Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পুজোর খরচ ছেঁটে বন্ধুদের পাশে

স্কুলের কাছেই পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে এক সহপাঠী। আর এক জন গুরুতর চোট পেয়ে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি। তার দিদিরও অস্ত্রোপচার হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেমারি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:০০
Share: Save:

স্কুলের কাছেই পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে এক সহপাঠী। আর এক জন গুরুতর চোট পেয়ে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি। তার দিদিরও অস্ত্রোপচার হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। অভাবের সংসারে দুই ছেলেমেয়ের চিকিৎসা, পথ্যের খরচ জোগাতেই হিমসিম দশা মেমারির কামালপুর গ্রামের সর্দার পরিবারের। এ অবস্থায় ওই সহপাঠীদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেমারির রাধাকান্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। শুক্রবার তারা শপথ নিয়েছে, পুজোর খরচ বাঁচিয়ে বন্ধুদের চিকিৎসায় সাহায্য করা হবে।

এ দিন বিকেলেই পড়ুয়াদের ইচ্ছের বার্তা নিয়ে সর্দার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন স্কুলের ২০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তবে পায়েল ও অর্জুনের বাবা-মায়ের দেখা পাননি তাঁরা। তবে অন্য পরিজনেদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে এসেছেন স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষকেরা। প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ মহান্ত বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের তরফ থেকে আমার কাছে প্রস্তাবটি আসে। শুক্রবার দুপুরে ৫০ জন পড়ুয়া ও ২০ জন শিক্ষককে নিয়ে একটি বৈঠক করা হয়। সেখানে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পুজোর পরের দিন যে পংক্তিভোজের আয়োজন করা হয়, এ বার সেটা করা হবে না। তার বদলে বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে দুর্ঘটনায় জখম ছাত্র-ছাত্রীকে সাহায্য করা হবে।’’

মঙ্গলবার দুপুরে কামালপুর থেকে সাইকেলে রাধাকান্তপুরের স্কুলে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ওই দিদি-ভাই ও আর এক ছাত্রী। বাজারের কাছে উল্টো দিক থেকে আসা তুষবোঝাই গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বাসন্তী হাজরা। গুরুতর জখম হয় পঞ্চম শ্রেণির অর্জুন সর্দার ও তার দিদি নবম শ্রেণির পায়েল। স্কুলের শিক্ষিকা জয়শ্রী দে ঘটনার দিনই জানিয়েছিলেন, পড়াশোনায় পায়েল খুবই মনোযোগী। ওদের সাহায্য করা হবে।

রাধাকান্তপুরের স্কুলে পড়ুয়ার সঙ্গে প্রায় ১১৫০ জন। তাদের প্রতিনিধি হিসেবে এ দিনের বৈঠকে হাজির থাকা মৌমিতা হাজরা, অনিমা মুর্মুদের কথায়, “এত বড় দুর্ঘটনার পরে পুজোয় কী মন বসে? কিন্তু করতে হবে। তবে পুজোর পরের দিন খাওয়া এ বার বন্ধ রাখা হচ্ছে। খাওয়ার খরচ বাঁচিয়ে আমাদের বন্ধুদের চিকিৎসায় সাহায্য করা হবে।’’

স্কুলের শিক্ষক শুভেন্দু ঘোষ, শিক্ষিকা অর্পিতা পালেরা বলেন, “প্রধান শিক্ষক বৈঠকে পুজোর পরের দিনের খাওয়া বন্ধ করে সেই টাকা পায়েল-অর্জুনের চিকিৎসায় সাহায্যের প্রস্তাব দেন। আমরা ভেবেছিলাম পড়ুয়ারা মানবে না। কিন্তু সবাই এক হয়ে সেই প্রস্তাব মেনে নিল।’’

স্কুল পড়ুয়া জয় মুর্মু, সঙ্গীতা বাগদের কথায়, “পুজো প্রতি বছর হবে। পোলাও-আলুর দমও পরের দিন খাওয়া হবে। কিন্তু আমাদের সামান্য সাহায্যে পায়েল-অর্জুন যদি সুস্থ হয়ে ওঠে, তার চেয়ে আনন্দের কিছু হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Help Emotional Unique Saraswati Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE