Advertisement
০২ মে ২০২৪
মেধা তালিকায় জায়গা পেয়ে মুখ উজ্জ্বল করল যারা

প্রথম দশে জেলার ৫

মুখ উজ্জ্বল করল ওরা পাঁচ জন! ওদের সৌজন্যেই মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় বিশেষ জায়গা করে নিল পূর্ব বর্ধমান। জেলার পাঁচ জন পড়ুয়া এ বার প্রথম দশের মধ্যে। 

 মিষ্টিমুখ করছে শীর্ষেন্দু।

মিষ্টিমুখ করছে শীর্ষেন্দু।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০২:৫৫
Share: Save:

মুখ উজ্জ্বল করল ওরা পাঁচ জন! ওদের সৌজন্যেই মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় বিশেষ জায়গা করে নিল পূর্ব বর্ধমান। জেলার পাঁচ জন পড়ুয়া এ বার প্রথম দশের মধ্যে।

এই পাঁচ জন ছাত্রছাত্রী মধ্যে কালনা মহকুমারই তিন জন। তিন জনই উঠে এসেছে প্রত্যন্ত এলাকার স্কুল থেকে। জেলার শীর্ষ তো বটেই, ৬৮৮ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে দ্বিতীয় হয়ে সব্বাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে কালনা ২ ব্লকের সাতগাছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র শীর্ষেন্দু সাহা। প্রথম হয়েছে যে মেয়েটি, সেই সঞ্জীবনী দেবনাথের চেয়ে মাত্র এক নম্বর পেয়েছে শীর্ষেন্দু। ৬৮৪ নম্বর পেয়ে জেলা থেকে যুগ্ম ষষ্ঠ হয়েছে পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কুলকামিনী উচ্চবিদ্যালয় থেকে অরিত্রিকা পাল এবং কেতুগ্রাম ২ ব্লকের কান্দরা জ্ঞানদাস মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রতিমান দে। এই দু’জনের চেয়ে এক নম্বর কম পেয়ে জেলায় যুগ্ম সপ্তম কালনা ১ ব্লকের সুলতানপুর তুলসীদাস বিদ্যামন্দিরের ছাত্র অরিন্দম ঘোষ এবং বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলের দেবাঞ্জন ভট্টাচার্য।

শীর্ষেন্দু তো বটেই, সাতগাছিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বার ৬০০-র উপরে নম্বর পেয়েছে আরও সাত জন। প্রধান শিক্ষক নীহাররঞ্জন সাহা জানালেন, স্কুলের ৭৩ বছরের ইতিহাসে এমন ফল এই প্রথম। শীর্ষেন্দু যে দারুণ কিছু একটা করতে চলেছে, তা তার টেস্টের ফলেই বোঝা গিয়েছিল। সে পেয়েছিল ৬৯৪। নীহারবাবুর কথায়, ‘‘ওর একটা উত্তরপত্র দেখলেই বোঝা যাবে কতটা মেধাবী। যেমন হাতের লেখা, তেমনই নিখুঁত উত্তর।’’

মা-বাবার সঙ্গে আরাত্রিকা।

স্কুল থেকে কিছুটা দূরেই ঢাকাকলোনি। সেখানেই একতলা বাড়ি শীর্ষেন্দুর। বাবা সুধাংশুশেখর সাহা কলকাতা পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর। বুধবার সকাল থেকেই বাড়িতে গিজগিজে ভিড়। জেলা সভাধিপতি, পঞ্চায়েত প্রধান থেকে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি-সহ বিভিন্ন মানুষ বাড়িতে এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে গিয়েছেন এই কৃতী পড়ুয়াকে। দুপুরে সুধাংশুবাবুর ফোনে কল করে শীর্ষেন্দুকে শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মা সীমা রায় বলেন, ‘‘ছেলে ভাল ফল করবে জানতাম। তবে দ্বিতীয় হবে ভাবতে পারিনি।’’ প্রথম স্থানাধিকারীর থেকে এক নম্বর কম পাওয়ার আফশোস অবশ্য নেই শীর্ষেন্দুর। তার কথায়, ‘‘যা ফল হয়েছে, সেটাই তো অনেক।’’ ভবিষ্যৎ নিয়েও এখনই কোনও পরিকল্পনা নেই তার।

মাধ্যমিকে ষষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি জেলায় মেয়েদের মধ্যেও প্রথম কুলকামিনী উচ্চবিদ্যালয়ের অরিত্রিকা পাল। সকালে পরিবারের লোকেরা টিভি দেখেই মেয়ের ফল জানতে পারেন। পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ, গান, আবৃত্তিতে তার আগ্রহ। বাবা অম্লানকুমার পাল ও মা কাজল পাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। অরিত্রিকার জানায়, নিজের স্কুলেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করবে সে। ভবিষ্যতের কথা এই মুহূর্তে তারও মাথায় নেই। অরিত্রিকার স্কুল অবশ্য ২০১২ সাল থেকেই ধারাবাহিক ভাবে ভাল ফল করে আসছে। প্রধান শিক্ষক তথা পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘শিক্ষকদের চেষ্টা এবং অবিভাবকদের সহযোগিতায় স্কুল ধারাবাহিক ভাল ফল করছে।’’

(বাঁ দিক থেকে) ফল বেরনোর পরে অরিন্দম, বন্ধুদের কোলে প্রতীমান। দেবাঞ্জন। নিজস্ব চিত্র

অরিত্রিকার মতোই ষষ্ঠ হয়েছে কান্দরা জ্ঞানদাস মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রতিমান দে। ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে এর আগে কোনও ছাত্র মাধ্যমিকে এমন নজরকাড়া সাফল্য পায়নি। ফলে, এ দিন সকাল থেকেই কান্দরা পশ্চিম হাটতলা পাড়ার বাড়িতে ঢল জমিয়েছেন স্কুলের শিক্ষক, পরিচালন সমিতির সভাপতি থেকে শুরু করে স্থানীয় চিকিৎসক, আত্মীয়-পরিজন। প্রতিমানের বাবা, পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক পরিমল দে বলেন, ‘‘ঠিক ভোর সাড়ে চারটেয় ঘুম থেকে উঠে পড়ত বসত। কখনও ঘুম থেকে ডেকে তুলতে হয়নি।’’ চোখের জল আটকাতে পারেননি মা শুভ্র সরকার দে। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায় এই কৃতী ছাত্র। তদেবাঞ্জন। নিজস্ব চিত্রবে এ-ও বলছে, ‘‘এই তো শুরু। এখনও অনেক চলা বাকি।’’ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পিনাকী ভট্টাচার্য বলছে, ‘‘প্রতিমান আমাদের গৌরব।’’

বাড়ির একমাত্র টিভিটা খারাপ। তাই পর্ষদ যখন মেধা তালিকা ঘোষণা করছে, তখন বাড়ির লোক কিছুই টের পাননি। সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই শুরু হয় ফোন। তাতেই বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের দেবাঞ্জন ভট্টাচার্য জানতে পারে, মেধাতালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে। নচিকেতার গান, গোয়েন্দা ব্যোমকেশ, কবিতা আবৃতি আর পড়াশোনা— এই চারটি বিষয়কে সঙ্গী করেই তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৩। ফল জানার পরেই বর্ধমানের শ্রীপ্ললী অফিসার কলোনিতে দেবাঞ্জনের বাড়ি থেকে শুরু করে স্কুলে উৎসবের আবহ। বাবা সুব্রত কুমার ভট্টাচার্য প্রাথমিকের শিক্ষক। মা অঞ্জনা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ছেলে মাছ আর মুড়িঘণ্ট খেতে খুব ভালোবাসে। ওটাই রান্না করে খাওয়াব।’’ দেবাঞ্জনের কথায়, ‘‘ভাল রেজাল্ট আশা করেছিলাম। কিন্তু এতটা ভাল হবে ভাবিনি।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শম্ভুনাথ চক্রবর্তী জানান, তাঁদের স্কুল ধারাবাহিক রেজাল্ট করে। দেবাঞ্জন সেই ধারা অব্যাহত রাখল।

দেবাঞ্জনের মতো সুলতানপুর তুলসীদাস বিদ্যামন্দিরের ছাত্র অরিন্দম ঘোষের প্রাপ্ত নম্বরও ৬৮৩। মা সুনন্দা ঘোষ এই স্কুলেরই শিক্ষিকা। অরিন্দম অবশ্য কলকাতায় রয়েছে। সুনন্দাদেবী বললেনস ‘‘ছেলে ভাল ফল করবে আশা ছিল। তবে টেনশন করবে বলে ওকে বলে দেওয়া হয়েছিল রেজাল্ট আমরাই ওকে জানিয়ে দেব। টিভি দেখেই সোজা ফোন করে সুখবরটা দিই।’’ মেধাবী এই ছাত্রের স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুদর্শন গড়াই জানান, তাঁদের স্কুল এর আগে মাধ্যমিকে এত ভাল ফল করেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE