Advertisement
১৮ জুন ২০২৪

নেপথ্যে খনি চালুর দ্বন্দ্ব, গুলি যুবককে

খনির কাজ চালু হলে চাকরি পাবে এক গ্রামের মানুষজন। কিন্তু পুনর্বাসনের দাবি তুলে সেই কাজে বাধা দিচ্ছেন পাশের গ্রামের কিছু বাসিন্দা। আসানসোলে শ্রীপুর এরিয়ায় এই কোন্দল নিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে কয়েক দিন ধরেই চাপান-উতোর চলছে।

এই এলাকায় খনি চালুর কথা। ইনসেটে, আহত সমর বাউড়ি। নিজস্ব চিত্র।

এই এলাকায় খনি চালুর কথা। ইনসেটে, আহত সমর বাউড়ি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৩
Share: Save:

খনির কাজ চালু হলে চাকরি পাবে এক গ্রামের মানুষজন। কিন্তু পুনর্বাসনের দাবি তুলে সেই কাজে বাধা দিচ্ছেন পাশের গ্রামের কিছু বাসিন্দা। আসানসোলে শ্রীপুর এরিয়ায় এই কোন্দল নিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে কয়েক দিন ধরেই চাপান-উতোর চলছে। তারই জেরে এক গ্রামবাসীকে গুলি করার অভিযোগ উঠল পড়িরা গ্রামে। আহত যুবক হাসপাতালে ভর্তি। কাজ শুরু করার জন্য ইসিএল আধিকারিকদের মঙ্গলবার প্রকল্প এলাকা নিরীক্ষণে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগের রাতে এই অশান্তির পরে তা বাতিল করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়িরা গ্রামে কাল্লা-দোমহানি রাস্তার পাশে একটি মেলা বসেছে। সোমবার রাতে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে সেখানে যান গ্রামের তৃণমূল কর্মী সমর বাউড়ি। তিনি পুলিশে অভিযোগ করেছেন, বাড়ির লোকজন মেলায় ঢুকে গেলেও তিনি বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখনই হেলমেট পরা দুই মোটরবাইক আরোহী এসে তাঁর কোমরে পিস্তল ঠেকিয়ে খানিকটা দূরে নিয়ে যায়। তার পরে আচমকা পরপর দু’টি গুলি চালায়। একটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও অন্যটি তাঁর ডান হাতে লাগে। দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়।

শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন গিয়ে সমরবাবুকে হাসপাতালে পাঠান। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে সমরবাবু পাশের গ্রাম মাজিয়ারার কয়েকজনের নাম বলেছেন। তা জানাজানি হওয়ার পরে রাতেই দুই গ্রামের মধ্যে অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর আগে গ্রামে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। মাজিয়ারা ও পড়িরার মাঝামাঝি যে নতুন খনি চালুর পরিকল্পনার পরে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে, তার জেরেই এমন ঘটনা। দিন কয়েক আগে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর নরেন্দ্র মুর্মুর কার্যালয়ে হামলা চালায়। সেক্ষেত্রেও অভিযোগ উঠেছিল মাজিয়ারা গ্রামের লোকজনের বিরুদ্ধেই। সমরবাবু কাউন্সিলরের অনুগামী বলে পরিচিত। এ দিন কাউন্সিলর দাবি করেন, নতুন খনিটি চালু হলে বিস্ফোরণে পড়িরার বাসিন্দাদের বাড়িতে ফাটল ও এলাকায় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্য খনি চালুর প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেছেন তাঁরা। খনি চালু করতে হলে তাঁদের পুনর্বাসন ও গ্রামের ৬০ জনকে চাকরি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু ইসিএল কর্তৃপক্ষ তা মানতে রাজি না হওয়ায় কাজ শুরু হয়নি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, পড়িরার বাসিন্দাদের এই আন্দোলনে বিপাকে পড়েছেন মাজিয়ারার কিছু বাসিন্দা। কারণ, খনির প্রকল্পের জন্য তাঁরা ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে জমি দিয়েছেন। প্রকল্পে চাকরি পাওয়ারও কথা রয়েছে। তাই তাঁরা চাইছেন, দ্রুত কাজ শুরু হোক। এই দ্বন্দ্বেই বিবাদ বেধেছে।

নরেন্দ্রবাবুর দাবি, তাঁদের আন্দোলন ভেস্তে দিতেই পরিকল্পিত ভাবে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। তাঁদের দলেরই একটি গোষ্ঠী এর সঙ্গে যুক্ত দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’ আসানসোল উত্তর ব্লক তৃণমূল সভাপতি উৎপল সিংহ বলেন, ‘‘দলের কেউ যুক্ত কি না জানা নেই। তবে দুষ্কৃতীদের দ্রুত গ্রেফতার না করা হলে আন্দোলন হবে।’’ দলের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক পাপ্পু উপাধ্যায় বলেন, ‘‘কারা জড়িত তা স্পষ্ট করে জানালে আসল সত্য সামনে আসবে।’’

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় ফের কাজ শুরুর জন্য এ দিন সংস্থার কর্মী-আধিকারিকদের প্রকল্প এলাকা নিরীক্ষণে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার রাতের ঘটনার পরে পুলিশের অনুরোধে তাঁরা সেই কর্মসূচি বাতিল করেন। ইসিএলের শ্রীপুর এরিয়ার জিএম শিউপূজন ঠাকুর বলেন, ‘‘আমরা প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য পুলিশের সহায়তা চেয়েছি। পুলিশ যে দিন সঙ্গে থাকবে সে দিনই কাজ শুরু করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

miscreants mine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE