Advertisement
E-Paper

নোট বদলে দিনভর অশান্তি শিল্পাঞ্চলে

কাউন্টারের ও পারে তখনও ঠাঁই দাঁড়িয়ে লম্বা লাইন। কিন্তু হঠাৎ ঝাঁপ বন্ধ ব্যাঙ্কের। ভিতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হল ‘টাকা আসেনি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:০৬
শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ এটিএম বন্ধ রইল শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।

শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ এটিএম বন্ধ রইল শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।

কাউন্টারের ও পারে তখনও ঠাঁই দাঁড়িয়ে লম্বা লাইন। কিন্তু হঠাৎ ঝাঁপ বন্ধ ব্যাঙ্কের। ভিতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হল ‘টাকা আসেনি। আজ আর নোট জমা হবে না।’— শুক্রবার দিনভর এ ভাবেই মোটামুটি দুপুরের পরে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরগুলি ঝাঁপ ফেলল। এর জেরে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ক্ষোভ-অশান্তিও তৈরি হয়।

আসানসোল মূল ডাকঘরে দুপুর ৩টে নাগাদ ‘টাকা নেই’ বলে বন্ধ করে দেওয়া হয় কাউন্টার। এরপরেই লাইনে অপেক্ষারত প্রায় শ’দুয়েক মানুষ বিক্ষোভ দেখান। ডাকঘরের তরফে গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘নতুন করে টাকা হাতে না আসায় গ্রাহকদের এ দিন আর নোট বদলে দেওয়া যায়নি। পুলিশ শেষমেশ পরিস্থিতির সামাল দেয়।’’ মূল ডাকঘরের অধীনে থাকা ৫৪টি ডাকঘরে এ দিন নোটের লেনদেনই হয়নি বলে খবর। নোট-বদল না হওয়ায় নিয়ামতপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেও সাটার ফেলে বিক্ষোভ দেখান গ্রাহকদের একাংশ। ঘণ্টাখানেক বাদে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতির সামাল দেয়।

একই ছবি নিয়ামতপুর, কুলটি, আসানসোলের হাটন রোডেও। সেখানেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেশ কয়েকটি শাখায় নোট-বদল না হওয়ায় শুরু হয় বিক্ষোভ। সব্যসাচী সেনগুপ্ত নামে এক জনের ক্ষোভ, ‘‘সকাল ৭টা থেকে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারপরেও নোট মিলল না।’’ উল্টো দিকে, এথোড়ায় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের একটি শাখায় নোট জমা নেওয়া হলেও তা বদলানো হয়নি বলে জানা গিয়েছে। আসানসোলে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম বেলা ১১টার পরে খুললেও বাকি কোনও ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায়নি বলে জানা গেল।

এ দিন ‘খুচরো টাকা’ নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়। আসানসোল-দুর্গাপুরের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ৫০০-১০০০ টাকার নোট বদলে ১০-২০ টাকার কয়েন ও নোট দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রাহকেরা তা নিতে অস্বীকার করেন। দেবেশ রজক নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘‘অধিকাংশ নোট ছেঁড়া। তা ছাড়া দিন কয়েক আগে খবর রটে, বাজার ছেয়েছে ১০ টাকার জাল কয়েনে। এরপরে বাজারে বিক্রেতারা এই কয়েন নিতে অস্বীকার করছেন।’’ দুর্গাপুরের ক্ষুদিরাম সরণির একটি ব্যাঙ্ক থেকে হাতে খুচরোর প্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে আসছিলেন বেনাচিতির অরূপ দে। তাঁর কথায়, ‘‘এমন হবে জানলে আসতাম না আজ।’’ উল্টো দিকে দুর্গাপুরের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক দু’হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দেওয়ায় ‘খুচরো-সমস্যা’ তৈরি হয়েছে বলে জানান দুর্গাপুর বাজার এলাকার বাসিন্দা সুমন দত্ত।

সমস্যা তৈরি হয় রানিগঞ্জ-জামুড়িয়া-অন্ডালেও। অন্ডাল মোড়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় আগেভাগে ঘোষণা করেও এ দিন প্রবীণ নাগরিকদের জন্য আলাদা লাইন না থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হয় বলে জানান গৌতম চক্রবর্তী নামে এক জন। জামুড়িয়ার বীরকুলটি গ্রামে আবার ডাকঘরই ভরসা ছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একটি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র থাকলেও সেখানে কয়েক দিন টাকা জমা নেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে টাকা তুলতে এসেও ফিরে যেতে হয়েছে অনেককে। যেমন, রানিগঞ্জের বক্তারনগরের বাসিন্দা নির্মল পাল বলেন, ‘‘শিশুবাগানের একটি ব্যাঙ্কে মায়ের পেনশনের শংসাপত্র জমা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন ভিড় কমলে আসবেন।’’ দু’হাজারের বেশি টাকা হাতে না মেলায় সমস্যায় পড়েছেন অন্ডালের শ্রীরমপুরের অশোক নায়েকও। তাঁর কথায়, ‘‘সামনে মেয়ের বিয়ে। এত অল্প টাকায় কী করব জানি না।’’ কর্মীদের বেতন দিতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানান অন্ডালে আরণ্যক কো-অপারেটিভের চেয়্যারম্যান কাঞ্চন মিত্র।

দিনভর দুর্ভোগের ছবি দেখা গিয়েছে শিল্পাঞ্চলের অন্য প্রান্ত, দুর্গাপুরেও। বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে জানানো হয়, শুক্রবার থেকে ব্যাঙ্ক লাগোয়া এটিএম চালু হবে। কিন্তু এ দিন দুপুর ১টা পর্যন্ত কোনও এটিএম চালু হয়নি। বিকেলের দিকে তবে কয়েকটি এটিএম চালু হয়। টাকা না থাকায় ডাকঘর থেকে এ দিনও নোট বদল হয়নি।

নোট বদল করতে গিয়েও সমস্যা হয়েছে বলে জানান গ্রাহকেরা। চার হাজার টাকা করে নোট বদলের কথা থাকলেও বাস্তবে দু’হাজার টাকার মধ্যেই লেনদেন হয়েছে। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সন্ধ্যে ছ’টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা থাকলেও সিটি সেন্টারে ওই ব্যাঙ্কের শাখাটি দুপুর ৪টের সময়ে ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। এ দিন তবে তুলনায় বুধবারের থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বলে দাবি বেসরকারি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের।

কাঁকসা, বুদবুদের বিভিন্ন এটিএম থেকে এ দিন কোনও টাকা মেলেনি। কয়েকটি ব্যাঙ্কে টাকা জমা নেওয়া হলেও নোট-বদল হয়নি। পানাগড়ের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে লেনদেন হলেও, এটিএম থেকে সে ভাবে টাকা মেলেনি বলে দাবি গ্রাহকদের। তবে দুপুর ১২টার পরে এটিএম সচল হয়েছে বুদবুদের চাকতেঁতুল গ্রামে।

তবে এ দিনও দু’হাজারের নোট হাতে পেয়ে নিজস্বীর হিড়়িক দেখা গিয়েছে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সামনে।

Note Exchange Problem Industrial Area
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy