Advertisement
০৩ মে ২০২৪
অন্ডাল-রানিগঞ্জ

বাইরে থেকে পুরোহিত এনে পুজোর শুরু

উচ্চবর্ণের পরিবারের পুজোয় গ্রামের নিম্নবর্ণের মানুষজনের প্রবেশ ছিল মানা। উৎসব থেকে দূরে থাকতে কষ্ট হতো তাঁদের। তাই পুজো শুরু করেন তাঁরাও। অন্ডালের কাজোড়ায় সেই সূত্র ধরে এখন পারিবারিক পুজোর সংখ্যাই দাঁড়িয়েছে উনিশে।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
অন্ডাল শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০২:২১
Share: Save:

উচ্চবর্ণের পরিবারের পুজোয় গ্রামের নিম্নবর্ণের মানুষজনের প্রবেশ ছিল মানা। উৎসব থেকে দূরে থাকতে কষ্ট হতো তাঁদের। তাই পুজো শুরু করেন তাঁরাও। অন্ডালের কাজোড়ায় সেই সূত্র ধরে এখন পারিবারিক পুজোর সংখ্যাই দাঁড়িয়েছে উনিশে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাজোড়ায় এখনও তিনটি পৃথক শ্মশান রয়েছে— ব্রাহ্মণ, অব্রাহ্মণ ও জমিদার বাড়ির জন্য। অন্ত্যজদের উদ্যোগে আয়োজিত পুজোয় গ্রামের কোনও ব্রাহ্মণ এখনও পুজো করতে রাজি হননি। গ্রামের জমিদার হাজরা বাড়ির একটি পুজো হয়। এ ছাড়া পণ্ডা, মণ্ডল, মিশ্র, চক্রবর্তী, চৌধুরী, শর্মা, গোস্বামী, কান্ত-সহ নানা পরিবারের বেশ কিছু পুজো চলে আসছে বহু বছর ধরে। অভিযোগ, গ্রামের উচ্চ বা মধ্য বর্ণের পারিবারিক পুজোয় অন্ত্যজরা প্রবেশ বা অঞ্জলি দিতে পারতেন না। তাই ১৩ বছর আগে মেটাল পাড়ায় একটি সর্বজনীন পুজো শুরু করেন তাঁরা। পুজো কমিটির কর্তা জুগ্নু বাউরি বলেন, “গ্রামের কোন ব্রাহ্মণ অন্ত্যজদের উদ্যোগে পুজো করতে চাননি। তাই বাধ্য হয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূর থেকে পুরোহিত নিয়ে এসে পুজো শুরু করতে হয়। সেই প্রথাই চলছে।’’ যদিও গ্রামের বাসিন্দা তুফান মণ্ডল দাবি করেন, ব্রাহ্মণদের নিজেদের বাড়িতেও পুজো হয়। তাই তাঁরা ওই সব পুজোয় যেতে পারেন না।

খান্দরা গ্রামে ১৪টি পরিবারির পুজো হয়। কথিত রয়েছে, বড়থানে সরকার বাড়ির পুজো শুরু হয় পাঁচশো বছর আগে। পরিবারের সদস্য স্বপন সরকার জানান, তাঁদের পূর্বপুরুষ মুর্শিদাবাদের কান্দি থেকে এই গ্রামে এসে যখন বসবাস শুরু করেন তখন পদবি ছিল দাস। এখানে আসার পরে বর্ধমান মহারাজার নেকনজরে এসে জমিদারি লাভের পরে সরকার উপাধি পান। রাজার নির্দেশেই পুজো শুরু হয়। তাঁদের বাড়ির পুজো শুরু হয় মহালয়ার পরের মঙ্গলবার। শেষ হয় ১৬ দিন পরে। তবে পরিবারে পুজো শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে। তার মাঝখানে শুরু হয়েছে বক্সী বাড়ির পুজো। এই বাড়ির দুর্গা খ্যাপা মা বলে পরিচিত। মায়ের ৮টি হাত ছোট, ২টি বড়। মায়ের শরীরে ডাকের সাজ পরানো যায় না। মাটি দিয়েই সাজাতে হয়। দূরদূরান্ত থেকে ভক্তেরা এসে মনস্কামনা পূরণে খ্যাপা মায়ের কাছে ঢাক মানত করেন।

ওই গ্রামে চক্রবতী, মণ্ডল, রায়, বন্দ্যোপাধ্যায়, ঘোষাল, ঘোষদের নানা বাড়িতেও পুজো হয়। চক্রবর্তী বাড়ির সদস্য দেবাশিস চক্রবর্তী জানান, তাঁদের পূর্বপুরুষ কার্তিকচন্দ্র চক্রবর্তী পুজো শুরু করেছিলেন ৩১৬ বছর আগে। কথিত রয়েছে, প্রায় দু’শো বছর আগে অনন্তলাল চক্রবর্তী বলিদান বন্ধের স্বপ্নাদেশ পান। সেই থেকে বলি বন্ধ। তাঁদের গ্রামের পারিবারিক পুজোগুলি সব স্তরের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

রানিগঞ্জের বক্তারনগর গ্রামে ১০টি পারিবারিক পুজো হয়। খাঁ বাড়ির পুজো প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো। পরিবারের প্রবীণ সদস্য গিরিধারী খাঁ জানান, পুজো শুরু করেছিলেন পূর্বপুরুষ ক্ষুদিরাম খাঁ। তাঁর দুই ছেলে পৃথক হয়ে যাওয়ায় দু’টি পুজো চালু হয়। প্রায় একই সময়ে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজো শুরু হয়। একে একে ভট্টাচার্য, খানদের দৌহিত্র মণ্ডল, চট্টোপাধ্যায়দের দৌহিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ভট্টাচার্যদের দৌহিত্র তফাদার, ঘোষাল বাড়ি, লায়েক বাড়িতে পুজো শুরু হয়। লায়েকদের বাড়ির পুজো পটে ও ঘটে আয়োজিত হয়। এই গ্রামে পাল বাড়িতে মহামায়ার পুজো হয়। নিত্যপুজো হয় সর্বজয়া, জয়া ও বিজয়ার। সর্বজয়াই মহামায়া। পুজো চার দিনও সেই রীতি মেনেই পুজো হয়ে আসছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga puja priest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE