জোরকদমে কাজ চলছে বড়শূলের জুট পার্কে। ছবি:উদিত সিংহ।
নোট বাতিলের পরিস্থিতিতে ভিন রাজ্য থেকে কাজ হারিয়ে ফিরছেন শ্রমিকেরা। এ রাজ্যেও নগদে মজুরি না পেয়ে বসে রয়েছেন অনেকে। সেখানে কর্মী খুঁজতে গ্রামে গ্রামে বৈঠক করছেন বড়শূলের শক্তিগড় জুট পার্কের আধিকারিকেরা।
ওই সংস্থার দাবি, পর্যাপ্ত শ্রমিক না থাকায় বরাত নেওয়া কাজ সময়ে শেষ করা যাচ্ছে না। জুট পার্কের অন্যতম ডিরেক্টর শ্রীবৎস কাজোরিয়া বলেন, ‘‘প্রয়োজনের তুলনায় এখানে কর্মী সংখ্যা কম। তাই আমরা গ্রামে গ্রামে বৈঠক করে শ্রমিক নিচ্ছি। শ্রমিকদের যাতায়াতের দায়িত্ব নিয়েছি। তারপরেও স্থানীয়দের তেমন উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না।”
সংস্থা সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে ২৫ একর জায়গা নিয়ে শক্তিগড় টেক্টটাইল থেকে জুট পার্ক তৈরি হয়। দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে মুরলীধর রতনলাল এক্সপোর্ট লিমিটেড। চার বছরে কর্মী সংখ্যা ৮ থেকে বেড়ে হয় দু’শো। তিনটি ইউনিটও হয়। বর্তমানে জুট স্যাকিং ইউনিট থেকে মাসে ৯০০ টন চটের বস্তা উৎপাদন হয়। নব্য ইউনিটে তৈরি হয় চটের চাদর। কর্তাদের দাবি, প্রায় চার মিটার চওড়া চাদর তৈরি হয়, যা থেকে কার্পেট, জুতো, পর্দা-তৈরি হয়। এ ছা়ড়াও এ বছরের গোড়ায় চালু হয়েছে ‘বায়োজুট ব্যাগ’ ইউনিট। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার ব্যাগ তৈরি করেন কর্মীরা।
সংস্থার দাবি, তিনটি ইউনিট মিলে প্রতিদিন ১৮০০ থেকে ২০০০ শ্রমিক প্রয়োজন। সেখানে মেলে ১৩০০ থেকে ১৫০০ জন। যার অর্ধেক মহিলা। তাঁদের মধ্যে যেমন বড়শূল, শক্তিগড়, পাল্লার শ্রমিক রয়েছেন, তেমনি বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার শ্রমিকও আছেন। বিহার, ওড়িশা থেকেও অনেকে আসেন। সংস্থার মানবসম্পদ আধিকারিক বিশ্বজিৎ মান্নার দাবি, “নোট বাতিলের পরে আমরা কর্মীর খোঁজে জামালপুর, রায়না, মেমারির বিভিন্ন গ্রামে গিয়েছি। হুগলির বৈঁচি, শান্তিনিকেতনের পৌষমেলাতেও বৈঠক করেছি। কারখানায় কাজ করলে কী কী লাভ হবে তা বোঝানো হচ্ছে। কিন্তু তেমন সাড়ে মেলেনি।”
কেন? কর্তাদের দাবি, এলাকাটি মূলত কৃষিনির্ভর। ফলে জমির কাজ ছেড়ে কারখানায় আসতে ভয় পাচ্ছেন অনেকে। তা ছাড়া খেতে কাজ করলে নগদের সঙ্গে আলু বা চাল মেলে, কারখানায় বেতন মেলে নির্দিষ্ট সময়ের পরে। এর উপর নিয়ম মেনে ভবিষ্যনিধি প্রকল্প (পিএফ) বা ইএসআইয়ের টাকা কেটে নেওয়া হয়, যা স্থানীয় শ্রমিকদের মনঃপূত নয়। সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার যুবরাজ অগ্রবাল বলেন, “কিছু না কেটে নগদ টাকা দেব বললেই শ্রমিক মিলবে। কিন্তু আমরা নিয়মের বাইরে যেতে পারব না।’’ তিনি জানান, নোট-বাতিলের পরেই কারখানার সব শ্রমিককে অ্যাকাউন্ট খুলে অনলাইনে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ওই চটকলে কেউ দু’বছর, কেউ পাঁচ বছর ধরে কাজ করছেন মেমারির শ্রী পল্লির উষারানি বল্লভ, বড়শূলের চন্দনা রায়, দেওয়ানদিঘির চৈতালি দত্তেরা। উষারানিরা বলেন, ‘‘বাসে আসা-যাওয়ার খরচ পাই। ফলে পুরো টাকাটাই বাড়ির কাজে, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় ব্যবহার করতে পারি।’’ শ্রমিকেরা জানান, তাঁদের পরিবারের অনেকেই এখানে কাজ করেন। কিন্তু যাঁরা মাঠে কাজ করেন তাঁরা সহজে আসতে চান না। তাঁদের দাবি, আসলে ‘শ্রম-চুক্তি’র নিয়ম-নিষেধে ভয় পেয়ে যান অনেকে। প্রতি দিন হাতে হাতে টাকা না পেয়ে মাসে টাকা কেটেকুটে টাকা পাওয়াতেই অনেকে রাজি হন না।’’ জুটপার্কের তৃণমূল পরিচালিত শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি তথা জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ গোলাম জার্জিসও বলেন, “কারখানা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা নেই এলাকার মানুষের। তাই একটা ভয় আছে। তবে কমবয়েসী ছেলেমেয়ে কাজে আসায় পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy