় করতে না পারার মতো দুর্ভোগের সাতকাহন। মণ্ডপের একটি অংশে আলু চাষ করে দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে চাষিরা কী ভাবে সমস্যায় পড়েছেন, সে দৃশ্যও। প্রতিমা তৈরি হয়েছে সুপুরি গাছের নানা অংশ দিয়ে। ক্লাবের সদস্য গোপাল বারুই, তাপস বারুই, লক্ষণ বারুইরা জানান, সাধারণ মানুষের যন্ত্রণার ছবি মণ্ডপে তুলে ধরতে মাসখানেক আগে থেকেই কাজে নেমে পড়েছিলেন।

নারকেলে সাজ

থিমের কালনা এ বার সেজেছে নারকেল মালার প্রতিমাতেও। শহরের চারাবাগান চরকতলা এলাকার সূর্যশেখর সিংহ রায় নামে এক দুধওয়ালার হাতে রূপ পেয়েছে নারকেল মালার সরস্বতী প্রতিমা। টানা আট মাসের চেষ্টায় তৈরি শিল্পকর্ম এ বার স্থান পেয়েছে শহরের বহ্নিশিখা ক্লাবের মণ্ডপে। দুধ বিক্রেতা হলেও সূর্যশেখর ওরফে বাপ্পার নেশা হল কাঠের টুকরো, বাঁশের গোড়া-সহ নানা জিনিস দিয়ে মূর্তি তৈরি করা। বছর পঁয়ত্রিশের এই শিল্পীর প্রথাগত কোনও শিক্ষা নেই। তবে ছোট থেকেই ঝোঁক রয়েছে মূর্তি গড়ার। গত বছরের সরস্বতী পুজোয় একটি গাছের গুঁড়ি দিয়ে মূর্তি তৈরি করে এলাকার বাসিন্দাদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন।

সূর্যশেখর জানালেন, মূর্তি গড়তে লেগেছে প্রায় ২০০টি নারকেলের মালা। প্রথমে ছোট ছোট করে কাটা হয়েছে শক্ত মালার নানা অংশ। তার পর আঠা দিয়ে জুড়ে তৈরি করা হয়েছে প্রতিমার শরীর। এরপর ফাঁপা প্রতিমার উপরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানা নকশা। মালার নানা অংশ কেটে তৈরি হয়েছে বাগ্‌দেবীর বীণা-সহ গহনা। দেবী বিরাজমান পদ্মফুলের উপরে। একটি পায়ের উপরে রাখা হয়েছে অন্য পা। হাঁসও করা হয়েছে নারকেল মালা দিয়ে। আকর্ষণীয় করতে করা হয়েছে কালো পালিশ।

চক থেকে তাঁত

কালনা মহকুমার তাঁতশিল্পের কদর রয়েছে দেশবিদেশে। স্থানীয় শিল্পকে মণ্ডপে তুলে ধরেছে শহরের পুরাতন সঙ্ঘ। সুতো, রিল, কাপড়, তুলো, তাঁতযন্ত্র-সহ নানা জিনিসপত্রে সেজেছে মণ্ডপটি। গাছ থেকে তুলো সংগ্রহের পরে কী ভাবে সুতো তৈরি হয়। সুতো থেকে কাপড় তৈরি ও দোকানে বিক্রির দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। নানা দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহৃত হয়েছে বেশ কিছু রঙিন কাপড়। শহরের সব থেকে ছোট প্রতিমাটি তৈরি হয়েছে চক দিয়ে। এটি শোভা পাচ্ছে ছোট দেউরিপাড়ার মিলন সঙ্ঘ ক্লাবে। একটি চকের উপরে মূর্তিটি তৈরি করেছেন এলাকার যুবক সুমন মালিক। শিল্পী জানাচ্ছেন, পুজোর ১২ দিন আগে থেকে সূচ দিয়ে মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছে। এলাকার আর একটি মণ্ডপে নানা উপকরণে তুলে ধরা হয়েছে মাস আটেক আগের খেয়াঘাটে নৌকাডুবির দৃশ্য।

হেঁশেলের টুকিটাকি

নবশক্তি ক্লাব তুলসি কাঠের মালা দিয়ে তৈরি করেছে বাগ্‌দেবীর মূর্তি। মণ্ডপের মধ্যেই ক্লাব সদস্যেরা মাটির মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন শ্রীচৈতন্যের জন্ম থেকে সন্ন্যাস গ্রহণের নানা পর্যায়। আকর্ষণীয় প্রতিমা তৈরি করে ফি বার দর্শকদের চমক দেয় লিচুতলা এলাকার সমাপ্তি সঙ্ঘ। এ বার তাদের ফুট পাঁচেকের মূর্তি তৈরি হয়েছে জায়ফল, জৈত্রি, দারচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, লঙ্কা, মগজদানা দিয়ে। প্রতিমা তৈরি করতে মাস দেড়েক সময় লেগেছে। ক্লাব সদস্য মিলন দে জানান, এর আগে সন্দেশ, সীতাভোগ এমনকি চকোলেট দিয়ে প্রতিমা তৈরি হয়েছে। অন্য রকমের এই প্রতিমা দেখতে ভিড় জমে বহু মানুষের। শহরের রোহিণী পাড়া উল দিয়ে তৈরি করেছে প্রতিমা। ১০৮ শিবমন্দির চত্বরে স্ফুটনিক ক্লাব মণ্ডপ তৈরি করেছে তালাচাবি, হাতা-সহ নানা সামগ্রীতে।

ধুম স্কুলেও

ক্লাবের পাশপাশি ধুমধাম করে সরস্বতী পুজো করে বেশ কিছু স্কুলও। শহরের মহারাজা উচ্চবিদ্যালয় এ বার ১৫০ বছরে পা দিল। এই স্কুলের এ বারের থিম— ‘বিবর্তনের ধারায় বঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থা’। বিভিন্ন ফ্লেক্সের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে গুরুগৃহে, গাছতলায় পঠনপাঠন থেকে শুরু করে এখনকার স্কুলের পড়াশোনার ছবি। শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কের কথাও তুলে ধরা হয়। এই পুজো দেখতে এসেছিলেন মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Saraswati Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE