E-Paper

আগুনে পুড়ে ছাই ঝুপড়ি, কান্না বস্তিতে

ঘিঞ্জি এই বস্তির বেশির ভাগ ঝুপড়িই তৈরি হয়েছে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে। বাসিন্দাদের অনেকেই ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল, কাগজপত্র-সহ নানা জিনিস বিক্রি করে রুটি-রুজির সংস্থান করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:২৩
Fire in a slum

তখনও চলছে আগুন নেভানোর কাজ। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ দুর্গাপুরের বেনাচিতির প্রান্তিকা সংলগ্ন তালতলা বস্তিতে। নিজস্ব চিত্র

বস্তিতে আগুন। ভস্মীভূত হয়ে গেল বেশ কয়েকটি ঝুপড়ি। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ দুর্গাপুরের বেনাচিতির প্রান্তিকা সংলগ্ন তালতলা বস্তির ঘটনা। দমকলের চারটি ইঞ্জিন ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন লাগার পরে রান্নার গ্যাসের অন্তত তিনটি সিলিন্ডার ফেটে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান দমকলের। দুর্গাপুর পুরসভার হিসাবে, এই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৫২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘিঞ্জি এই বস্তির বেশির ভাগ ঝুপড়িই তৈরি হয়েছে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে। বাসিন্দাদের অনেকেই ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল, কাগজপত্র-সহ নানা জিনিস বিক্রি করে রুটি-রুজির সংস্থান করেন। প্রথমে সংগ্রহ করা বর্জ্য এনে বস্তিতে ফাঁকা জায়গায় জড়ো করে রাখেন তাঁরা। পরে তা বিক্রি হয়।

এ দিন তেমনই একটি বর্জ্যের স্তূপে প্রথমে আগুন ধরে বলে অনুমান দমকলের ওসি রহমান চৌধুরীর। সেখান থেকে আগুন লাগে লাগোয়া একটি ঝুপড়িতে। পরে, দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে বাসিন্দারা নিজেরাই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে আসে পুলিশ। দু’দফায় দমকলের চারটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভায়। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত বলেন, “জরুরি ভিত্তিতে সবাইকে আগে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে ফেলা হয়। হতাহতের কোনও খবর নেই।”

কাঁদতে কাঁদতে স্থানীয় বাসিন্দা নুরনাহার বিবি বলেন, “আমার দু’টি ঘর। কিছু বার করতে পারিনি। চোখের সামনে সব পুড়ে গেল। শুধু আধার কার্ড ও রেশন কার্ড বার করতে পেরেছি।” অন্য এক মহিলা বলেন, “আমরা নিরাশ্রয় হয়ে গেলাম। খাবারও কিছু নেই কাছে। সব পুড়ে গিয়েছে।” পেশায় ফেরিওয়ালা, বৃদ্ধ বাদল শেখের দাবি, “নাতনির বিয়ের জন্য দেড় লক্ষ টাকা জমিয়েছিলাম। কিছু গয়নাও গড়িয়েছিলাম। আগুনে গয়না সব ঝলসে গিয়েছে। আধ পোড়া অবস্থায় মাত্র ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে।”

অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে এলাকায় যান দুর্গাপুরের পুর-প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়, প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দীপঙ্কর লাহা, পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান মৃগেন্দ্রনাথ পাল প্রমুখ। অনিন্দিতা বলেন, “অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৫২টি পরিবারের ২৬০ জন মানুষ বিপাকে পড়েছেন। ডিএসপি টাউনশিপের লালা লাজপত রায় রোডের পাশে স্কুল ও লাগোয়া জায়গায় অস্থায়ী ভাবে পরিবারগুলিকে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। ডিএসপি-র সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।” পুরসভা ও প্রশাসনের তরফে পরিবারগুলিকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

ঘটনাচক্রে, দুর্গাপুরে বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড নতুন কিছু নয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১-এর ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রবল বৃষ্টির মাঝেই ওই বস্তিতে আগুন লেগে দশটিরও বেশি ঝুপড়ি ভস্মীভূত হয়ে যায়।

এ দিনের অগ্নিকাণ্ডের পরে সিপিএম তোপ দেগেছে পুরসভার দিকে। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের অভিযোগ, “তৃণমূলের পুরবোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে থেকে দুর্গাপুরে বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্পের কোনও কাজ হয়নি। কেন্দ্রের আবাস যোজনা, রাজ্যের আবাস যোজনা থাকার পরেও কেন বস্তিবাসীদের এমন বিপদের মধ্যে থাকতে হবে?” যদিও, তৃণমূল নেতা তথা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর ভাইস চেয়ারম্যান অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “বস্তিবাসীদের পাশে সব রকম ভাবে রয়েছে রাজ্য সরকার। সিপিএমকে এ সব নিয়ে ভাবতেহবে না।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Fire Durgapur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy