Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

খনিতে চলল মার, ভাঙচুর

খনি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এ দিন দুপুর আড়াইটা নাগাদ একদল গ্রামবাসী খনি চত্বরে আসেন। অন্তত সাতটি মাটি কাটার যন্ত্র, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের গাড়ি, একটি ডাম্পার, প্রায় সাতটি মোটরবাইকে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ।

ট্রাকের কাচ ভাঙচুর। নিজস্ব চিত্র

ট্রাকের কাচ ভাঙচুর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০২
Share: Save:

কয়লা কাটার জন্য বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে যত বার, তত বারই কাঁপছে এলাকা। ফাটল ধরছে বাড়িতে, এলাকায়। এমনই অভিযোগ জামুড়িয়ার তপসি গ্রামের বাসিন্দাদের। ইসিএলের নর্থ সিহারসোল খনি কর্তৃপক্ষের পাল্টা অভিযোগ, মঙ্গলবার তপসির বাসিন্দাদের একাংশ তাণ্ডব চালিয়েছেন। অভিযোগ, প্রহৃত হয়েছেন দু’জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার-সহ প্রায় দশ জন খনিকর্মী। ভাঙচুর চালানো হয়েছে বেশ কয়েকটি গাড়িতেও।

খনি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এ দিন দুপুর আড়াইটা নাগাদ একদল গ্রামবাসী খনি চত্বরে আসেন। অন্তত সাতটি মাটি কাটার যন্ত্র, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের গাড়ি, একটি ডাম্পার, প্রায় সাতটি মোটরবাইকে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার শান্তনু দে’র অভিযোগ, তিনি গাড়িতে করে এক জন ওভারম্যানের সঙ্গে খোলামুখ খনিতে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, খানিকটা যাওয়ার পরেই দশ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি গাড়ি আটকান। গাড়ির চালক ও শান্তনুবাবু গাড়ি থেকে নামেন। ওভারম্যান কোনও রকমে পালিয়ে যান। অভিযোগ, শান্তনুবাবু, গাড়ির চালককে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। ভাঙচুর চালানো হয় গাড়িতেও। শান্তনুবাবুর অভিযোগ, ‘‘পরে আরও দেখি, ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি গাড়িতে। মার খেয়েছেন, রাজীব কুমার নামে অন্য এক অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার এবং বেশ কয়েকজন খনিকর্মী। এর পরেই আমরা জামুড়িয়া থানায় খবর দিই।’’

খনিকর্মী চুনমণি যাদবের অভিযোগ, খনির সামনে মোটরবাইক রাখতেই তাঁর মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। ভাঙচুর চালানো হয় মোটরবাইকেও। চুনমণিবাবুর দাবি, ‘‘মাথায় হেলমেট ছিল, তাই বেঁচে গিয়েছি।’’ মুন্নি মুণ্ডা নামে এক মহিলা নিরাপত্তারক্ষীর অভিযোগ, ‘‘আমার স্কুটিতেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে।’’ হামলার অভিযোগ করেছেন মাইনিং সর্দার এসকে সিংহও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘একদল লোককে হাতে লাঠি ও ঢিল নিয়ে খনির দিকে ছুটে আসতে দেখেই পালিয়ে যাই।’’ প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চলে অভিযোগ। তবে পুলিশের দেখা মিলেছে অশান্তি থামার প্রায় ঘণ্টাখানেক বাদে, দাবি খনি কর্তৃপক্ষের।

কিন্তু কেন এই হামলা?

তপসি গ্রামে ঢুকতেই দেখা যায়, গ্রামের লোকালয় থেকে প্রায় পাঁচশো মিটার দূরে খোলামুখ খনি। গ্রামের সীমানা লাগোয়া নাপিতপাড়া, গোয়ালাপাড়া, পশ্চিমপাড়া ও বাউরিপাড়ার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ দাঁড়িয়ে গ্রামের রাস্তায়। মানিক মণ্ডল, নীলকণ্ঠ মণ্ডল, সঞ্জিত গোপ, অজিত গোপ, রঞ্জিত গোপদের অভিযোগ, ‘‘গ্রামে অন্তত তিরিশটি জায়গায় ফাটল ধরেছে। প্রতিবার কয়লা কাটার আগে বিস্ফোরণের সময়ে কেঁপে উঠছে বাড়িগুলি।’’ নীলকণ্ঠবাবুদের দাবি, ‘‘বিস্ফোরণের সময়ে বাড়িতে থাকাটাই আতঙ্কের। বাড়ির খাট, চেয়ারও নড়ছে।’’ অর্জুন মাজি নামে এক গ্রামবাসী জানান, খনি বন্ধের বিপক্ষে তাঁরা। কিন্তু, হাজারখানেক পরিবারকে পুনর্বাসন দিতে হবে। তাঁদের দাবি, ‘‘পুনর্বাসন চেয়ে দীর্ঘ আন্দোলন করছি। কিন্তু মারধরের অভিযোগ মিথ্যা।’’

বিষয়টি নিয়ে ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘এলাকাবাসীর দাবি অবশ্যই খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে। তার আগে প্রশাসনের কাছে খনি চালাতে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’’ ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানান, পুলিশের কাছে ভাঙচুর এবং মারধরের অভিযোগ জানানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ECL Coal mine Rehabilitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE