E-Paper

হোটেল-দোকানে চাহিদা, চলছেই কয়লা তোলা

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কয়লা পাচার নিয়ে তদন্ত শুরু করার পরে তাতে কারবারিদের অনেকের নাম জড়ায়।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:১২
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

চায়ের দোকান থেকে ছোট-মাঝারি হোটেল, রান্নার জন্য ভরসা কয়লা। গ্যাসের চড়া দামের কারণেও বহু দরিদ্র পরিবার উনুন জ্বালান কয়লা অথবা কাঠ দিয়ে। এমনকি, খনি অঞ্চলের অনেক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেও শিশু-প্রসূতিদের মুখে খাবার তুলে দিতে ভরসা সেই কয়লা। আর এমন নানা অংশের এই চাহিদা মেটে খনি এলাকা থেকে বেআইনি ভাবে তুলে আনা কয়লা থেকে। আর সে কারণেই আট থেকে আশি, নানা বয়সের লোকজন দলে-দলে কয়লা সংগ্রহে নামেন খনিতে, এমনটাই মনে করেন ইসিএলের কর্মীদের একাংশ থেকে আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি অঞ্চলের অনেকে। আর এই কাজ করতে গিয়েই বিপদে পড়ছেন বাসিন্দারা, দুর্ঘটনায় যাচ্ছে প্রাণও।

সম্প্রতি রানিগঞ্জের নারায়ণকুড়ি ও জামুড়িয়ার শিবপুর খোলামুখ খনিতে কয়লা ও পাথর চাপা পড়ে চার জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ইসিএলের দাবি, পুলিশ-প্রশাসনকে নিয়মিত কয়লা চুরি আটকাতে লিখিত ভাবে সাহায্য করতে বলা হয়। কারণ, সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীদের পক্ষে এই পর্যায়ের কয়লা চুরি আটকানো কার্যত অসম্ভব।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কয়লা পাচার নিয়ে তদন্ত শুরু করার পরে তাতে কারবারিদের অনেকের নাম জড়ায়। স্থানীয় নানা সূত্রের দাবি, তার পর থেকে তেমন সংগঠিত পর্য়ায়ে কয়লা পাচার এখনও শুরু হয়নি। তবে ভিন্‌ জেলা বা লাগোয়া রাজ্যে কিছু কয়লা পাচার হচ্ছেই। কয়লা তোলার কাজে জড়িত নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জনের দাবি, পশ্চিম বর্ধমান জেলার প্রায় সর্বত্র চায়ের দোকান, খাবার হোটেলে জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া, অনেক দরিদ্র পরিবরা রান্নায় কয়লার উপরে নির্ভর করে। জেলায় বহু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না হয় কয়লাতেই। এই সব দোকানদার বা গৃহকর্তারা অবৈধ ভাবে তোলা কয়লাই কেনেন।

জামুড়িয়ার শিবপুরের একটি চায়ের দোকানদার জানান, তাঁর দৈনিক ১৫-২০ কেজি কয়লা লাগে। তিনশো থেকে চারশো টাকা কুইন্টাল দরে কয়লা কিনে নেন স্থানীয় স্তরেই। আবার, খনি এলাকা থেকে দূরে হলে কুইন্টাল প্রতি দাম বেড়ে যায়। রানিগঞ্জের গ্রামীণ এলাকার এক হোটেল মালিক জানান, তিনিও এক-দেড় কুইন্টাল কয়লা কেনেন। তাঁদের দাবি, এই কয়লা বৈধ ভাবে কিনতে গেলে ডিও (খালাবাজারে বিক্রি করার জন্য বা ব্যবহারের জন্য নিলামের মাধ্যমে কোল ইন্ডিয়ার কাছ থেকে কয়লা কেনার অনুমতি) নিলামে যোগ দিতে হবে। সেখানে নানা নথিপত্র জমা দিতে হবে, ইসিএলের সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করতে হবে। ক্ষুদ্র দোকানদারদের পক্ষে এত ঝঞ্ঝাট পোহানো কি সম্ভব, প্রশ্ন তাঁদের। তা ছাড়া, ডিও-র মাধ্যমে কয়লা কিনলে দামও অনেক বেশি পড়ে, পরিমাণেও অনেক নিতে হয়। সে কারণেই সে পথে যান না, দাবি করেন তাঁরা।

খনি এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, ইসিএলের বৈধ খোলামুখ খনি এবং ভূগভর্স্থ খনির সাইডিং (যেখানে কয়লা মজুত করে রাখা থাকে) থেকে কয়লা চুরি চলছেই। তা পুরোপুরি বন্ধ হলে জেলায় অধিকাংশ খাবার দোকানে উনুন জ্বলত না। অন্ডাল ও আসানসোলের দু’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদের দাবি, গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়নি। ফলে, স্থানীয় ভাবে কেনা কয়লাই ভরসা।

ইসিএলের ডিরেক্টর টেকনিক্যাল নীলাদ্রি রায় অবশ্য জানান, রাজ্য সরকার প্রতি বছর ইসিএলের কাছে স্থানীয় মানুষজনের চাহিদা মেটাতে কয়লা নেয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা রাজ্য সরকারের কাছ থেকেও প্রয়োজনীয় কয়লা কিনতে পারেন। জেলা প্রশাসন সূত্রের আশ্বাস, গোটা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jamuria

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy