পঞ্চমীর রাতে আড্ডা উল্লাস আবাসনে। নিজস্ব চিত্র।
সারা বছর পাশাপাশি থাকা, অথচ হাজার কাজের ফাঁকে দেখা প্রায় হয় না। মহালয়া পেরোলেই তাই চেনা পড়শিদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, সুখ-দুঃখের গল্প করার জন্য মুখিয়ে থাকেন বর্ধমান শহরের উল্লাস আবাসনের তিনশো পরিবার। আড্ডা-গল্পের সঙ্গে নানা প্রতিযোগিতা, খাওয়া-দাওয়ায় নিমেষে কেটে যায় পুজোর চার দিন।
আবাসনের বাসিন্দারা জানান, ২০০৫ সাল থেকে ‘উল্লাস সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি’ নামে এই পুজো হচ্ছে। নমো নমো করে পুজো শুরু হলেও, বয়সের সঙ্গে জৌলুস বেড়েছে পুজোর। দশ বছরের মাথায় বর্ধমান শহরের পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম বড় পুজো হিসেবে চেনা হয়ে যায় উল্লাস। এ বছর প্রাক্-বৈদিক যুগের আশ্রমে যজ্ঞ, ঋষিদের ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁরা। থিমের নাম ‘যজ্ঞাহুতি’।
তবে পুজোর থেকেও ‘সেরা সুন্দরী’ আর ‘সেরা পুরুষ’ প্রতিযোগিতার টান বেশি। আবাসনের সঙ্গে বহিরাগতরাও চোঁখ ধাঁধান সেখানে। এ ছাড়াও নাটক, নাচ-গান তো রয়েইছে। আবাসনের মহিলাদের উদ্যোগে অগস্ট থেকেই শিশুদের নিয়ে রিহার্সাল চলছে। নাটক, শ্রুতি নাটক পরিবেশন করবে তারা। বড়রা কেউ আবৃত্তি করবেন, কেউ গান গাইবেন, কেউ বা নাচবেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা অর্পিতা মণ্ডল, শ্রাবণী কুমারেরা বলেন, ‘‘আমরা সবাই এক সুতোয় বাঁধা পড়তে চাই। তাই আবাসিকদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছি। ছোট ছোট সদস্যদেরও সামিল করে পারস্পরিক মেলবন্ধন ঘটানোই আমাদের লক্ষ্য।’’ এ ছাড়াও আবাসনের মহিলারা মণ্ডপের সামনে ডান্ডিয়া ও ধুনুচি নাচ করবেন। তার জন্যেও জোরকদমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। এমনই এক তরুণী অর্পিতা পাঁজা বলেন, “পুজো ক’দিন আমরা এতটাই আনন্দে মশগুল থাকি যে বাইরে যাওয়ার কথা ভাবতে পারি না।’’
পুজোর সম্পাদক দিনেশ অগ্রবাল গত বছর ‘সেরা পুরুষ’ হয়েছিলেন। সে কথা জানিয়ে বলেন, “এ বার আর প্রতিযোগিতায় আমি নেই। গত বার আবাসনের ২২জনকে হারিয়ে ছিলাম। এ বারও যদি হেরে যায়!’’ পাশেই থাকা প্রবীণ শঙ্কর ঘোষ, শিবশঙ্কর রায়রা জানান, ষষ্ঠী থেকে পাঁচ দিনই পাত পেড়ে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। তার জন্য আবাসিকদের ‘কড়ি’ ফেলে খাবারের কুপন সংগ্রহ করতে হবে। আবাসনের প্রবীণারাও রীতিমত পাল্লা দিয়ে পুজোয় মেতে ওঠেন। তাঁদের মধ্যে কেউ তবলা বাজান তো কেউ আবৃত্তি করেন। তাঁরাই জানালেন, পুজো মানে নতুন পোশাক, খাওয়াদাওয়া, প্যান্ডেলে ঘোরা। আর রয়েছে নির্ভেজাল আড্ডা। প্রবীণা সুপ্রীতি চট্টোপাধ্যায়, শিক্তা ঘড়রা বলেন, “ছোটদের মতো এখন আমাদেরও মনে হয় পুজোটা যদি আর ক’টা দিন বাড়ত!” হারিয়ে যাওয়া অতীতই তো খোঁজেন তাঁরা মণ্ডপে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy