Advertisement
০১ মে ২০২৪

পার্কিংয়ের জায়গা নেই, শহর অগোছালো

শহরের মুখ, কার্জন গেট লাগোয়া বিসি রোড এবং শহরের ভিতর জিটি রোডের একাংশকে ‘নো পার্কিং জোন’ ঘোষণা করেছিল বর্ধমান পুরসভা। সেই মতো রাস্তার ধারে বোর্ডও লাগানো আছে। কিন্তু তার পাশেই দেদারে দাঁড়িয়ে রয়েছে রিকশা, টোটো থেকে সাইকেল, মোটরবাইক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০১:০৬
Share: Save:

শহরের মুখ, কার্জন গেট লাগোয়া বিসি রোড এবং শহরের ভিতর জিটি রোডের একাংশকে ‘নো পার্কিং জোন’ ঘোষণা করেছিল বর্ধমান পুরসভা। সেই মতো রাস্তার ধারে বোর্ডও লাগানো আছে। কিন্তু তার পাশেই দেদারে দাঁড়িয়ে রয়েছে রিকশা, টোটো থেকে সাইকেল, মোটরবাইক। স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে নিত্যযাত্রী সকলেরই অভিযোগ, এই বেআইনি পার্কিং সরানোর ব্যাপারে পুরসভা বা পুলিশের কোনও উদ্যোগ নেই। ফলে রাস্তা সংঙ্কীর্ণ হয়ে নাকাল হওয়া ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শহরের বাসিন্দারা জানান, বছর দশেক আগে সিপিএম পরিচালিত বর্ধমান পুরসভা কার্জন গেট থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তাকে ‘নো পার্কিং জোন’ ঘোষণা করে। বেশ কয়েক বছর নিয়ম মানা হলেও বাম জমানার শেষ দিকে ‘নো পার্কিং জোন’ কার্যত বহুল ‘পার্কিং জোনে’ পরিণত হয়। এ ছাড়া ওই সময়ে রানিগঞ্জ বাজারের কাছে রাস্তার উপরে একটা পার্কিং জোন তৈরি করেছিল পুরসভা। কিন্তু পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদাররা ভাড়ার নামে বেশি টাকা আদায় করতেন বলে স্থানীয়দের দাবি। পরে সেই টাকা পুরসভার তহবিলে জমা হতো কি না সে নিয়েও সন্দেহ ছিল তাঁদের। পরে তৃণমূল ক্ষমতায় এসে রাস্তার উপরের পার্কিং জোনগুলি তুলে নেয়। এখন শহরটাই যেন পার্কিং জোন।

এ শহরের জীবনরেখা জিটি রোড। অথচ রাস্তার দু’ধারে ফুটপাথ বলে কিছু নেই। বাসিন্দারা জানান, একসময়ে রিকশার দৌরাত্ম্যে রাস্তায় হাঁটা যেত না, এখন হয়েছে টোটোর উৎপাত। তারপর স্টেশনের সামনে থেকে বীরহাটা পর্যন্ত জিটি রোডের দু’ধারে সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। দুর্ঘটনাও নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। পুলিশের হিসাবে, ওই এলাকায় প্রায় দিনই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন পথচারীরা। সাধারণ মানুষের পথচলার পাশাপাশি ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে বলেও দোকানদারদের দাবি। দোকানের মুখে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় খরিদ্দার টানতে বাধা পড়ে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। শহরের এক ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক চন্দ্রবিজয় যাদব বলেন, “পার্কিং ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমাদেরও ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে।” শহরের সাধারণ মানুষের আরও অভিযোগ, বর্ধমান পুরসভা টোটো চলাচলের অনুমতি দিলেও শহরে কোথাও টোটো স্ট্যান্ড নেই। ফলে শহরের বিভিন্ন মোড়ে, রাস্তায় টোটো দাঁড়িয়ে পড়ছে। স্টেশন এলাকায় টোটোর পরিমাণ বেশি থাকায় সমস্যাও বাড়ছে। তবে শুধু টোটো নয়, জিটি রোডের উপর অনায়াসে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকে ছোট যাত্রীবাহী গাড়িগুলিও। বর্ধমান আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, জিটি রোডে টোটো দাঁড়ানো যাবে না বলে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সেই নিয়ম না মানার জন্য বেশ কয়েকটি টোটোকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যদিও পথচারীদের অভিজ্ঞতা বলছে, প্রশাসন ‘ব্যবস্থা’ নিলেও টোটো কিন্তু জিটি রোডে নিয়মিত দাঁড়াচ্ছে। জেলা পুলিশের (ট্রাফিক) এক কর্তা বলেন, “আমাদের চোখে পড়লেই তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এ ছাড়াও মাঝে মধ্যে বিশেষ অভিযান চালানো হয়।”

যানজটে হাঁসফাঁস বর্ধমানের ‘ডাক্তার পাড়া’ খোসবাগানও। সরু রাস্তায় রিকশা আর অ্যাম্বুল্যান্সের ভারে মানুষের যাতায়াত কার্যত রুদ্ধ। রাস্তার উপরেই আয়েস করে দাঁড়িয়ে থাকে রিকশা ও অ্যাম্বুল্যান্স। এ নিয়ে পথচারীদের সঙ্গে নিত্য ঝামেলাও লেগে থাকে! বিবি ঘোষের তেঁতুলতলা বাজারেও সাড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সাইকেল-মোটর বাইক। স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামসুন্দর দত্ত কিংবা প্রবীণা অনিমা রায়চৌধুরীরাও সাফ বলেন, “রাস্তায় বেরিয়ে নিরাপত্তার অভাব বোধ করি। ফুটপাথ তো নেই, রাস্তার ধারগুলি মোটকবাইক, সাইকেল, টোটোর দখলে। বাধ্য হয়ে রাস্তার মাঝ দিয়ে যাতায়াত করতে হয়!” বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া সোহম কারফরমা, সোহিনী মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “বর্ধমানের রাস্তায় বের হলে গাড়ির ঠোক্কর খেতেই হবে!”

পার্কিংয়ের সমস্যা থেকে শহরবাসীকে রেহাই দিতে গত বছরের ৬ নভেম্বর কার্জন গেটের কাছে ম্যান্ডেলা পার্কে পার্কিং জোন করা হবে বলে ঘোষণা করেছিল বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ। তবে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যায়ে এই ‘পার্কিং জোন’ তৈরির কাজ এখনও শুরু হয়নি। শহরের বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ এ নিয়েও। তবে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য তথা পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর খোকন দাসের দাবি, “তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ডের ভিতর পার্কিং জোন তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে কেউ যেতে চাইছেন না। আমরা এ নিয়ে ফের প্রচার চালাব।’’ তাঁর আশ্বাস, বিডিএ-র উদ্যোগে ম্যান্ডেলা পার্কের কাছে পার্কিং জোন তৈরির কাজ খুব দ্রুত শুরু হয়ে যাবে। কয়েক মাসের মধ্যে শহরে আর পার্কিং সমস্যা থাকবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE