জামালপুরে অভিযানের পরে। নিজস্ব চিত্র।
বেআইনি বালি চুরি আটকাতে অভিযানে গেলে পুলিশ ‘বাধা’ দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে বৃহস্পতিবার জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন জেলার নানা স্তরের আমলারা। জেলাশাসকের হস্তক্ষেপে সে সমস্যা মিটতেই কাজে নেমে পড়ল প্রশাসন। শনিবার সকালে মহকুমাশাসক (বর্ধমান দক্ষিণ) অনির্বাণ কোলে, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক নির্মল মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জামালপুরের রাস্তায় ও বালি খাদানে অভিযান চালিয়ে ১৯টি বালি বোঝাই গাড়ি আটক করা হল।
বালি তোলা নিয়ে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের তিনটি নতুন নির্দেশ রয়েছে— প্রথমত, জলের তলা থেকে বালি তোলা সম্পূর্ণ বেআইনি। দ্বিতীয়ত, কোনও রকম যন্ত্রের সাহায্যে বালি তোলা যাবে না। তৃতীয়ত, সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বালি তোলা যাবে। বেআইনি বালি খাদান বন্ধ করার পাশাপাশি পরিবেশ মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে বালি তোলা হচ্ছে কিনা, কাটোয়া, বর্ধমান উত্তর ও দক্ষিণের মহকুমাশাসকদের তা দেখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। জেলাশাসকের সাফ কথা, “সরকারি নির্দেশ মেনে বালি তুলতে হবে।”
সেই সূত্রেই এ দিনের অভিযান। জেলা প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, এই তিনটি নিয়মই মানা হচ্ছে না বলে তাঁদের কাছে খবর রয়েছে। এ দিন জামালপুরে অভিযান শেষে অনির্বাণবাবু বলেন, “মাটি কাটার বড় যন্ত্রের (জেসিবি) সাহায্যে বালি তোলার দৃশ্য নজরে পড়েছে। আমরা কাছে যেতেই তার চালক পালিয়েছে। কিন্তু, ওই যন্ত্র তুলে আনার মতো পরিকাঠামো এ দিন আমাদের কাছে ছিল না। তবে, বালি কাটার সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের সতর্ক করা হয়েছে। জলের তলা থেকে বালি তোলার জন্য কয়েকটি গাড়িকে আটক করা হয়েছে।’’ মহকুমা (বর্ধমান উত্তর) ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক নির্মল মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “রাতে নদী থেকে বালি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও বেশ কিছু খাদানে রাতে বালি তোলা হচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর আছে। আমরা তাই রাতেও অভিযান চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
সূত্রের খবর, আগের মতো ‘ভুল বোঝাবুঝি’ এড়াতে অভিযান চালানোর আগে সমস্ত মহকুমাশাসককে নির্দিষ্ট থানায় চিঠি দেওয়ার নির্দেশ দেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। ঘটনা হল, বালি তোলা নিয়ে প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে জেলা পুলিশের একাংশের ‘ভুল বোঝাবুঝি’ চলছিলই। যা বেশি প্রকট হয় গত ৬ ডিসেম্বর। ওই দিন কেতুগ্রামের চরখিতে কাশীরাম দাস সেতুর নীচে বেআইনি খাদান বন্ধ করা নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। এর পরেই প্রশাসনিক আধিকারিকেরা এক যোগে প্রতিবাদ করেন। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বৃহস্পতিবার জেলাশাসককে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। ওই স্মারকলিপি পেয়ে জেলাশাসকের ঘরে পুলিশ সুপার প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। ঘটনাচক্রে, তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বদলি করে দেওয়া হয় কেতুগ্রামের আইসি আবু সেলিমকে। অথচ এর আগে তাঁর বদলির নির্দেশ দু’মাস ধরে আটকে ছিল অজ্ঞাত কারণে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, কাটোয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে স্মারকলিপি-পর্বের কিছু আগেই জেলাশাসক প্রশাসনিক কর্তাদের বলে দিয়েছিলেন, অভিযান চালানোর আগে সংশ্লিষ্ট থানায় চিঠি দিতে হবে। যাতে পুলিশ পরে না বলতে পারে, প্রশাসন তাদেরকে কিছু বলেনি। জেলার অনেক আধিকারিকই বলেন, “অভিযানে যাওয়ার আগে আমরা ফোনে পুলিশ চাইতাম। আমাদের সঙ্গে পুলিশও থাকত। কিন্তু কাটোয়ার ঘটনা আমাদের সমন্বয়ের অভাব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।”
বর্ধমান দক্ষিণ ও কাটোয়ার মহকুমা প্রশাসনও জেলাশাসকের নির্দেশ মানতে উঠেপড়ে লেগেছে। বর্ধমান দক্ষিণে যেমন দামোদরের ধারের জামালপুর, খন্ডঘোষ, মেমারি ও রায়না রয়েছে, তেমনই বর্ধমান উত্তরে রয়েছে গলসি, আউশগ্রাম। ও দিকে, কাটোয়া, কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটে রয়েছে অজয়ের বালি। মহকুমাশাসক (কাটোয়া) খুরশিদ আলি কাদরি বলেন, “জেলাশাসকের নির্দেশ মতো আমরা বেআইনি বালি খাদানের অভিযান চালিয়েছি। এটা ক্রমাগত প্রক্রিয়া। ফের অভিযানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।” জেলা পুলিশের কর্তারাও জানিয়েছেন, তাঁদের সাহায্য চাইলে পুলিশ দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy