Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
বর্ধমান-আরামবাগ রোড

পুজোর পথে দুর্ঘটনায়  মৃত দম্পতি

এ দিন সকালে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেলেন মোটরবাইক আরোহী এক দম্পতি। ওই দুর্ঘটনার পরে টনক নড়ল পুলিশের। কী ভাবে ওই রাস্তায় দুর্ঘটনা কমানো যায়, তার জন্য দফায় দফায় বৈঠক করেছে পুলিশ।

দুর্ঘটনা রুখতে তৈরি হচ্ছে হাম্প। নিজস্ব চিত্র

দুর্ঘটনা রুখতে তৈরি হচ্ছে হাম্প। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৮ ০১:৪১
Share: Save:

জেলার কোথাও না কোথাও প্রায় রোজ মোটরবাইক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। বৃহস্পতিবার সেই তালিকায় যোগ হল বর্ধমান-আরামবাগ রোডের গৌরাঙ্গ রোড বাসস্টপ। এ দিন সকালে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেলেন মোটরবাইক আরোহী এক দম্পতি। ওই দুর্ঘটনার পরে টনক নড়ল পুলিশের। কী ভাবে ওই রাস্তায় দুর্ঘটনা কমানো যায়, তার জন্য দফায় দফায় বৈঠক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুর্গাপুর এক্সপ্রেওয়েতে বর্ধমানের সুকান্তনগরের কাছে, তীর্থযাত্রী বোঝাই বাস দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ মেমারি থানার নবস্থা থেকে হুগলির জয়রামবাটি-কামারপুকুরে পুজো দেওয়ার জন্য মোটরবাইকে রওনা দেন পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সুব্রত মাঝি (৪৪) ও তাঁর স্ত্রী, আইসিডিএস কেন্দ্রের কর্মী সাবিত্রী (৩৯)। বাঁকুড়া মোড় পেরিয়ে বর্ধমান-আরামবাগ রোড ধরে জয়রামবাটি যাচ্ছিলেন। ওই রাস্তার গৌরাঙ্গ রোড বাসস্টপের কিছুটা আগে একটি চালকলের সামনে তাঁরা দুর্ঘটনায় পড়েন। একটি লরি তাঁদের পিষে দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ওই দম্পতি মারা যান। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। দুর্ঘটনার পর থেকে দেহ উদ্ধার পর্যন্ত ঘণ্টা খানেক ওই রাস্তায় যানজট ছিল।

খবর পেয়ে রায়নার ওসি সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়, এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) শৌভনিক মুখোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ছিলেন ডিএসপি (ট্র্যাফিক ২) সুজিত হাজরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা তাঁদের জানান, বাঁকুড়া মোড়ের একটি পেট্রল পাম্পের পর থেকে ম্যাটাডরের পিছনে মোটরবাইকটি ছিল। ঠিক তার পিছনে একটি লরি ছিল। গৌরাঙ্গ রোড বাসস্টপের কাছে চালকলের সামনে ম্যাটাডরটিকে ওভারটেক করতে যায় সুব্রতবাবুর মোটরবাইক। উল্টো দিক থেকে আসা একটি বাইকের সঙ্গে হাল্কা ধাক্কা লাগে। উল্টো দিক থেকে আসা মোটরবাইকটি সুব্রতবাবুদের পিছনে থাকা লরির সামনে চলে আসে। ওই বাইকটিকে বাঁচাতে গিয়ে লরি ধাক্কা মারে মাঝি দম্পতির বাইকে। ঘটনাস্থলেই মারা যান স্বামী-স্ত্রী। পরিবার সূত্রের খবর, ওই দম্পতির চারটি মেয়ে। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দম্পতির মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া।

পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত কয়েক দিনের মধ্যে বর্ধমানের শরণ্যার কাছে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় ২ জন মারা যান। তার আগে আউশগ্রাম থেকে ফেরার পথে গলসিতে বাইক-আরোহী এক দম্পতির মৃত্যু হয়েছিল। এ ছাড়াও বর্ধমান-আরামবাগ রোডে গত ক’দিনে পরপর কয়েকটি দুর্ঘটনায় অন্তত ৮-১০ জন মারা গিয়েছেন। এমনকি বাস দুর্ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দা শেখ মহম্মদ, শেখ প্রদীপ, শেখ মহম্মদ আলিদের দাবি, “বছর খানেকের মধ্যেই গৌরাঙ্গ রোড বাসস্টপ লাগোয়া কয়েকটি গ্রামের ১৫-২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা পুলিশের কাছে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য দাবি জানিয়েছি।’’

কিন্তু, ওই রাস্তায় এত দুর্ঘটনার কারণ কী?

স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পুলিশ— সব পক্ষেরই দাবি, সরু রাস্তা হলেও তাতে যানবাহনের চাপ অত্যধিক। তার ফলেই দুর্ঘটনা বাড়ছে। পুলিশের দাবি, পাশাপাশি দু’টি গাড়ি কোনও রকমে যাতায়াত করতে পারে, এমন রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার লরি-ট্রাক সহ প্রায় পাঁচ হাজার গাড়ি যাতায়াত করে। এর বাইরে রয়েছে মোটরবাইক।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) প্রিয়ব্রত রায় বলেন, “দুর্ঘটনা কমাতে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ করছি। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর জন্যেও কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।’’ আপাতত ঠিক হয়েছে, বাঁকুড়া মোড় থেকে মিরেপোতা পর্যন্ত বেশ কয়েক কিলোমিটার রাস্তায় ট্র্যাফিক গার্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ‘হাম্প’ করে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Death Couple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE