স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তখন চলছে ঘেরাও-বিক্ষোভ। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো নিয়ে ক্ষোভ জমছিলই। জ্বরে ভুগে এক ছাত্রের মৃত্যুর পরে সেটাই সামনে চলে এল আউশগ্রামের বননবগ্রামে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দু’কিলোমিটার দূরের বাঘড়াই গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্র মহম্মদ হোসেন মোল্লাকে (১৩) রবিবার সকালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। পরিবারের দাবি, দশ দিন ধরে বারবার জ্বরে আক্রান্ত ওই ছাত্রকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। চিকিৎসক ভরসা জুগিয়েছেন। রক্ত পরীক্ষাও করা হয়নি। এ দিন এলাকার লোকজন চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে ঘেরাও-বিক্ষোভ করেন। আটকে রাখা হয় কর্তাদের। পরে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশকে তৈরি হয় আউশগ্রাম ১ ব্লকের এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। ১২-১৪ বিঘা জমিতে তৈরি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও পাঁচিল নেই। গবাদি পশুর অবাধ যাতায়াত। সন্ধের পরে এই চত্বরে অসামাজিক কাজকর্ম হয় বলে অভিযোগ। বিএমওএইচ ধীমান মণ্ডলকে জানান, রবিবারের ঘটনার পরে কেন্দ্রের দুই চিকিৎসক জানিয়েছেন, হাসপাতালে কোনও নিরাপত্তা নেই। তাই তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন। আপাতত তাঁরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসবেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে আউটডোর রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন গড়ে ছ’শো রোগী আসেন। মৃত ছাত্রের গ্রামের বাসিন্দা আহমেদ শেখ, হাবিবুর রহমানদের অভিযোগ, ‘‘তিন জন চিকিৎসক থাকলেও তাঁদের কখনও এক সঙ্গে দেখা যায় না। এক জন করে থাকেন। তিনি বহির্বিভাগে রোগী দেখার ফাঁকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসাও করেন। কোনও রোগী সকাল ৮টায় গেলে বাড়ি ফেরেন বিকেলে।’’ আরও অভিযোগ, রক্ত পরীক্ষা করানোর জন্যও এখানে টাকা দিতে হয়, যা সরকারি নিয়মবিরুদ্ধ। কোনও বিলও দেওয়া হয় না। মাজিমুদ্দিন শেখ, মোস্তাফা হাজিদের দাবি, এক জন চিকিৎসক টানা তিন দিন কাজ করেন। টানা কাজ করায় পরের দিকে তিনি ভাল করে রোগী দেখতে পারেন না। ফলে, চিকিৎসায় অবহেলা হয় বলে তাঁদের অভিযোগ।
এই কেন্দ্রের উপরে আউশগ্রাম ১ ছাড়াও ২ ব্লকও নির্ভরশীল। ১৫টি শয্যা রয়েছে। রোগী থাকেন জনা কুড়ি-পঁচিশ। দিনে গড়ে চারটি প্রসব হয়। রোগীদের অভিযোগ, এক জন চিকিৎসক ঠিক ভাবে দেখতে পারেন না। স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, নার্স থাকার কথা ১২ জন। রয়েছেন ৬ জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ১২ জনের জায়গায় রয়েছেন তিন জন। ফার্মাসিস্ট দু’জনের বদলে এক জন। ঘরও পর্যাপ্ত নয়। দু’টি ঘরে গাদাগাদি করে থাকেন রোগীরা। এর মধ্যেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে একটি ওষুধের দোকান তৈরি হয়েছে বলেও অভিযোগ। বিএমওএইচ জানান, পাঁচিল দিয়ে ঘেরা না থাকায় দোকানটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমিতেই কি না, বোঝা মুশকিল।
বিএমওএইচ ধীমানবাবু বলেন, ‘‘ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই। এ দিনের ঘটনার পরে আতঙ্কে রয়েছেন চিকিৎসকেরা। সোমবার থেকে কী ভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালাব জানি না!’’ তিনি জানান, হাসপাতালের চার দিকে পাঁচিল দেওয়ার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানানো হয়েছে। আরও ঘরের প্রয়োজনের কথাও জানানো হয়েছে।
মহকুমাশাসক (বর্ধমান সদর উত্তর) পুষ্পেন সরকার বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখন পুলিশ পিকেট থাকবে। এ ছাড়া সারা বছর যাতে সিভিক ভলান্টিয়ার থাকে, সে জন্য পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।’’ স্থানীয় বিডিও চিত্তজিৎ বসু জানান, হাসপাতালের চার দিকে পাঁচিল দেওয়ার কাজ শীঘ্রই শুরু হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy