জমে আবর্জনা।—নিজস্ব চিত্র।
চোখ জুড়োনোর মতো বহু প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে এ শহরে। অথচ ঘুরতে বেরোলেই পায়ে ঠেকে আবর্জনা।
কালনার বাসিন্দাদের দাবি, বৃষ্টি এলেই বিপদ বাড়ে আরও। এমনিতেই একটি বৃষ্টিতে শহর ডোবে হাঁটুজলে, তার উপর রাস্তার দু’ধারে ভ্যাট আর নিকাশি নালা উপচে আসা আবর্জনা জলে পা দেওয়ায় দায় হয়ে পড়ে। তবে এই পরিস্থিতির হাল ফেরাতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে পুরসভা।
ভাগীরথী পাড়ের এ শহরে ১০৮ শিবমন্দব, প্রতাপেশ্বর মন্দির, দাতনকাঠি তলার মসজিদ, প্রাচীন চার্চ-সহ দর্শনীয় স্থানগুলি দেখতে প্রতি বছরই ভিড় জমে। তাছাড়া স্কুল, কলেজ, অফিস-কাছাড়ির নানা প্রয়োজনেও প্রতিদিন শহরে আসেন হাজারো মানুষ। অথচ নিকাশি নালা কম হওয়ায় জমা জলের সমস্যায় সারা বছর ভোগে শহর। নর্দমায় প্লাস্টিক আটকে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয় বলেও বাসিন্দাদের অভিযোগ। শহরের কদর্য চেহারা দেখে পর্যটকেরাও বিরক্ত হন বলে তাঁদের দাবি।
এই পরিস্থিতি বদলাতেই নেমেছে পুরসভা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের জঞ্জাল তোলার জন্য নামানো হচ্ছে ৬টি অত্যাধুনিক গাড়ি। ছোট ছোট ট্রাক্টরের মতো এই গাড়িগুলির পিছনে থাকবে ট্রলি। সেখানেই নোংরা জড়ো হবে। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, গাড়িগুলি টোটোর আকৃতির হবে। পরে তা বদলে ট্রাক্টরের মতো আকৃতির গাড়ি নেওয়া হয়। পুরসভার দাবি, সাধারণ সাফাইকর্মীরা রোজ যেমন কাজ করেন তেমনি করে যাবেন। পাশাপাশি সাফাই কর্মীর সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। চলবে বাড়ি বাড়ি থেকে জঞ্জাল সংগ্রহের কাজও। নতুন গাড়িগুলি সারা দিন শহরে ঘুরে বেড়াবে। রাস্তায় পড়ে থাকা আবর্জনা তুলতে থাকবেন কর্মীরা। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে ট্রলিটিকে আলাদা করে রেখে দেওয়া হবে, যাতে সাধারণ মানুষ ভ্যাট হিসেবে তা ব্যবহার করতে পারেন। পরে আবর্জনা কিছুটা জমলে গাড়ি ওই ট্রলি নিয়ে চলে যাবে পুরসভার ভাগাড়ে। আবর্জনা জমা করার জায়গার জট কাটাতেও উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের বাইরে জিউধারা এলাকায় যে পার্ক রয়েছে সেটিকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করে সেখানে জঞ্জাল ফেলার ব্যবস্থা করা হবে। পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘শহরকে ঝাঁ চকচকে করতে যে নতুন গাড়ি এবং ট্রলি কেনা হচ্ছে তার জন্য খরচ হবে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা। গাড়িগুলি চলে এলেই নেমে পড়া হবে স্বচ্ছ শহর গড়ার কাজে।’’ তিনি আরও জানান, পুরসভা শুধু সাফাই করবে না, সাধারণ মানুষকে নিজের শহর সম্বন্ধে সচেতন করার কাজও করবে। এর জন্য শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে নির্মল শহর গড়ার ডাক দিয়ে টাঙানো হবে বেশ কিছু হোর্ডিং। প্রত্যেক পুর নাগরিকের কাছে অন্তত একটি আবর্জনা প্রতি দিন নিজে হাতে পরিষ্কার করে স্বপ্নের শহর গড়ার আর্জিও জানানো হবে।
শহরকে পরিষ্কার রাখতে আরও পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলেও পুরসভার দাবি। যার একটি হল প্ল্যাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। এমনটা হলে আবর্জনা তো কমবেই, দূষণের হাত থেকেও শহর বাঁচবে বলে পুরসভার দাবি। দেবপ্রসাদবাবু বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে খুব শীঘ্র সিদ্ধান্ত নেবে পুরসভা।’’ তাঁর আরও দাবি, শহরের মজে যাওয়া পুকুরগুলি সংস্কারের কাজও ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে পুরসভা। এর জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে একটি বার্ষিক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পুরপ্রধানের দাবি, সব ঠিকঠাক থাকলে মাস ছয়েকের মধ্যে নতুন শহর উপহার পেতে চলেছেন সাধারন মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy