সুদপুরের ভট্টাচার্য বাড়িতে সেজেছে প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র।
দেবী এখানে শিউলি ফুলের বোঁটার মতো তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা। আর অসুরের রং সবুজ। এটাই বিশেষত্ব কাটোয়া সুদপুরের ভট্টাচার্য বাড়ির। পরিবারের সদস্যদের দাবি, সাড়ে তিনশো বছর ধরে এমনটাই রেওয়াজ এ পুজোর।
তাঁরাই জানান, তখন সুদপুর এলাকায় কোনও পণ্ডিত ছিল না। নদিয়ার ফুলিয়া থেকে এসে সুদপুরে চতুষ্পাঠীর সূচনা করেছিলেন সংস্কৃত পণ্ডিত ন্যায়ালঙ্কার কার্তিকচন্দ্র ভট্টাচার্য। তিনিই মাটির ঘরে একচালায় কুলদেবী সিংহবাহিনীর আরাধনা শুরু করেন। দেবীর নামে কিনে ফেলেন একাধিক জমিজমা, পুকুর। কাঠা পনেরো জায়গার উপর দশভুজার মন্দির গড়ে শুরু হয় শারোদোৎসব।
সেই শুরু, সাত পুরুষ ধরে চলছে দেবীর আরাধনা। বর্তমানে দশ ঘর শরিক মিলে পুজো করেন। সারা বছর চলে নিত্যপুজো। পুজোর আলপনা দেওয়া থেকে শুরু করে পুজো করা, সবই নিজে হাতে করেন পরিবারের সদস্যেরা।তাঁরাই জানান, পুজোর আরও কিছু বিশেষত্বের কথা। এখানে সিংহের মুখ ঘোড়ার আদলে। গণেশের বদলে কার্তিকের পাশএ থাকে নবপত্রিকা।
বংশপরম্পরায় মন্দিরে বসে মূর্তি গড়েন দাঁইহাটের পাল পরিবার। প্রতিমায় রং করার শিল্পীও নির্দিষ্ট। লোকপুরের সূত্রধর পরিবারের শিল্পীরা মাটির প্রতিমাকে রঙিন করে তোলেন। দেবীকে সাজানো হয় সোনার মুকুট, সোনার ত্রিনয়নে। ষষ্ঠীতে মন্দির সংলগ্ন চৌপাহাড়ী পুকুরে ঘট ভরে পুজোর সূচনা হয়। তন্ত্রধারণ করেন পরিবারের সদস্য সৌমেন ভট্টাচার্য। জানা যায়, বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা বাড়ির তোপধ্বনি শোনার পরেই সন্ধিপুজো শুরু হত একসময়। এখন সেই রীতি না থাকলেও পাশের বিজয়নগর বক্সী বাড়ির পুজোয় হাঁক দেওয়ার পরে শুরু হয় ভট্টাচার্য বাড়ির সন্ধিপুজো। বিসর্জনের আগে অপরাজিতা পুজো, দেবীকে মালা পরিয়ে সারা গ্রাম ঘোরানোর পরে চৌপাহড়ী পুকুরেই বিসর্জনের দেওয়ার রীতেও একই রকম রয়েছে।
পুজোর তিনদিন মন্দির সংলগ্ন ভোগঘরেই চলে ভোগের আয়োজন। খিচুড়ি, আতপ চালের অন্নভোগের পাশাপাশি দেবীকে দিনের বেলা লুচি দেওয়া হয়। নবমীতে আবার হলুদ মাখানো চালভাজা, নানারকম নাড়ু ভোগ দেওয়া হয়। পরিবারের বধূ তপতী দেবী, মায়া দেবীরা বলেন, ‘‘সন্ধ্যাবেলায় আয়েশ করে মা এগুলো খাবেন ভেবে দেওয়া হয়। তাই এর নাম সাধের হাঁড়ি।’’ দশমীতে দেওয়া হয় বাসি দধিকর্মা। সৌমেনবাবুর দাবি, আগে ঢেঁড়া পিটিয়ে আশপাশের গ্রামে নিমন্ত্রণ করা হতো। এখনও পুজোর তিন দিন রোজ শ’পাঁচেক লোক পাত পাড়েন বাড়িতে। দূর থেকে মানসিক করেও অনেকে আসেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy