জাতীয় শিক্ষক হিসেবে তিনি পুরস্কৃত হন প্রায় ৬৪ বছর আগে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের হাত থেকে ওই পুরস্কার পাওয়ার পরে তাঁকে জাতীয় শিক্ষানীতি কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারে তাঁর মতামত নিতেন। শিক্ষক দিবসে সেই রবিলোচন রাউথকে শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য স্মরণ করে শিল্পাঞ্চল।
বার্নপুরের ইস্কো কারখানার পরিচালনাধীন প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে প্রায় ৩৮ বছর কর্মরত ছিলেন রবিলোচন। কারখানার কর্ণধার বীরেন মুখোপাধ্যায় সংস্থার শ্রমিক-কর্মীদের সন্তানের জন্য এই স্কুল তৈরি করেন। রবিলোচনের মনে হয়েছিল, সংস্থার শ্রমিকদেরও শিক্ষিত করে তুলতে হবে। কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি প্রস্তাব দিতেই চালু হয় সান্ধ্যকালীন বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র। আমৃত্যু রবিলোচন বিনা পারিশ্রমিকে সেখানে পড়াতেন।
এখানেই থেমে থাকেননি রবিলোচন। প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে হেঁটে ঘুরতেন। অভিভাবকদের বুঝিয়ে সন্তানদের স্কুলে আনতেন। ১৯৬০ সালের ২৫ জানুয়ারি তাঁকে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে ‘জাতীয় শিক্ষক’ সম্মান দেওয়া হয়। একটি শংসাপত্র ও পাঁচশো টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। জানা যায়, পুরস্কার বাবদ পাওয়া টাকা তিনি প্রান্তিক পড়ুয়াদের জন্য খরচ করেন।
১৯৬০ সালের ১৯ জুলাই রবিলোচনকে প্রথম নিজের দফতরে ডেকে পাঠান বিধানচন্দ্র রায়। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একাধিক বার তাঁর মতামত নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র। ছোট আকারে শিক্ষাচক্র তৈরি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, শিক্ষকদের উপযুক্ত সাম্মানিক, সরকারি তত্ত্বাবধানে স্কুল বোর্ডের পরিচালনা-সহ নানা বিষয়ে প্রস্তাব দেন রবিলোচন। ১৯৬৪ সালের ৯ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রকের সদস্য সচিব জে পি নায়ক তাঁকে চিঠি লিখে জানান, দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য ২ অক্টোবর জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপক হিসেবে তাঁকে শিক্ষা সংক্রান্ত মতামত দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। জানা যায়, রবিলোচন এই অনুরোধ গ্রহণ করেন ও মতামত দেন।
রবিলোচন ‘পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি’র সক্রিয় নেতৃত্বে ছিলেন প্রায় ১৬ বছর। আগামী ফেব্রুয়ারিতে সংগঠনের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁর স্মরণিকা প্রকাশের কথা ভাবা হয়েছে, জানান বর্তমান রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল ঘোষ। ১৯৭৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন রবিলোচন। শিক্ষক দিবসে তাঁকে স্মরণ করেন প্রাক্তন ছাত্রেরা। আসানসোল পুরসভার মুখ্য চিকিৎসক দীপক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তিনি ছিলেন প্রথম অভিভাবক। সঙ্কটে তাঁকেই মনে পড়ে।’’ ইস্কোর প্রাক্তন জিএম অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই অবক্ষয়ের সময়ে তাঁর আদর্শই পাথেয় হওয়া জরুরি।’’ এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল শিক্ষক সমিতির রাজ্য নেতা রাজীব মুখোপাধ্যায়দের কথায়, ‘‘শিল্পাঞ্চলে শিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদান আজও স্মরণীয়।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)