বর্ধমান শহরের কমলাকান্তের কালীবাড়িতে দু’শো বছরেরও বেশি সময় ধরে পুজো হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতি অমাবস্যায় নাকি নিজের হাতে মাটির কালীমূর্তি গড়ে তার পুজো করতেন সাধক কমলাকান্ত। বর্ধমান শহরের বোরহাটের কাছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে আজও সে পুজোয় ছেদ পড়েনি। ছেদ পড়েনি এ পুজোয় মাগুর মাছের পদ রেঁধে ভোগ সাজানোয়ও। কমলাকান্তের কালী মন্দিরে দু’শো বছরেরও বেশি সময় ধরে পুজো হচ্ছে। তবে এ মন্দির পরিচিত ‘কমলাকান্ত কালীবাড়ি’ নামে।
বর্ধমান শহরের ঐতিহাসিক কালী মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম এই কালীবাড়ির স্থাপনা করেন কমলাকান্ত। সালটা ১৮০৯। কথিত, এই মন্দিরেই পঞ্চমুন্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করে কালীর সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালের কালীপুজোর পর এক বছরের জন্য কালীর মাটির মূর্তি রেখে দেওয়া হত। তবে ভক্তদের ইচ্ছায় এখন সাড়ে ছ’ফুট উচ্চতার কষ্টি পাথরের কালীমূর্তি স্থাপনা করা হয়েছে এ মন্দিরে।
কমলাকান্তের জন্ম পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায়। পাঁচ বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর গলসির চান্না গ্রামে মামাবাড়িতে বসবাস শুরু কমলাকান্তর। পরে তন্ত্রসাধনার জন্য এ গ্রামকেই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। বোরহাটের কাছে এই মন্দির প্রতিষ্ঠার পিছনেও কাহিনি রয়েছে। কমলাকান্তর কালীসাধনার কথা জানতে পেরে তাঁকে বর্ধমানে নিয়ে আসেন সেখানকার তত্কালীন মহারাজ তেজচন্দ্র মহাতাব। সেখানে কালীর পুজোপাঠের দায়িত্ব দেন। পাশাপাশি মহারাজের উশৃঙ্খল পুত্র প্রতাপচাঁদকে শিক্ষাদীক্ষা ও সংস্কারে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্যও কমলাকান্তের দ্বারস্থ হন। সে জন্য কমলাকান্তকে বোরহাটের লাকুড্ডিতে একটি বাড়ি এবং কোটালহাটে একটি মন্দিরের জমি দান করেছিলেন তেজচন্দ্র। সে জমিতেই মন্দির স্থাপনা করে সিদ্ধিলাভ করেন কমলাকান্ত।
মন্দিরের সেবায়েত প্রশান্ত রায় বলেন, ‘‘প্রতি দিন কালীর পুজোয় মাগুর মাছের ভোগ খাওয়াতেন সাধক কমলাকান্ত। সে রীতি মেনে আজও মা কালীকে প্রত্যেক দিন মাগুর মাছের ভোগ দেওয়া হয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কমলাকান্ত ও এই মন্দিরকে ঘিরে বহু অলৌকিক কাহিনি রয়েছে। কথিত, মা কালী জীবিত অবস্থায় এ মন্দিরে অবস্থান করছেন প্রমাণ করতে তেজচন্দ্রের সামনে কালীমূর্তির পায়ে বেলকাঁটা ফুটিয়ে রক্ত বার করে দেখান কমলাকান্ত। এমনকি, অমবস্যায় মহারাজকে পূর্ণিমার চাঁদও দেখিয়েছিলেন তিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy