Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

লকডাউনের সকালেও ভিড়, ফাঁকা হল বেলায়

এ দিন থেকে এক সপ্তাহের জন্য জেলার সদর শহর ‘লকডাউন’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। মঙ্গলবার রাতে সে নির্দেশিকা জারি করেন জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী।

বর্ধমান শহরে নজরদারি পুলিশের। বুধবার। ছবি: উদিত সিংহ

বর্ধমান শহরে নজরদারি পুলিশের। বুধবার। ছবি: উদিত সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২০ ০৭:৪৪
Share: Save:

অন্য দিনের মতোই সকালে বাজার-দোকানে ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন অনেক বাসিন্দা। সাইকেল, মোটরবাইক নিয়ে রাস্তাতেও বেরিয়েছিলেন অনেকে। বেলা বাড়তে শুরু হয় পুলিশি তৎপরতা। বুধবার তার পরে ‘লকডাউন’-এর নিয়ম মানার রাস্তায় হাঁটল বর্ধমান শহর।

এ দিন থেকে এক সপ্তাহের জন্য জেলার সদর শহর ‘লকডাউন’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। মঙ্গলবার রাতে সে নির্দেশিকা জারি করেন জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী। এ দিন দুপুরে তিনি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ককর্মী, মার্কশিট নিতে আসা শিক্ষকদের নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। পরে তা মিটে গিয়েছে। বর্ধমান শহরের মতো কাটোয়া, কালনা ও মেমারি শহরেও ‘লকডাউন’ করা যায় কি না, চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’’ মঙ্গলবারই বর্ধমান শহরে ২৮ জন করোনা-আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। সে দিন বিকেলে এক জন করোনা ‘পজ়িটিভ’ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রানিগঞ্জ বাজারের ৬৫ বছরের এক ব্যবসায়ী করোনা-আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি বর্ধমানের গাংপুরের কাছে ‘কোভিড’ হাসপাতালে এক সপ্তাহ ধরে ভর্তি ছিলেন। রবিবার লস্করদিঘির বাসিন্দা এক জন প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়েছিল। সোমবার রাতে তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ আসে বলে জানা গিয়েছে।

বুধবার সকালে শহরের কয়েকটি আনাজ বা মাছের বাজারে ভিড় উপচে পড়ছিল। দূরত্ববিধি না মানা, অনেকে ‘মাস্ক’ না পরার অভিযোগও উঠছিল। সকাল ১১টা পর্যন্ত রাস্তায় ভিড় দেখা যায়। অনেকরই গন্তব্যস্থল ছিল বিসি রোড, তেঁতুলতলা বাজার। বাজারের থলি হাতে দাঁড়িয়ে অনীশ সাহা, তপন দত্ত, অনিন্দিতা ঘোষেরা দাবি করেন, “আচমকা ‘লকডাউন’ ঘোষণা হয়েছে। ঘরে আনাজ-মাছ কিছুই নেই। সে জন্য সকালে উঠে বাজারে ঘুরে গেলাম।’’ যদিও একটি বাজার কমিটির সম্পাদক শেখ স্বপন বলেন, ‘‘আমরা পারস্পরিক দূরত্ব রেখে বাজার করার জন্য প্রচার করছি। অনেকেই নিয়ম মানতে চাইছেন না।’’ শহরের ভিতরে থাকা জেলাশাসকের দফতর, জেলা পরিষদ দফতর-সহ নানা দফতর বন্ধ ছিল।

বেলা বাড়ার সঙ্গে পুলিশ ‘সক্রিয়’ হয় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এ দিন সকালে পুলিশ শহরে ঢোকার মুখগুলি ব্যারিকেড করে আটকে দেয়। নবাবহাট-গোলাপবাগের মাঝে, বর্ধমান স্টেশনের কাছে, কালনা রোডে, ঘোরদৌড় চটি, তেলিপুকুরে পুলিশ পিকেট ছিল। যাঁরা বাইরে থেকে এসেছেন, নির্দিষ্ট কারণ বা পরিচয়পত্র দেখিয়ে ঢুকতে হয়েছে।

পুলিশ জানায়, শহর জুড়ে ৪০০-৫০০ মিটার অন্তর নজরদারি ছিল। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘লকডাউনের প্রথম দিনে ২৫০ জন পুলিশকর্মী রাস্তায় ছিলেন। ‘লকডাউন’ না মানা, পুলিশের সঙ্গে অভব্যতার জন্য এক জনকে আটক করা হয়েছে।’’ এ দিন বিকেলের দিকে বর্ধমান স্টেশনের কাছে এক ট্র্যাফিক কর্তার সঙ্গে কয়েকজন পথচারী বচসায় জড়ান। ব্যাঙ্ক-কর্মীরা দফতরে যেতে গিয়ে পুলিশের প্রশ্নের মুখে পড়লে কয়েকটি জায়গায় সমস্যা দেখা দেয়। পরে কর্মীদের ব্যাঙ্কে যেতে দেওয়া হয়।

সকালে বিসি রোডে কয়েকটি দোকান খোলা, মোটরবাইক নিয়ে রাস্তায় ঘুরতে দেখা যাচ্ছে, বাজারে ভিড় হচ্ছে— এ রকম একাধিক অভিযোগ শুনে বর্ধমান থানার আইসি পিন্টু সাহার নেতৃত্বে পুলিশ শহরে চক্কর দিতে শুরু করে। কয়েকটি বাজার, দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। মোটরবাইক চালকদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) তথা বর্ধমান পুরসভার প্রশাসক পুষ্পেন্দু সরকার বলেন, ‘‘শহরের বড় ভবনগুলি দমকল জীবাণুনাশক স্প্রে করছে। ছোট-ছোট রাস্তা, পুরসভা থেকে করোনা-আক্রান্তের এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। প্রতিটি মোড়ে সচেতনতার প্রচার, প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE