E-Paper

কর্কট রোগে আক্রান্ত ছাত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অভিযুক্ত স্কুল

বর্ধমানের সাহাচেতন-বালিডাঙায় বাড়ি ওই ছাত্রীর। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার সময়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৫৪
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

কর্কট রোগে আক্রান্ত একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ও তার পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠল বর্ধমানের মহারানি অধিরানি গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। ছাত্রীর বাবা, পেশায় টোটোচালক শেখ আজিজ শুক্রবার ই-মেলের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিক্ষিকা।

বর্ধমানের সাহাচেতন-বালিডাঙায় বাড়ি ওই ছাত্রীর। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার সময়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে জানা যায়, রক্তে কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়েছে সে। মুম্বইয়ে চিকিৎসার পরে সম্প্রতি সে বর্ধমানে ফিরেছে। এখন সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে ‘ওরাল কেমোথেরাপি’ হয় তার। অভিযোগ, একাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত সিমেস্টারের শারীরশিক্ষা পরীক্ষার দিন সে চিকিৎসা হওয়ার পরে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে দিন পরীক্ষা দিতে যেতে পারেনি সে। স্কুল ডাক্তারি শংসাপত্র দিতে বলে। পরে এক দিন পরীক্ষা নেওয়ার আশ্বাসও দেয়।

সাহাচেতন-বালিডাঙায় মেরেকেটে ৫০ বর্গফুটের ঘর ওই ছাত্রীর। মাথায় ত্রিপলের আচ্ছাদন। ঘরের খাটের নীচে হয় রান্না। সে বলে, “প্রথম সিমেস্টার পরীক্ষার সময়ে অসুস্থ ছিলাম। তখনও পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষার শারীরশিক্ষা প্র্যাকটিক্যালের দিন কেমোথেরাপির জন্য ১০টি ট্যাবলেট খেতে হয়েছিল। সে কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। পরীক্ষা দিতে যেতে পারিনি।” স্কুলের সঙ্গে ওই তার পরিবার যোগাযোগ করলে বলা হয়, মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিলে ফের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু ছাত্রী আর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়নি। তার কথায়, “এ নিয়ে অভিভাবকেরা কথা বলতে গেলে দুর্ব্যবহার করা হয়। আমাকে বলা হয়, ‘তুমি একাদশ শ্রেণিতে ফেল করেছ। আর পড়া হবে না’। আমি পড়তে চাই।”

ছাত্রীর মামা শেখ আনসারের অভিযোগ, “ভাগ্নি যাতে পরীক্ষা দিতে পারে তার জন্য মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমা দিই। স্কুল কর্তৃপক্ষ পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, উল্টে দুর্ব্যবহার করেছেন। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা জানিয়েছিল, একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা স্কুলের। প্রধান শিক্ষিকাই সব ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু স্কুল সাহায্য করল না! ভাগ্নি মানসিক অবসাদে ভুগছে। পড়াশোনার মধ্যে না থাকলে মানসিক চাপ বাড়বে। এটা আমাদের কাছে চিন্তার।” স্থানীয় পুর-প্রতিনিধি সাহাবুদ্দিন খানের আক্ষেপ, “এক জন ক্যানসার আক্রান্ত ছাত্রী পড়ার জন্যে ছটফট করছে। অথচ স্কুল সাহায্য করল না। এই আচরণের জন্য স্কুলছুট বাড়ে।”

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অপরাজিতা সরকার বলেন, “ছাত্রী অসুস্থ। আমরা সবাই জানি। কিন্তু পরীক্ষা নেওয়ার নির্ধারিত তারিখ পেরিয়ে যাওয়ায় এখন পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মানবিক কারণে কাউন্সিলে নিজে গিয়েছিলাম। কাউন্সিল নির্দেশ দিলে পরীক্ষা নিতে অসুবিধা নেই। ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছি কি না, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই বোঝা যাবে।” উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের জেলার যুগ্ম-আহ্বায়ক (পরীক্ষা) অতনু নায়েক বলেন, “মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা উচিত। বুধবার পর্যন্ত পরীক্ষা নিয়ে পোর্টালে নম্বর তোলার সুযোগ রয়েছে স্কুলের। কাউন্সিলের দিক থেকে কোনও অসুবিধা হবে না।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Cancer Cancer Patient

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy