Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গ্রামীণ এলাকার ভরসা ঘাসফুলই

দিন যত গড়ায় তত সবুজ হয় চারপাশ।

খুশি: জয়ের পরে সমর্থকেরা। কাটোয়ায়। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

খুশি: জয়ের পরে সমর্থকেরা। কাটোয়ায়। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০২:৩৭
Share: Save:

ব্যবধান কমলেও পূর্ব বর্ধমানের গড় ধরে রাখল তৃণমূলই।

প্রথম রাউন্ড থেকেই ‘লিড’ পাচ্ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ সুনীল মণ্ডল। দিনের শেষে ৮৯ হাজার ৩১১ ভোটের ব্যবধানে দলকে এগিয়ে দিলেন তিনিই। তবে জয় এলেও স্বস্তি যে আসেনি তা বোঝা গেল দলের নেতাদের কথাতেই। নাম না করে এক নেতা বলেন, ‘‘কালনায় সর্ষের মধ্যে ভুত আছে। ওঝা দিয়ে ওই ভূত তাড়াতে হবে।’’

সাতটি বিধানসভার মধ্যে তৃণমূল সবচেয়ে বেশি প্রায় ৫৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে রায়নায়। সাধনপুর এমবিসি কলেজের গণনাকেন্দ্রের আশপাশেই ছিলেন রায়নার বিধানসভার তৃণমূল পর্যবেক্ষক উত্তম সেনগুপ্ত। চওড়া হাসি নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দলের সাংগঠনিক শক্তি খুবই মজবুত রায়নায়। বালিঘাটের মতো নানা বিতর্কে দলের এখানকার নেতা-কর্মীরা কখনও জড়াননি। ভাল সংগঠনই রায়নায় ব্যবধান বাড়িয়েছে।’’ যদিও বিরোধীদের দাবি, ভোটের দিন এই বিধানসভার ৮৯টি বুথে বিজেপির কোনও এজেন্ট ছিল না।

প্রথম তিন-চার রাউন্ডে পিছনোর পরেও বিজেপি প্রার্থা পরেশ দাস দাবি করছিলেন, এই কেন্দ্রে ভাল ফল করবে বিজেপি। কিন্তু দিন যত গড়ায় তত সবুজ হয় চারপাশ। গণনার শেষ দিকে তাঁর দাবি, ‘‘রায়না সব শেষ করে দিল। আমাদের দলের সংগঠন ওখানে দুর্বল। কিন্তু এতটা খারাপ ফল হবে ভাবিনি।’’

এ বারের ভোটে মেরুকরণ, পুলওয়ামা-বালাকোট, রাজ্যে জুড়ে মোদী-হাওয়ার মাঝে সংগঠনের জোরেই যে এই কেন্দ্র দখলে রইল তা বলছেন তৃণমূল নেতারা। বিজেপির শক্তি বাড়ার আঁচ করে জেতার জন্য মরিয়া হয়ে নেমেছিল শাসকদল। শিক্ষক, অঙ্গনওয়াড়ি, আশাকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঠে নামানো হয়। প্রকাশ্যে না মানলেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারের উন্নতির কথা বলা, নিয়মিত পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়ায় কাজ যে অনেকটাই সহজ হয়েছে তা বলছেন দলের নেতারা। তার সঙ্গে বিদায়ী সাংসদ হওয়ায় বিধানসভা ধরে পরিচিতিটাও কাজে এসেছে সুনীল মণ্ডলের। শুরু থেকেই বিজেপি কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ ছিল, প্রার্থী ‘বহিরাগত’। সব জায়গায় প্রচারে না যাওয়া নিয়েই ক্ষোভ জানিয়েছিলেন অনেকে। ১৯১৯ বুথের মধ্যে পাঁচশো বুথে এজেন্টও দিতে পারেনি বিজেপি। তা ছাড়া তৃণমূলের ‘ভোট করানোর লোক’ বেশি বলেও দাবি ছিল তাঁদের। ভোটের ফলে এ সবই প্রভাব ফেলেছে।

তবে জয় এলেও কাটোয়া, কালনার ফলে ‘কাঁটা’ টের পেয়েছে তৃণমূল। বাম জমানার মাঝামাঝি সময় থেকে পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতে প্রতিটা নির্বাচনে অন্তত সাত-আট হাজার ভোটে জিতেছে তৃণমূল। এই পঞ্চায়েতেরই বাসিন্দা তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ। এ বার এই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের জয় এসেছে ৪৫০ ভোটে। শ্রীরামপুরে ১৩টা বুথে বিজেপি জিতে যায়। ১১টা বুথে জেতে তৃণমূল। স্বপনবাবু যে বুথের ভোটার সেই বুথ থেকে তৃণমূলের লিড ১৩৮ ভোট। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘বিজেপির কোনও মিটিং, মিছিল হয়নি এলাকায়। বুধবারও যে হিসেব করেছি তাতে ৮ হাজার ভোটে জিতছিলাম। তার পরেও কী হল মেলাতে পারছি না।’’ গণনাকেন্দ্রে থাকা তৃণমূল নেতাদের অনেকেরই দাবি, বামেদের ভোট আমাদের কাছে না এসে বিজেপিতে চলে গিয়েছে। সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাসের যদিও দাবি, ‘‘এমন ফল আশা করিনি। তৃণমূল বিরোধী হাওয়া ছিল, কিন্তু কেউ কি নিজেদের ভোট অন্যকে দিতে বলে!’’

কাটোয়ায় বিধানসভায় সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছে তৃণমূল। গত পঞ্চায়েত ভোটে কাটোয়ার একটি আসনেও ভোটগ্রহণ হয়নি। ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছিলেন বিরোধীরা। লোকসভা ভোটে সেই ক্ষোভেরই প্রতিফলন ঘটেছে বলে অনুমান তৃণমূল নেতাদের একাংশেরই। সুনীলবাবুর দাবি, ‘‘কাটোয়া নিয়ে ওখানকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে।’’ ২০১৪-র লোকসভায় ৩ লক্ষ ৬২ হাজার ভোট পেয়েছিল সিপিএম। এ বার ভোট এক লক্ষ ৭৫ হাজারের কিছু বেশি। সুনীলবাবুর দাবি, ‘‘আমরা আমাদের ভোট ধরে রেখেছি। সিপিএমের ভোট বিজেপিতে গিয়েছে মনে হচ্ছে।’’ পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্র সিপিএমের দখলে। সেখানে এ বার সিপিএমের ভোট ২৬,৬৮৫। বিজেপি ৮১,৫৬৮। তৃণমূল ৮৪,৬৫৪। ওখানকার বিধায়ক প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘মানুষ মিছিলে গিয়েছেন। সঙ্গে হেঁটেছেন। কিন্তু তাঁদের সবাই যে ভোট দেননি সেটা বুঝতে পারছি। আশা করছি, আগামী দিনে এই দিনে থাকবে না।’’

তৃণমূল জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘সংগঠনের জোরেই বর্ধমান পূর্বে ভাল ব্যবধানে আমরা জিতেছি। এলাকার মানুষকে অভিনন্দন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE