স্কুলে তালা। —নিজস্ব চিত্র।
অদূরেই রয়েছে ইসিএলের ভানোড়া খনি। সেখানে কয়লা উত্তোলনের জেরে স্কুল ভবনের বিপজ্জনক অবস্থা বলে অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষের। এই পরিস্থিতিতে গত সোমবার থেকে পড়াশোনা বন্ধ বারাবনি শিক্ষাচক্রের ফরিদপুর প্রাথমিক স্কুলের। বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি ইসিএল।
বারাবনির দোমোহানি পঞ্চায়েতের ফরিদপুরে রয়েছে স্কুলটি। রয়েছে ৪৫ জন ছাত্রছাত্রী। সেখানে গিয়ে দেখা গিয়েছে, শ্রেণিকক্ষের মেঝে ও দেওয়াল জুড়ে মাকড়শার জালের মতো অজস্র ফাটল। জোরে হাঁটাচলা করলে কেঁপে উঠছে দরজা-জানলা। মেঝের কিছু অংশ বসে গিয়েছে। টোকা মারলেও ফাঁপা আওয়াজ বেরোচ্ছে। এমনই বিপজ্জনক পরিস্থিতি বারাবনি শিক্ষাচক্রের ফরিদপুর প্রাথমিক স্কুলটির। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা হতে পারে ভেবে সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকেরা। বিপদের আশঙ্কায় স্কুল ভবন সংস্কার অথবা স্কুলটিকে অন্যত্র স্থানান্তর করার আবেদন জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
শেখ সামসুল নামে এক অভিভাবক বলেন, “স্কুল ভবনটি যে কোনও সময়ে ধসে পড়তে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা। ফলে, বড় ধরনের বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাচ্ছি না।” অভিভাবকদের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার ইনচার্জ) মিঠু সাধু। তাঁর কথায়, “স্কুল ভবনের অবস্থা ভাল নয়। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসঘরে বসানোর ঝুঁকি নিতে পারছি না।”
কিন্তু স্কুল ভবনের এমন অবস্থা কেন? মিঠু জানিয়েছেন, স্কুল ভবনের কয়েকশো মিটার দূরে রয়েছে ইসিএলের ভানোড়া কয়লা খনি। সেখানে কয়লা তোলার জন্য ভূগর্ভে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। এর জেরে স্কুল ভবনের সর্বত্র ফাটল ধরেছে। মিঠু বলেন, “এই সমস্যার কথা বারাবনি ব্লক প্রশাসন এবং শিক্ষা দফতরকে বলা হয়েছে। পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।” ব্লক প্রশাসন সূত্রে দাবি, কয়লা উত্তোলন অব্যাহত রাখতে বর্ষার সময় খনিগর্ভে জমে থাকা জল বার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার ফলে, মাটির তলদেশ ফাঁপা হয়ে যাওয়ায় ভূপৃষ্ঠের অংশ বসে যাচ্ছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি ইসিএল।
বিডিও (বারাবনি) শিলাদিত্য ভট্টচার্য বলেন, “সমস্যাটি নজরে এসেছে। জেলা প্রশাসন ও খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত সমাধানের রাস্তা বেরোবে।” জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রথীন্দ্রনাথ মজুমদার জানান, জেলা স্কুল পরিদর্শককে এই বিষয়ে খোঁজখবর করে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আপাতত, ওই স্কুলের পড়ুয়াদের পঠনপাঠন দ্রুত শুরু করার জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) দেবাশিস সরকার জানান, ফরিদপুর স্কুলটি থেকে কিছুটা দূরে আরও একটি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। যত দিন পর্যন্ত ফরিদপুরের স্কুলটির সমস্যা সমাধান না হচ্ছে, তত দিন পাশের ওই স্কুলে পড়ুায়ারা পঠনপাঠন করবে।
যদিও, শিক্ষা দফতর সাময়িক ভাবে পড়ুয়াদের পার্শ্ববর্তী চরণপুর স্কুলে পাঠানোর বিষয়ে যে পদক্ষেপ করছে, তা তাঁরা মানবেন না বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন অভিভাবকেরা। তাঁদের বক্তব্য,
দূরের ওই স্কুলে সন্তানদের পড়তে পাঠাবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy