Advertisement
১৯ মে ২০২৪

শিক্ষক খুনে তিন বছরেও নেই শুনানি

রাতের খাওয়া সেরে ঘুমোতে গিয়েছিলেন নির্মীয়মাণ বাড়িতে। রোজ সকালে সেখানেই কচিকাঁচার দলকে সেখানেই পড়াতে বসতেন বছর বত্রিশের যুবক। সে দিন সকালে এসে আঁতকে ওঠে জনা কয়েক পড়ুয়া। রক্তে ভাসছে মেঝে। পড়ে রয়েছেন শিক্ষক। ২০১৩ সালের ২১ অক্টোবর সকালে এই ঘটনায় চমকে উঠেছিল কাঁকসার গোপালপুর।

একই রকম রয়ে গিয়েছে বাড়িটি। ছবি: বিকাশ মশান।

একই রকম রয়ে গিয়েছে বাড়িটি। ছবি: বিকাশ মশান।

সুব্রত সীট
কাঁকসা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:২৩
Share: Save:

রাতের খাওয়া সেরে ঘুমোতে গিয়েছিলেন নির্মীয়মাণ বাড়িতে। রোজ সকালে সেখানেই কচিকাঁচার দলকে সেখানেই পড়াতে বসতেন বছর বত্রিশের যুবক। সে দিন সকালে এসে আঁতকে ওঠে জনা কয়েক পড়ুয়া। রক্তে ভাসছে মেঝে। পড়ে রয়েছেন শিক্ষক।

২০১৩ সালের ২১ অক্টোবর সকালে এই ঘটনায় চমকে উঠেছিল কাঁকসার গোপালপুর। পড়ুয়াদের চিৎকার শুনে আশপাশ থেকে বাসিন্দারা ছুটে এসে দেখেন, গলার নলি কাটা অবস্থায় পড়ে রয়েছেন পেশায় গৃহশিক্ষক সমীর দাস। লুঠপাট করতে এসেই খুন বলে প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করেছিল পুলিশ। পরে এক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতারও করা হয়। মামলার চার্জশিট জমা পড়লেও এখনও শুনানি শুরু হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক হিসেবে এলাকায় নাম ছিল সমীরবাবুর। গ্রামের বহু ছেলেমেয়েই তাঁর কাছে টিউশন নিতে আসত। তাঁর দাদা শঙ্করবাবু কাজ করেন বেসরকারি এক কারখানায়। গোপালপুরের উত্তরপাড়ায় দাদার বাড়ির পাশেই নিজের বাড়ি তৈরি করছিলেন সমীরবাবু। তার দরজা লাগানো হয়ে গেলেও তখনও জানলায় গ্রিল বসানো হয়নি। তবু রাতে সেই বাড়িতেই থাকতেন সমীরবাবু।

স্থানীয় ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন সমীরবাবু। একটি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। এলাকায় বেশ পরিচিতি ছিল। ঘটনার সময়ে সমীরবাবুর কাছে ক্লাবের দুর্গাপুজোর বেঁচে যাওয়া টাকা ছিল। স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর টাকাপয়সাও তাঁর কাছেই থাকত। বাড়ির নির্মাণকাজের জন্য ব্যাঙ্ক থেকেও কিছু টাকা তুলে বাড়িতে এনেছিলেন। খুন হওয়ার পরে ঘরের ভিতরের আলমারি লন্ডভন্ড অবস্থায় পাওয়া যায়।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, সম্ভবত টাকার লোভেই সমীরবাবুকে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা। বাসিন্দাদের দাবি মেনে কুকুর এনে দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে ঝোপ থেকে উদ্ধার হয় একটি গামছা, একটি বঁটি ও একটি ছুরি। বঁটিতে রক্তের ছোপ ছিল। রাতে বৃষ্টি হওয়ায় এর বেশি কিছু মেলেনি।

এক সপ্তাহ তদন্তের পরেও দুষ্কৃতীদের কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিবাদ মিছিল করেন। শেষে তদন্তের ভার দেওয়া হয় সিআইডি-কে। প্রথম থেকেই কাঁকসার পুলিশের অনুমান ছিল, পরিচিত কেউ এই ঘটনায় জড়িত। তাকে চিনে ফেলায় খুন হতে হয় সমীরবাবুকে। বেশ কিছু দিন পরে সিআইডি স্থানীয় এক যুবককে গ্রেফতার করে। সিআইডি-র দাবি, জেরায় ধৃত সমীরবাবুকে খুনের কথা স্বীকারও করে। স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর কর্তৃত্বের দখল নিয়েই অশান্তির শুরু বলে সে জানায়। পরে জামিনে ছাড়া পায় অভিযুক্ত। দুর্গাপুর আদালতের অন্যতম সরকারি আইনজীবী কল্লোল ঘোষ বলেন, ‘‘সিআইডি চার্জশিট দিয়ে দিয়েছে। তবে মামলার শুনানি এখনও শুরু হয়নি।’’

গ্রামে সমীরবাবুর খুনের প্রসঙ্গ উঠতেই উত্তেজিত অনেকে। তাঁদের সাফ দাবি, সমীরবাবু পাড়ার সবার সঙ্গে মিশতেন। বিপদে-আপদে এগিয়ে আসতেন। এমন এক জনের খুনির দ্রুত শাস্তি চাই। সমীরবাবুর বৌদি কবিতাদেবী অবশ্য এ ব্যাপারে কিছু বলতে নারাজ। ঘটনার পর কেটে গিয়েছে তিন বছর, কিন্তু এখনও আতঙ্ক যায়নি। তিনি বলেন, ‘‘যদি আমাদেরও কোনও ক্ষতি করে দেয়, সব সময় সেই ভয়ে থাকি।’’ প্রতিবেশী চম্পা মিস্ত্রি জানান, সেই রাতে তাঁদের বাড়িতে রাতের খাবার খেয়েই নিজের বাড়ি গিয়েছিলেন সমীরবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘পর দিন সকালে ভয়াবহ খবরটা পাই। এখনও বিশ্বাস হয় না।’’ স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূল নেতা কাঞ্চন লায়েক বলেন, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে ভবিষ্যতে এমন দুষ্কর্ম করার সাহস কেউ না পায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hearing Not Yet Started Murder Case Kanksa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE