E-Paper

বৃষ্টি হতেই আলুবীজের দাম দ্বিগুণ

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে আলু লাগানো হয়েছে ৫১,২৮৯ হেক্টর জমিতে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:১৫
মেমারিতে আলুবীজ কেনার লাইন।

মেমারিতে আলুবীজ কেনার লাইন। নিজস্ব চিত্র।

বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় বৃহস্পতিবার সকালে মেমারির সাতগেছিয়ায় পঞ্জাবের আলু বীজ কিনতে গিয়েছিলেন কৌশিক দাস। এক প্যাকেটের জন্য (৫০ কেজি) ১৫৫০ টাকা দাম দিতে হবে বলে জেনেছিলেন। কিন্তু এ দিন সকালে কিনতে গিয়ে শুনলেন দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, ৩৭৫০ টাকা। দুপুরের পরে দাম আরও বাড়ে। মেমারি, জামালপুর, কালনার বিভিন্ন জায়গায় প্রতি প্যাকেট আলু বীজ বিক্রি হয়েছে চার হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আবার স্থানীয় আলু বীজকে পঞ্জাবের প্যাকেটে ভরে বিক্রির চক্র চলছে বলেও চাষিদের একাংশের দাবি।এ দিন ভোর থেকেই আলু বীজ কেনার জন্য নানা দোকানের সামনে লম্বা লাইন পড়ে। ভিড় সামলাতে সিভিক ভলেন্টিয়ারও মোতায়েন করতে হয়।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে আলু লাগানো হয়েছে ৫১,২৮৯ হেক্টর জমিতে। কৃষি দফতরের রিপোর্ট, নিম্নচাপের জেরে ৪৬,১১৭ হেক্টর আলুর জমি জমিতে জল ঢুকে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। চাষিদের দাবি, নিচু জমির একশো শতাংশ বীজই নষ্ট হয়ে যাবে। আর উঁচু জমির ক্ষেত্রে বীজ নষ্টের সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ। ফলে সেখানে দ্বিতীয় বার আলু বসাতে হবে। এ ছাড়াও পড়ে থাকা ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে বীজ পুঁততে হবে। সবমিলিয়ে বিপুল পরিমাণ বীজ-আলু জেলায় প্রয়োজন। সেই সুযোগই নিচ্ছেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী।

জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) নকুলচন্দ্র মাইতি বলেন, “আমাদের নজরে রয়েছে। সরাসরি অভিযোগ পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলা পরিষদের প্রাক্তন কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইলের অভিযোগ, “নিম্নচাপের সুযোগে ১৫০০ টাকা বীজ আলুর দাম চার হাজার টাকায় পৌঁছে গিয়েছে। কী ভাবে চাষ হবে, তা নিয়ে আলু চাষিরা সংশয়ে।’’

অভিযোগ, মেমারি শহর ও আশেপাশে এলাকার দোকান থেকে বেশি দামে বীজ আলু কিনতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। সকাল থেকে লাইন দিয়ে দুপুরে এক বস্তা বীজ আলু মিলেছে। একাধিক দোকানের সামনে সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করতে হয়েছে। লাইনে দাঁড়ানো মেমারির চাষি সঞ্জয় মাঝি, শ্রী নাথ, খোকন হাজরাদের দাবি, “৩৫-৪০ কিলোমিটার দূর থেকে বীজ নেব বলে এসে ভোর থেকে লাইন দিয়েছি। অকাল বৃষ্টিতে সব নষ্ট হওয়ার মুখে। অনেকে অগ্রিম দিয়ে রাখছেন। সেই সুযোগে ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে রেখেছেন।”

মেমারি ২ ব্লকের তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি অমল বাগও বীজ আলু কিনতে গিয়েছিলেন। কয়েকটি দোকান জানায় বীজ নেই। তাঁর কথায়, “মূল দামের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি দাম নিলে চাষিরা তো আর দাঁড়াতে পারবে না। চাষের খরচ এক ধাক্কায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে।” পশ্চিমবঙ্গ আলু বীজ ব্যবসায়ী সমিতির জেলার সম্পাদক দেবেশ ঘোষ বলেন, “চাহিদা আর জোগানের পার্থক্যে দাম বাড়ছে। নিম্নচাপের আগে পঞ্জাবের ২২০০ টাকায় কেনা বীজ আলুর প্যাকেট ১৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে! এখন পঞ্জাবের বীজ আলুর দামও বেড়ে গিয়েছে।” তিনি জানিয়েছেন, স্থানীয় বীজকে পঞ্জাবের বীজ আলু বলে বলে চালানোর ‘চক্র’ শুরু হয়েছে বলেও তাঁরা শুনেছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান তিনি। জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মেহেবুব মণ্ডল বলেন, “এ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সবাইকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy