এই রাস্তা ধরে চলে বালির গাড়ি। জামালপুরে। ছবি: সুপ্রকাশ চৌধুরী
বছরের শুরুতেই মাঝরাতে গলসির শিকারপুরে বালি বোঝাই ট্রাক উল্টে একই পরিবারের পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বছরের শেষ প্রান্তে এসে একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল জামালপুরের মুইদিপুর গ্রামে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘরের ভিতরে বালির ট্রাক ঢুকে পিষে দেয় মা ও দুই সন্তানকে। দুই ঘটনার মধ্যে আরও মিল, গ্রামীণ এলাকায় রাস্তা দিয়ে নির্দিষ্ট বহন ক্ষমতার বেশি বালি নিয়ে যাওয়া ও চালক-খালাসিদের বিরুদ্ধে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগ। এ নিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও। শুক্রবারই তিনি জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে এ বিষয়ে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিনই জেলাশাসক এনাউর রহমান ও পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় গ্রামীণ রাস্তার উপরে নজরদারি নিয়ে একটি বৈঠক করেন। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের ধারণা, মূলত ‘টোল’ এড়াতেই রাস্তার নির্দিষ্ট বহন ক্ষমতার থেকে বেশি মাল বোঝাই গাড়িগুলি গ্রামের রাস্তায় ঢুকে পড়ে। এ ছাড়া, বিকল্প রাস্তার অভাবেও ভারী গাড়ি গ্রামীণ রাস্তায় চলাচল করে। এই রাস্তাগুলি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলাশাসক এনাউর রহমান শনিবার বলেন, ‘‘পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে বিডিওদের সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে।’’ পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘গ্রামীণ রাস্তায় ভারী গাড়ি চলাচলের উপরে রাশ টানার জন্য আলোচনা হয়েছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রায়না ২ ব্লকের বড়বৈনান পঞ্চায়েত এলাকায় মুণ্ডেশ্বরীর বালি খাদান থেকে প্রায় দেড়-দু’কিলোমিটার চরের রাস্তা পেরিয়ে দামোদরের গায়ে মুইদিপুর গ্রামে এসে বাঁধের উপরে ওঠে বালির গাড়িগুলি। বাঁধের পিচের আস্তরণ দেওয়া রাস্তা চলে গিয়েছে হুগলির পুটশুঁড়ি-চাপাডাঙা পর্যন্ত। বাসিন্দারা জানান, এই রাস্তায় বাস চলাচল করে না। যাতায়াতের জন্য ভরসা ট্রেকার। এ ছাড়া, চলে বালির ট্রাক। রাস্তার দু’ধারে বেশিরভাগ জায়গায় রয়েছে বসতবাড়ি। ‘অনুমোদনহীন’ এই বাড়িগুলিই চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনের।
৬ জানুয়ারি গলসির শিকারপুরে বালি বোঝাই গাড়ি উল্টে এক পরিবারের পাঁচ জনের মৃত্যুর পরে বাঁধের গায়ে ‘অবৈধ’ বাড়ি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। জেলা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, বালি খাদান থেকে গাড়িগুলি বাঁধ বা গ্রামীণ রাস্তায় ওঠার সময়ে দু’ধারে জনবসতি থাকলে যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বালি নিয়ে ওঠার সময়ে চাকা পিছলে গেলেই বাড়ির উপরে গিয়ে পড়বে ট্রাক। গাড়ি ফাঁকা থাকলেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠিও দিয়েছে পুলিশ। জেলাশাসক বলেন, ‘‘বৈধ বালিঘাট তো আর বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। দুর্ঘটনা এড়াতে বালির ট্রাকগুলি যাতে নিয়ম-নীতি মেনে যাতায়াত করে, তা নিশ্চিত করা হবে।’’
মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘বালি খাদানের কাছে যে সব জায়গায় রাস্তা চওড়া করা যাবে, তা খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনকে বলেছি। একই সঙ্গে, খাদানের কাছে খাসজমির খোঁজ করে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির বিষয়টিও জেলা পরিষদকে দেখতে বলা হয়েছে। এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।’’
বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (বর্ধমান সদর) সুনীল গুপ্তের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের লোকজনই খাদানগুলিতে মদের আসর থেকে বেআইনি কাজে লিপ্ত থাকছেন। তাঁদের আটকাতে পারলেই অনেকটা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন গ্রামের বাসিন্দারা।’’ তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, এই অভিযোগ সারবত্তাহীন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy