Advertisement
০৩ মে ২০২৪

১০০ টাকায় এক কেজি আলু

সকালের দিকে রোদ উঠেছিল। সমুদ্রও কিছুটা শান্ত হয়েছিল। বাড়ি ফিরতে পারবেন ভেবে মনও ভাল হয়ে গিয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিনয় ভট্টাচার্যের। কিন্তু, দুপুরের পর থেকেই ফের ঘন কুয়াশা। সমুদ্র ফের উত্তাল।

চিন্তায় অরিন্দমবাবুর স্ত্রী ও মেয়ে। —নিজস্ব চিত্র।

চিন্তায় অরিন্দমবাবুর স্ত্রী ও মেয়ে। —নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:১৯
Share: Save:

সকালের দিকে রোদ উঠেছিল। সমুদ্রও কিছুটা শান্ত হয়েছিল। বাড়ি ফিরতে পারবেন ভেবে মনও ভাল হয়ে গিয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিনয় ভট্টাচার্যের। কিন্তু, দুপুরের পর থেকেই ফের ঘন কুয়াশা। সমুদ্র ফের উত্তাল। অনেক কষ্টে করে ফোনে ধরা গেলে বিনয়বাবু বললেন, “কবে যে বাড়ি ফিরব, বুঝতে পারছি না!”

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বেড়াতে গিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আটকে পড়া হাজার খানেক পর্যটকের মধ্যে রয়েছেন বিনয়বাবুও। বিনয়বাবুর মতোই অবসরপ্রাপ্ত দশ জন সরকারি কর্মী বর্ধমান থেকে একটি ট্যুর এজেন্সির সঙ্গে আন্দামান বেড়াতে গিয়েছেন। হোটেল থেকে তিরিশ ফুট দূরে সমুদ্রের ভয়ঙ্কর রূপ দেখার ফাঁকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা এ দিন বলছিলেন, “আমাদের কেউ পুলিশে চাকরি করতাম, কেউ বা শিক্ষকতায় ছিলাম। টাকা-বাতিলের জেরে আমাদের আন্দামান বেড়ানোটা লাটেই উঠছিল। সেই সব সামাল দিয়ে বেড়াতে এলাম, তো প্রকৃতির মারে আটকে পড়লাম! জীবনের এটাও একটা অভিজ্ঞতা।”

ওই দশ জনকে নিয়ে গত ১ ডিসেম্বর পোর্ট ব্লেয়ার বিমানবন্দরে নামেন ট্রাভেল এজেন্সির কর্ণধার, বর্ধমানের টিকরহাটের যুবক অরিন্দম সাহা। ৪ তারিখ নীল দ্বীপ হয়ে হ্যাভলকে পৌঁছয় দলটি। সেখানে দু’দিন কাটিয়ে বুধবার বর্ধমান ফেরার কথা ছিল তাঁদের। ওই পর্যটকদের কথায়, “দ্বীপে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। রীতিমতো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। তার দাপট বুধবার রাত পর্যন্ত কমেনি। বৃহস্পতিবার সকালে বৃষ্টি ধরে আসে, হাল্কা রোদ উঠেছিল। নৌ-বাহিনী আমাদের নিয়ে যাবে শুনছিলাম।’’ অপেক্ষাই সার। তাঁরা জানান, দুপুরের খাওয়ার পর থেকে ফের ঘন কুয়াশায় চারিদিক ভরে যায়। ঝড় ওঠে। অরিন্দমের স্ত্রী মালাদেবী উল্লাস আবাসনে বসে এ দিন বলেন, “আমার স্বামী সবাইকে নিয়ে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত খুবই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি।” টিকরহাটের বাড়ি থেকে অরিন্দমের মা অঞ্জু সাহার কথায়, “ফোনে ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। কবে ফিরবে বলতে পারছে না।” ওই পরিবার সূত্রে জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত তিন পর্যটক খুচরোর অভাবে ওষুধ কিনতেও অসুবিধা হচ্ছে।

নীল দ্বীপে আটকে পড়া সত্যরঞ্জন পান, গণেশ দেবনাথ, উত্তম দাসদের কথায়, “ভয়ঙ্কর বাজে অবস্থায় রয়েছি। হোটেলের গ্যাস ফুরিয়ে গিয়েছে। কাঠ কেটে রান্না করেছি। এক কিলো আলু কিনেছি ১০০ টাকায়!” বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খাবার জলের টান শুরু হয়ে গিয়েছে। ১০০ টাকাতেও এক লিটার জল মিলছে না! বিদ্যুৎ না-থাকায় হোটেলগুলিতেও জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। কাঁপা কাঁপা গলায় তাঁরা বলছিলেন, “বাইরে বেরোতে পারছি না। বাড়ির জন্য চিন্তা হচ্ছে। কী যে হবে বুঝতেই পারছি না।” জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “আমরাও সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ রাখছি।”

এ সবের মধ্যেও ভয়কে জয় করে চলার লোক আছে। প্রবীণ পর্যটক শৈলেন বসু যেমন বলছেন, “এ রকম অভিজ্ঞতাও জীবনে দরকার। ঝড় আর সমুদ্রের খ্যাপামি দেখে আমি তো ভাই দরাজ গলায় গান গাইছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

potato 100rs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE