পাত পেড়ে ভাত, মাছের ঝোল, বেগুনভাজা খাচ্ছে কয়েক জন শিশু। তদারকি করছেন মাস্টারমশাই ও তাঁর পাঁচ ছাত্র। আজ, রবিবার বিশ্ব খাদ্য দিবসের আগে এই দৃশ্যটা আসানসোল স্টেশন লাগোয়া এলাকার। রেস্তোরাঁ ঘুরে-ঘুরে সংগ্রহ করা হচ্ছে উদ্বৃত্ত খাবার। আর তা দিয়েই পথশিশুদের জন্য ‘খাদ্য সুরক্ষা’ নিশ্চিত করতে এমন পদক্ষেপ করেছেন আসানসোলের একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুণ্ডু।
এমন পদক্ষেপের শুরুটা অবশ্য হয়েছিল বেশ কিছু দিন আগে। চন্দ্রশেখরবাবু জানান, তথ্যের অধিকার আইনের মাধ্যমে তিনি জেনেছেন, গত দু’টি আর্থিক বর্ষে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার (এফসিআই) বিভিন্ন গুদামে মোট দু’কোটি ১৯ লক্ষ ৬৩ হাজার কেজি খাদ্যশস্য নষ্ট হয়। ওই শিক্ষকের দাবি, এই পরিমাণ খাদ্যশস্য দিয়ে প্রায় এক কোটি পড়ুয়ার এক মাস মিড-ডে মিলের খাবারের বন্দোবস্ত করা যেতে পারে। চন্দ্রশেখরবাবুর দাবি, ‘‘২০১৪-১৫ আর্থিক বর্ষে রাষ্ট্রসঙ্ঘের হিসেবে, বিশ্বে ৭৯ কোটি মানুষের খালি পেটে রাত কাটে। ভারতবর্ষ তার মধ্যে শীর্ষে।’’ খাদ্যশস্যের অপচয় বন্ধ করতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছেও চিঠি লেখেন তিনি। শুধু চিঠি লিখেই ক্ষান্ত হননি ওই শিক্ষক। মাস দুয়েক আগে শহরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় খোঁজ নিয়ে দেখেন, বেঁচে যাওয়া খাবারের বেশির ভাগটাই ফেলে দেওয়া হয়।
এর পরেই চন্দ্রশেখরবাবু এমন পদক্ষেপ করার কথা ভাবেন। আর এই কাজে সঙ্গে পান কয়েক জন ছাত্রকে। গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিন দুপুর ও রাতে শহরের রেস্তোরাঁ থেকে ২০ জনের খাবার সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে তাঁরা আসানসোল আদালত চত্বরে গিয়ে কয়েক জনকে ভাত-মুরগির মাংস খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। শুক্রবার স্টেশন চত্বরে ছিল খাওয়া-দাওয়া। সেখানে বসেই কিশোর বিকাশ সাউ, মহম্মদ আজিজেরা বলে, ‘‘আগে দোকানের ফেলে দেওয়া খাবার খেতাম। আজ যেন ভোজ খেলাম।’’
উদ্বৃত্ত খাবার দিয়ে খিদে ঘোচানোর লড়াইয়ে নামার নজির অবশ্য অন্য নানা শহরে রয়েছে। সকলের মুখে খাবার তুলে দিতে ২০১৪ সালে দিল্লির যুবক অঙ্কিত কাওয়াতরা ‘ফিডিং ইন্ডিয়া’ নামে একটি কর্মসূচি শুরু করেন। এ ছাড়া মুম্বইয়ের ‘রোটি ব্যাঙ্ক’, ‘রবিন হুড আর্মি’, ‘মেরা পরিবার’-সহ বেশ কয়েকটি সংগঠনও ইতিমধ্যে একই ধরনের কাজ করে চলেছে।
তবে পথশিশুদের মুখে শুধু খাবার তুলে দিয়ে বসে নেই চন্দ্রশেখরবাবুরা। খাবার অপচয় বন্ধে ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু করেছেন তাঁরা। বানানো হয়েছে ‘স্টপ ফুড ওয়েস্টেজ’ নামে স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমাও। সিনেমাটি প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চন্দ্রশেখরবাবুর বক্তব্য, ‘‘এমন প্রচারের উদ্দেশ্য, যাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এই উদ্যোগে সামিল হন, সবার মুখে যাতে খাবার ওঠে।’’ চন্দ্রশেখরবাবুর দলে রয়েছেন বিসিএ-র পড়ুয়া কৌশিক ঘটক। তাঁর কথায়, ‘‘এমন একটা উদ্যোগে নিজে যোগ দিতে পেরে ভাল লাগছে।’’
আপাতত শহরের দু’টি রেস্তোরাঁ থেকে উদ্বৃত্ত খাবার সংগ্রহ করছেন চন্দ্রশেখরবাবুরা। তেমনই একটির মালিক প্রণব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রচুর খাবার বেঁচে যায়। ফেলে না দিয়ে সেই খাবার এ ভাবে কাজে লাগানো হলে খুব ভাল হয়।’’ আসানসোলের মহকুমাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘এই ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা দরকার।’’