Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বিপ্লবের সাক্ষী আশ্রম বাঁচাতে উদ্যোগ

এক পাশে খড়ি নদী। অন্য দিকে সবুজ ধান খেত। মাঝে বট গাছের নীচে চলছে গোপন বৈঠক। ঋষি অরবিন্দ, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বারীন ঘোষদের মতো বিপ্লবীরা দেশ স্বাধীন করার পরিকল্পনা করছেন সেখানে।

এই আশ্রমের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের নানা স্মৃতি। ছবি: উদিত সিংহ।

এই আশ্রমের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের নানা স্মৃতি। ছবি: উদিত সিংহ।

সৌমেন দত্ত
গলসি শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫৯
Share: Save:

এক পাশে খড়ি নদী। অন্য দিকে সবুজ ধান খেত। মাঝে বট গাছের নীচে চলছে গোপন বৈঠক। ঋষি অরবিন্দ, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বারীন ঘোষদের মতো বিপ্লবীরা দেশ স্বাধীন করার পরিকল্পনা করছেন সেখানে।

জায়গাটি গলসির চান্না গ্রাম। এখানেই সেই সময় আশ্রম গড়ে তুলেছিলেন বিপ্লবীরা। সময়ের ফেরে জীর্ণ হয়ে আসা সেই আশ্রমটিকেই বাঁচিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করে চলেছেন বাম আমলের আইনমন্ত্রী নিশীথ অধিকারি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আলিপুর বোমা মামলায় অভিযুক্ত, ভগৎ সিংহের ঘনিষ্ঠ বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ১৯০৭ সালে আশ্রমটি তৈরি হয়। চান্না গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা লক্ষ্মীনারায়ণ হাজরার দাবি, এই আশ্রমে এক সময় এসেছিলেন ভগৎ সিংহ, ভগিনী নিবেদিতা, চিত্তরঞ্জন দাশদের মতো ব্যক্তিত্ব। এখানে থেকে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করতেন তাঁরা। কী ভাবে?

আশ্রমটির সঙ্গে নাড়ির যোগ রয়েছে গলসির বাসিন্দা, স্বাধীনতা সংগ্রামী ফকিরচন্দ্র রায়ের। ফকিরবাবুর বলে যাওয়া কথার সূত্র ধরেই চান্নার বাসিন্দা অমল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই এলাকাটি চারটি থানার সংযোগস্থল। চারদিকে গাছের আড়াল। ফলে পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য ওই বট গাছের তলাটিই ছিল বিপ্লবীদের আস্তানা। ফকিরবাবুর কাজ ছিল, গোপনে চিঠি চালাচালি করা আর পুলিশের গতিবিধির উপরে নজর রাখা। আশ্রমের সামনে কয়েকটি আদিবাসী পরিবারের বসতি স্থাপনে সাহায্য করেন যতীন্দ্রনাথবাবু। আশ্রমের মূল গেটের সামনে সেই থেকে রয়েছে আদিবাসী পাড়া।

কিন্তু ঐতিহ্যের আশ্রমটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের মুখে। আদিবাসীরা যেটুকু পারেন রক্ষণাবেক্ষণ করেন। আশ্রমে গিয়ে দেখা যায়, যতীন্দ্রনাথবাবুর টিনের চাল দেওয়া মাটির মূল ঘরটি ভেঙে পড়েছে। এই আশ্রম ও বিপ্লবীদের স্মৃতি বাঁচাতেই নতুন করে উদ্যোগী হয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা আইনজীবী নিশীথবাবু। ফি সপ্তাহে শনিবার কলকাতার বউবাজার থেকে চান্না গ্রামে ছুটে আসেন তিনি। শুধু তাই নয়, আশ্রম লাগোয়া এলাকায় ১২ বিঘে জমি কিনে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়েছেন। পরে গাছগুলি আশ্রমের ট্রাস্টের হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে। নিশীথবাবুর দাবি, আশ্রম ঘিরে একটি সাংস্কৃতিক শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলতে চান তিনি। তার সঙ্গে অতিথিশালা তৈরি করে গ্রামীণ পর্যটনেরও হাল ফেরাতে চান। আশ্রম বাঁচাতে ইতিমধ্যে ৪ লাখ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে বলেও জানান তিনি।

কিন্তু আশ্রম বাঁচানোর জন্য এমন তাগিদ কেন প্রাক্তন মন্ত্রীর? নিশীথবাবু নিজেই বলেন, ‘‘বিশিষ্ট বামপন্থী নেতা বিনয় চৌধুরীর পরামর্শে এই আশ্রমে এসেছিলাম। তারপর থেকেই কেমন যেন টান অনুভব করি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE