Advertisement
১৯ মে ২০২৪
আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ড

পরপর দুর্নীতির নালিশ, ভাঙা হল উন্নয়ন কমিটি

বাসস্ট্যান্ডের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তৈরি প্রায় ১৬ বছরের পুরনো কমিটি ভেঙে দিল আসানসোল পুরসভা। এ বার থেকে সরাসরি পুর কর্তৃপক্ষই বাসস্ট্যান্ডের উন্নয়ন ও দেখভাল করবে বলে জানিয়েছেন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি।

বাসস্ট্যান্ডে নিয়মিত জঞ্জাল সাফ হয় না বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।

বাসস্ট্যান্ডে নিয়মিত জঞ্জাল সাফ হয় না বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

বাসস্ট্যান্ডের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তৈরি প্রায় ১৬ বছরের পুরনো কমিটি ভেঙে দিল আসানসোল পুরসভা। এ বার থেকে সরাসরি পুর কর্তৃপক্ষই বাসস্ট্যান্ডের উন্নয়ন ও দেখভাল করবে বলে জানিয়েছেন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। উন্নয়ন কমিটির সদস্যদের চিঠি দিয়ে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষ জানান, পরবর্তী বোর্ড মিটিংয়ে এক বা একাধিক মেয়র পারিষদকে বাসস্ট্যান্ডের দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু কমিটির বৈঠক না ডেকে, সদস্যদের মতামত ছাড়াই আচমকা এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করায় অসন্তুষ্ট বাসের মালিকদের একাংশ ও নানা শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০০ সালে পুরসভার তৎকালীন মেয়র বামাপদ মুখোপাধ্যায়কে চেয়ারম্যান করে এই উন্নয়ন কমিটি তৈরি হয়েছিল। সেই সময়ে ঠিক হয়, সিটি বাসস্ট্যান্ডে যাতায়াতকারী সমস্ত বাসের কাছে দিনে পাঁচ টাকা করে শুল্ক নেওয়া হবে। এই টাকায় বাসস্ট্যান্ডের যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে। বামাপদবাবুর পরে আরও তিন জন মেয়রের পদে বসেছেন। তাঁদের আমলেও পর্যন্ত এই ব্যবস্থাই চালু ছিল। কিন্তু বর্তমান মেয়র হওয়ার বছরখানেক পরেই জিতেন্দ্র তিওয়ারি ওই কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর তা নিয়ে তৈরি হয়েছে শোরগোল।

জিতেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘সিটি বাসস্ট্যান্ড পুরসভার সম্পত্তি। এর যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন পুরসভাই করে। তাই এর জন্য আলাদা করে কোনও উন্নয়ন কমিটি রাখার দরকার নেই।’’ মেয়র আরও জানান, উন্নয়ন কমিটি বাসস্ট্যান্ড থেকে যে শুল্ক আদায় করত এ বার থেকে পুরসভা সরাসরি তা আদায় করবে।

পুরসভার একটি অংশের ধারণা, এই বাসস্ট্যান্ডকে ঘিরে পরপর দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে থাকায় মেয়র এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। বছর কয়েক আগে অভিযোগ উঠেছিল, বাসস্ট্যান্ড থেকে শুল্ক বাবদ আদায় করা প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন উন্নয়ন কমিটিতে কর্তব্যরত এক কর্মী। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করেন পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার পরেও দুর্নীতির অভিযোগ কমেনি। পুরসভা সূত্রে খবর, উন্নয়ন কমিটির নাম করে দূরপাল্লার বাস থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকা তুলছে কিছু লোক— মেয়রের কাছে প্রায়ই এই অভিযোগ জানান বাস মালিকেরা। বাসস্ট্যান্ডে শুল্ক আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে পুর কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে শাসক পক্ষের অনেকে মনে করছেন।

নানা বাসের কর্মী ও যাত্রীদের অনেকের অভিযোগ, বাসস্ট্যান্ডের রক্ষণাবেক্ষণে উন্নয়ন কমিটির যতটা নজর দেওয়া উচিত ছিল, গত ১৬ বছরে তার ছিটেফোঁটাও দেওয়া হয়নি। পুরসভার কর্তাদেরও অনেকের তাই দাবি। তাঁদের মতে, সাফাই থেকে নিকাশি, যাত্রীদের ন্যূনতম পরিষেবা দেওয়ার ব্যাপারেও যথেষ্ট খামতি থেকে গিয়েছে। এমনকী, বাসস্ট্যান্ডের ভিতরে ভাটি বা উনুন জ্বালানোর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই একাধিক খাবারের দোকান ও হোটেল প্রতি দিন রান্না হচ্ছে। মেয়র জানান, তিনি বাসস্ট্যান্ড পরিদর্শন করে এ সব দেখে বিরক্ত। অবিলম্বে এ সব বন্ধ করা হবে বলে আশ্বাস তাঁর।

উন্নয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য তথা মিনিবাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক সুদীপ রায় ও বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক প্রকাশ মণ্ডলরা বলেন, ‘‘বাসস্ট্যান্ডের বেনিয়ম রুখে যাত্রীদের সুবিধা করা গেলে কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সার্থক হবে।’’ যদিও মেয়রের এই সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক বলে দাবি করেছে সিটু এবং আইএনটিইউসি। দুই সংগঠনের নেতা হেমন্ত সরকার ও সঞ্জয় সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘কমিটি ভেঙে দেওয়ার পদ্ধতি অগণতান্ত্রিক। বৈঠক ডেকে আমাদের মতামত নেওয়া উচিত ছিল।’’ তাঁদের আরও দাবি, বাসস্ট্যন্ডের উন্নতির জন্য শ্রমিক সংগঠনের মতামত খুব জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE