পঞ্চায়েতের প্রতিটি সংসদ এলাকায় জনস্বাস্থ্য কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ঠিক হয়, তার জন্য ফি বছর দু’দফায় ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হবে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশের পরে দু’বছর কেটে গেলেও জেলার কোনও সংসদই কেন্দ্রীয় বরাদ্দের সুযোগ নিতে পারেনি।
সম্প্রতি জেলা পরিষদের একটি রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ওই নির্দেশের পরেও বর্ধমানের ৪০৬৫টি সংসদের মধ্যে এখনও ১০৬২টি সংসদে কমিটি গঠন হয়নি। মেমারি ২ ও মন্তেশ্বর ব্লকের কোথাও তৈরি হয়নি কমিটি। আবার যে সমস্ত সংসদে কমিটি তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে মোটে ১৫২২টি সংসদই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে পেরেছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, আসানসোল মহকুমার ৩৫৫টি সংসদের মধ্যে ১২১টি ও দুর্গাপুরে ৬১৯টি সংসদের মধ্যে ২৭৬টিতে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। দুর্গাপুর মহকুমার পাণ্ডবেশ্বরে সবকটি সংসদে কমিটি গঠন হয়ে গেলেও তার একটিতেও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি। একই হাল গলসি ১ ব্লক ও আউশগ্রামেও। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, বর্ধমান সদর (উত্তর) মহকুমার ৬৬৩টি, বর্ধমান সদর (দক্ষিণ) মহকুমার ৬০৯টি, কালনা মহকুমায় ৫৯২টি ও কাটোয়ার ২০০টি সংসদে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি। একমাত্র কেতুগ্রাম ১ ব্লকের সবকটি সংসদেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি ও পুষ্টি-বৃদ্ধি করতে সংসদস্তরে একটি করে কমিটি তৈরি করার কথা পঞ্চায়েতের। সেই কমিটির সভাপতি হবেন ওই সংসদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সচিব থাকবেন এএনএম। ‘জন উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য’ প্রকল্পে প্রতিটি কমিটির অ্যাকাউন্টে দু’দফায় ১০ হাজার টাকা করে আসে কেন্দ্র থেকে। ওই কমিটি প্রয়োজন মতো সেই টাকা খরচ করবে। প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই টাকায় সংসদে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো, টিউবওয়েলের চাতাল তৈরি, টিউবওয়েল-পুকুর পরিষ্কার, কমিউনিটি শৌচাগার, উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র সাফাই, স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে প্রচার-সহ বিভিন্ন কাজ করার কথা।
এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের গড়িমসির জেরেই বছরে ৪ কোটি টাকার উপরে জনস্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বর্ধমান জেলার মানুষ। জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সুরেন হেমব্রমের অভিযোগ, “প্রশাসনিক দক্ষতার অভাবের জন্যই দু’বছরেও কমিটি তৈরি হয়নি। অ্যাকাউন্ট খুলতেও গা নেই কারও। এর ফলে সাধরণ মানুষ জনস্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য দফতরের একাধিক কর্তাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা বলেন, ‘‘সব ব্লকে ঠিকমতো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি বলে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ এখনও মেলেনি। তবে যেখানে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, সেই সব সংসদ যাতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের সুবিধে পায়, তার জন্য রাজ্যকে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।”
তবে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশের দু’বছর বাদেও সব সংসদে কমিটি তৈরি বা ৩৭ শতাংশের বেশি অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ শেষ হল না কেন, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এই প্রসঙ্গে মন্তেশ্বর, মেমারি ২ ব্লকের বেশ কয়েক জন পঞ্চায়েত প্রধানের বক্তব্য, ‘‘নির্বাচনের আগে বা পরে বেশির ভাগ সংসদেই কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে আসতে হয়েছে।’’ আবার পাণ্ডবেশ্বর, রায়না ২ ব্লক প্রভৃতি এলাকার কয়েক জন পঞ্চায়েত প্রধানের অভিযোগ, ‘‘ব্যাঙ্কের অসহযোগিতার কারণেই অ্যাকাউন্ট খুলতে দেরি হচ্ছে।’’ প্রশাসনের সূত্রে খবর, সম্প্রতি জেলা পরিষদের একটি বৈঠকে স্বীকারও করা হয়েছে, জেলায় জনস্বাস্থ্য কমিটি গঠন ও অ্যাকাউন্ট খোলার হার ‘খুবই দুর্বল’। এই পরিস্থিতিতে কমিটি গঠন ও অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়টি দ্রুত শেষ করার জন্য বিডিওদের বাড়তি দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে বলে জেলা পরিষদ সূত্রে খবর।
জনস্বাস্থ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি, দেবু টুডু যদিও বলেন, ‘‘জেলায় প্রায় ৭৪ শতাংশ সংসদে কমিটি তৈরি করে ফেলেছি। জেলার মূল ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে অ্যাকাউন্টগুলি দ্রুত খোলার বিষয়ে চেষ্টা চালাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy