Advertisement
E-Paper

অবৈধ নির্মাণে ঢাকা পড়ছে বাঁকা নদী

শহরে বেআইনি বাড়ির সংখ্যা কত, অনুমোদনহীন নির্মাণই বা কত— পুরসভার কাছেও এর সঠিক কোনও পরিসংখ্যান নেই। আবার অবৈধ নির্মাণ ঠেকাতে তৃণমূল পরিচালিত বর্ধমান পুরসভা আদৌ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে কী না, সে উত্তরও নেই পুরকর্তাদের কাছে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০১:১৮
ইছলাবাদে বাঁকা নদীর পাড় গ্রাস করে উঠছে বাড়ি। ছবি: উদিত সিংহ।

ইছলাবাদে বাঁকা নদীর পাড় গ্রাস করে উঠছে বাড়ি। ছবি: উদিত সিংহ।

শহরে বেআইনি বাড়ির সংখ্যা কত, অনুমোদনহীন নির্মাণই বা কত— পুরসভার কাছেও এর সঠিক কোনও পরিসংখ্যান নেই।

আবার অবৈধ নির্মাণ ঠেকাতে তৃণমূল পরিচালিত বর্ধমান পুরসভা আদৌ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে কী না, সে উত্তরও নেই পুরকর্তাদের কাছে।

অথচ বাঁকা নদীর দুই পাড় কিংবা শহরের ভিতর যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবাধে বেআইনি বাড়ি নির্মাণ যে চলছে, তা অস্বীকার করতে পারছেন না বিগত বাম বোর্ডের পুরপ্রধান আইনুল হক কিংবা বর্তমান তৃণমূল বোর্ডের আবাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যন ইন কাউন্সিল অরূপ দাস। শহরের বাসিন্দাদেরও মত, এমনিতে পুরনো শহরে অপরিকল্পিত ভাবে বাড়ি হয়েছে। এখনও যদি নিয়মবহির্ভূত ভাবে বাড়ি তৈরি হয়, তাহলে শহরটা আর বাসযোগ্য থাকবে না। তবে বেআইনি বাড়ি তৈরির পিছনে কাদের মদত রয়েছে তা নিয়ে চাপানউতোর রয়েছে।

পুরকর্তাদের অভিযোগ, বাম বোর্ডের আমলে শহর জুড়ে বেআইনি বাড়ি তৈরির রমরমা শুরু হয়েছিল, তারই ফল ভোগ করতে হচ্ছে এখন। আর বিরোধীদের পাল্টা দাবি, বর্তমান পুরসভার তরফেই বেআইনি বাড়ি তৈরিতে মদত দেওয়া হচ্ছে। এমনকী বিগত বাম বোর্ডের আমলে যে সব বাড়িকে অনুমতি দেওয়া হয়নি, সেই বাড়িগুলিকেও বর্তমান পুরকর্তারা ‘আইনি’ করে দিয়েছেন। এমনও দেখা গিয়েছে, বহুতল বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে আবাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যন ইন কাউন্সিল অরূপ দাস নকশা অনুমোদন করেননি। তারপরেও পুরসভার প্রভাবশালী এক চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের পরামর্শে সেই সব বহুতল তৈরির অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত। তাঁর অবশ্য দাবি, ‘‘পুর আইন মেনেই আমরা বাড়ি তৈরির অনুমতি দিই।’’

বিগত বাম বোর্ডের পুরপ্রধান আইনুল হকের অভিযোগ, “বাম সরকার চলে যাওয়ার পরে পুলিশও পুরসভার কাজে সহযোগিতা করছিল না। ফলে হাইকোর্টের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও আমরা বেশ কয়েকটি বেআইনি বাড়ি ভাঙতে পারিনি।” তিনি জানিয়েছেন, পুরসভা থেকে বিদায় নেওয়ার আগে অন্তত ২৪৭টি বাড়িকে বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। অবৈধ নির্মাণ খতিয়ে দেখতে তৎকালীন বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের সমীর রায়কে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটিও গড়া হয়েছিল। কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, শহরের বড় রাস্তার চারপাশে গড়ে ওঠা অবৈধ নির্মাণের সংখ্যা ন্যূনতম সাড়ে সাতশো। আর গোটা শহরে তা দেড় থেকে দু’হাজার। এখন সংখ্যাটা অবশ্য কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তার হিসেব নেই। তৃণমূল পরিচালিত বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল (আবাসন) অরূপ দাস সরাসরি স্বীকারও করে নেন যে তাঁদের কাছে বেআইনি বাড়ি নিয়ে সঠিক কোনও তথ্য নেই। তিনি বলেন, “পরিকাঠামোর অভাবে প্রতিটি ওয়ার্ডে কত বেআইনি বাড়ি তৈরি হচ্ছে তার তালিকা আমাদের কাছে নেই।” কেন? তাঁর দাবি, ৩৫ ওয়ার্ডের পুরসভায় ‘ওয়ার্ড অবজর্ভার’ মাত্র ৮জন। অথচ অবৈধ নির্মাণ সঠিক ভাবে খতিয়ে দেখতে অন্তত ২০ জন পর্যবেক্ষকের প্রয়োজন। তাঁর কথায়, “আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ এলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিই। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ থাকলে কাউন্সিলরদের সভা ডেকে পুরপ্রধান সেই নির্দেশ কার্যকর করেন।”

আবার পুরসভার দাবি, বেআইনি বাড়ি ভাঙার জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে গেলেই মালিকেরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন। ফলে পুরো পরিকল্পনা পিছিয়ে যাচ্ছে। তাতে এক দিকে যেমন আয় হারাচ্ছে পুরসভা, তেমনি নিকাশি ব্যবস্থাও বেহাল হয়ে পড়ছে। বিরোধীদের আবার অভিযোগ, পুরনিয়মে বাণিজ্যিক ভবনের অনুমতি দেওয়ার সময় নকশায় পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা সেই নিয়মটুকুও মানছে না। ফলে শহরের অলিগলিতেও যানজটের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অরূপবাবু বলেন, “ব্যক্তিগত বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে আমরা যে খুব কড়া হয়েছি, সে দাবি করব না। কিন্তু বাণিজ্যিক ভবনের অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত নিয়মনিষ্ঠ।’’

জানা যায়, বেআইনি বাড়ি তৈরির এই প্রবণতা শুরু হয় ২০০৮ সালের পর থেকে। প্রথমে বাঁকা নদীর দুই ধারে বস্তি গড়ে ওঠে। তারপর আস্তে আস্তে নদী লাগোয়া জমিতে বাড়ির একাংশ বাড়ানোর খেলা শুরু হয়। বর্তমানে বাঁকা নদীর পাড়ে দাঁড়ালেই দেখা যায়, প্রচুর বাড়ির একাংশ নদীর পাড়ে গিয়ে ঠেকেছে। ফলে বাঁকা দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে। সম্প্রতি সেচ দফতর বাঁকা নদী সংস্কারের জন্য ১২ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থাকে দিয়ে সেই কাজ করানো হবে। তবে এই সব অবৈধ বাড়ি যে বাঁকা সংস্কারের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে তা স্বীকার করে নিচ্ছেন বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা।

তাহলে কী অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দিয়ে বাঁকা সংস্কার করা হবে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলেন, “সামনেই ভোট, বিড়ালের গলায় ঘন্টা বেঁধে কে বিপদ ডাকবে! তাই অবৈধ নির্মাণ রেখেই সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে।” আর শহরের বাসিন্দারা বলেন, ‘‘গেল বোর্ড, এল বোর্ড শহর রইল একই।’’

(চলবে)

Banka river Illegal construction bardhaman municipality high coury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy