Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ইলিশ ১,৯৫০! শুনেই ভ্যাবাচ্যাকা

‘ইলিশ কত রে হরি?’ ‘১৯৫০ টাকা’। মানে মানে আড়াইশো কিনেই কেটে পড়লেন শ্বশুরমশাই। মাছ, ফল হোক বা মিষ্টি— আজ, শুক্রবার জামাই ষষ্ঠীর দিন বাজার ঘুরে পকেটে টান পড়ছে। অন্তত তেমনটাই অভিজ্ঞতা শ্বশুরমশাইদের।

কাটোয়ার বাজারে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

কাটোয়ার বাজারে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া ও কালনা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০২:০৫
Share: Save:

‘ইলিশ কত রে হরি?’ ‘১৯৫০ টাকা’। মানে মানে আড়াইশো কিনেই কেটে পড়লেন শ্বশুরমশাই। মাছ, ফল হোক বা মিষ্টি— আজ, শুক্রবার জামাই ষষ্ঠীর দিন বাজার ঘুরে পকেটে টান পড়ছে। অন্তত তেমনটাই অভিজ্ঞতা শ্বশুরমশাইদের।

বাজার করতে গিয়ে হাঁফ ধরার মতো অবস্থা এক শ্বশুরমশাইদের। তবে শাশুড়ি মার আব্দার, সকালে জামাইয়ের পাতে একটু মিষ্টি আর ফল সাজিয়ে দেবেন। ফলের ডালায় থাকতেই হবে আম, জাম, লিচু, খেজুর ইত্যাদি। ব্যবসায়ীরা জানান, ফলন কম হওয়ায় আমের দর বেশ চড়া। কী রকম? কালনার বিভিন্ন বাজারে গাছ পাকা হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। সকাল সকাল বাজারে এসেছিলেন কাটোয়া হরিসভাপাড়ার বাসিন্দা সতীশচন্দ্র বণিক। জামাইয়ের পাতে টাটকা ভাল আম আর লিচু সাজিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে। কিন্তু হিমসাগরের দাম শুনে তাঁর পিলে চমকে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘দু’দিন আগেও ছিল ৩০ টাকা। আজ দেখি ৬০টাকা।’’ নীচুবাজার এলাকার এক বাসিন্দারা কাঁচুমাচু মুখে জানান, লিচু কিনেছেন ১২০ টাকা কিলোগ্রাম দরে। আম্রপালি ৪০ টাকা, ল্যাংড়া ৫৫ টাকায় বিকোচ্ছে বলে বাজার কমিটিগুলির সূত্রে জানা গেল। সমুদ্রগড়ের ব্যবসায়ী রাকেশ মিশ্র বলেন, ‘‘একে জামাই ষষ্ঠী তার উপরে রমজান মাস। শুধু আম নয়, চাহিদা রয়েছে কাঁঠালেরও। কিন্তু দরটা একটু চড়া।’’ কাঁঠাল বিকোচ্ছে কত দরে? রাকেশবাবু বলেন, ‘‘প্রতিটা ৪০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়েছে।’’ এ ছাড়াও কিলোগ্রাম প্রতি জাম ২০০ টাকা, জামরুল ও খেজুর ১০০ টাকা দরে বিকোচ্ছে।

দামী ফল তো বটেই, এই মরসুমে দাম বেড়েছে কলা, শসারও। কাটোয়ার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেল, অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার কলা বা শসার দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। এক ক্রেতার কথায়, ‘‘ছোট্ট নাতনির জন্য ভাবলাম একটু কমলালেবু কিনবো। কিন্তু দেখি একটা কমলালেবু বিক্রি হচ্ছে ১৫টাকা করে।’’ দাম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন স্টেশন বাজার, চকবাজার, নিয়ন্ত্রিত বাজার, ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়, কালেখাঁতলা, পারুলিয়া, কুসুমগ্রামের বাজারের ব্যবসায়ীরাও। ফল বিক্রেতা আব্বাস শেখ বলেন, ‘‘শুধু খেজুরের দামই কিলোতে ১০ টাকা করে বেড়েছে।’’

ফলের বাজারের পাশাপাশি সব্জির বাজারদরও বেশ চড়া। কাটোয়ার সব্জি বিক্রেতা আব্দুল জাব্বারের কথায়, ‘‘ফুলকপির দর ২৫ টাকার আশেপাশে। একে উৎসবের মরসুম, তার উপরে ফুলকপির আমদানি কম। তাই হয়তো দাম বেড়েছে।’’ পটল ২৫, ঝিঙে ১২, টমাটো ৫০, বেগুন ১৫ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম দরে বিক্রি হচ্ছে।

দাম বেড়েছে মাছ বাজারেও। যেমন, কাটোয়ার বড়বাজারের এক আড়তদার জানান, বড় ইলিশ ১৯৫০ টাকা, ছোট ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কইয়ের দর ৪০০টাকা প্রতি কিলোগ্রাম। কালনার বাজারে দু’কিলোগ্রাম কাতলার দর ৪০০ টাকা।

খাবার শেষে জামাইকে একটু মিষ্টি-মুখ না করালে কি চলে! মিষ্টির দোকানে বাজারদরের আগুনে আঁচ তেমন পড়েনি বলেই দাবি। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে কালনা ও লাগোয়া এলাকায় তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি। যেমন নিভুজি মোড়ের একটি দোকানে রয়েছে চকলেট রসগোল্লা, নারকেল রসগোল্লা, প্রাণহারার দেদার সম্ভার। দোকান মালিক দেবরাজ বারুইয়ের দাবি, ‘‘দুধ ও অন্যান্য অন্যান্য জিনিসপত্রর দাম চড়লেও সব কিছু মধ্যবিত্তদের নাগালের মধ্যে রাখা চেষ্টা করা হয়েছে।’’ তবে কাটোয়ার এক মিষ্টি ব্যবসায়ী জানান, দামের সঙ্গে চাহিদার সাজুয্য রাখতে গিয়ে মিষ্টির আকার খানিকটা কমাতে হয়েছে।

তবে বাজারে আগুন দর হলেও ডরাচ্ছেন না শ্বশুরমশাইরা। এক জনের বক্তব্য, ‘‘দামটা চড়া। কিন্তু একটা তো মাত্র দিন। তাই পকেটে টান হলেও টাটকা জিনিসই চাই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hilsa price
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE