দুর্গাপুরের মহিষ্কাপুরে এমনই হাল এক পুকুরের। বুধবার বিকেলে বিশ্বনাথ মশানের তোলা ছবি।
পুজো শেষ। দামোদরের বিভিন্ন ঘাট ও শহরের অনেক পুকুরে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে প্রতিমা বিসর্জনের পালা। সরকারি নিয়ম মেনে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তা চলেছে। তবে বিসর্জনের পরে কাঠামো ও পুজোর অন্য জিনিসপত্র থেকে হওয়া দূষণ রুখতে পুরসভার তরফে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুরসভার দাবি, বিসর্জনের সময় মানুষের নিরাপত্তা ও দূষণ রুখতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিমা নিয়ে দামোদরের ঘাটে আসা বিভিন্ন পুজোর উদ্যোক্তাদের কোনও সমস্যা হবে না বলে দাবি পুরসভার ডেপুটি মেয়র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
দামোদরের বীরভানপুরে বেশ কয়েক বছর ধরেই বিসর্জনের জন্য ঘাট নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। এ বছরও সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। সন্ধ্যার পরে বিসর্জন দিতে ঘাটে এলে যাতে সমস্যা না হয়, সেই জন্য আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যবস্থা রয়েছে জেনারেটারেরও। ঘাটের পাশে জাল দিয়ে একটি অংশ ঘিরে দেওয়া হয়েছে পুজোর ফুল ও অন্যান্য জিনিস ফেলার জন্য। পুরসভা সূত্রে খবর, সেগুলি যাতে স্রোতে ভেসে দূরে চলে না যায়, তাই এই ব্যবস্থা। বিসর্জনের পরেই ফুল ও অন্যান্য জিনিসপত্র দ্রুত জল থেকে তুলে নির্দিষ্ট জায়গায় জমা করার কাজ করছেন পুরসভা নিযুক্ত প্রায় ২০ জন কর্মী। কার্তিক বাউরি, সুনীল বাউরিরা জানান, পুজোর উপাচারের জিনিসপত্রের পাশাপাশি বিসর্জনের পরে মাটি ধুয়ে গেলেই প্রতিমার কাঠামো দ্রুত পাড়ে তুলে নিয়ে আসছেন তাঁরা। তবে তাঁর অভিযোগ, বেশ কিছু পুজোর উদ্যোক্তারা বারণ করা সত্ত্বেও ঘাট থেকে বেশ কিছুটা নেমে গিয়ে বিসর্জন করছেন। তার জেরে কাঠামো তুলে আনতে সমস্যা হচ্ছে। সময়ও লাগছে বেশি। কার্তিকবাবু জানান, তাঁদের মধ্যে কাউকে জলে নেমে কাঠামোয় দড়ি বেঁধে তা তুলে আনতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার বার্নপুরের একাধিক প্রতিমার বিসর্জন ও আখড়ার শোভাযাত্রা দেখতে পথের দু’পাশে ঢল নামে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, শুক্রবারের মধ্যে আসানসোলের সব মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বিঘ্নে বিসর্জনের জন্য বার্নপুরে দামোদরের ঘাট, চিত্তরঞ্জনের অজয়ের ঘাট ও শহরের একাধিক পুকুরের ঘাটে কড়া নজর রাখা হয়েছে। দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যরাও প্রস্তুত রয়েছেন। পুরসভার তরফেও প্রশাসনকে সহযোগিতার জন্য কর্মীদের রাখা হবে বলে জানান মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি।
তবে দুর্গাপুরের নানা এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, নদীর ঘাটে দূষণ রুখতে তৎপরতা দেখা গেলেও শহরের বেশির ভাগ পুকুরে তা নেওয়া হয়নি। অনেক কাঠামো পাড়়ে তুলে দেওয়া হলেও অমরাবতী লাগোয়া একটি পুকুরে বুধবার বেশ কিছু কাঠামো জলে ভাসতে দেখা গিয়েছে। প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য স্থানীয় বহু মানুষ এই পুকুরের উপরে নির্ভরশীল। পুকুরটি মাছ চাষের জন্যও ব্যবহার করা হয় বলে জানান বাসিন্দারা। একই ছবি দেখা গিয়েছে ইস্পাতনগরীর মহিস্কাপুর ও ভাবা রোড এলাকার পুকুরেও। মহিস্কাপুর এলাকার বাসিন্দা প্রতিমা আঁকুড়ে, বাদল মাজিরা জানান, সারা দিনের বিভিন্ন কাজের জন্য তাঁদের পুকুরের জলের উপরে নির্ভর করতে হয়। তাই দ্রুত কাঠামো, ফুল-সহ পুজোয় ব্যবহৃত অন্য জিনিসপত্র তুলে নেওয়া না হলে তাঁদের বিপাকে পড়তে হবে।
বাসিন্দারা জানান, সবে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়েছে শহরে। অধিকাংশ মণ্ডপেই রয়ে গিয়েছে প্রতিমা। তাই শেষ পর্যন্ত নদী ও পুকুরের ঘাটগুলি কতটা পরিষ্কার রাখা যাবে, সে নিয়ে সংশয়ে তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy