Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Eggs

চার সমস্যায় ডিম উৎপাদনে পিছিয়ে জেলা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিম বর্ধমান জেলায় এসে বার বার ডিম উৎপাদনে জোর দেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু জেলায় এখনও সে ভাবে ডিম উৎপাদন হয় না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিপ্লব ভট্টাচার্য
কাঁকসা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৩৯
Share: Save:

রাজ্য জুড়ে ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। সে মতো পশ্চিম বর্ধমান জেলাতেও দাম বেড়েছে ডিমের। সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মধ্যবিত্তকে। তবে এই দামবৃদ্ধির কারণ হিসেবে, মুরগির খাবারের মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করছে পোলট্রি ফেডারেশন। পাশাপাশি, এখনও জেলা ডিম উৎপাদনে স্বনির্ভর না হওয়ার নেপথ্যে জমি ও শ্রমিকের সমস্যা-সহ চারটি কারণের কথা জানাচ্ছে সংগঠনটি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিম বর্ধমান জেলায় এসে বার বার ডিম উৎপাদনে জোর দেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু জেলায় এখনও সে ভাবে ডিম উৎপাদন হয় না। জেলা পোলট্রি ফেডারেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় লক্ষাধিক মুরগির খামার রয়েছে। কিন্তু সেগুলিতে মূলত মাংসের জন্য মুরগি পালন করা হয়। ডিম উৎপাদনের জন্য জেলার মাত্র তিনটি জায়গাস দুর্গাপুরের হেতোডাবা, নিয়মাতপুর ও কাঁকসার জামডোবায় রয়েছে ‘লেয়ার ফার্ম’। সেগুলির মধ্যে হেতোডোবায় দৈনিক এক লক্ষ, নিয়ামতপুরে ২০ হাজার ও জামডোবায় ৫০ হাজার ডিম উৎপাদন করা হয়। অর্থাৎ সব মিলিয়ে জেলায় ডিম উৎপাদন হয় মাত্র এক লক্ষ ৭০ হাজার। এ দিকে, জেলায় ডিমের দৈনিক চাহিদা, প্রায় ৫০ লক্ষ। চাহিদা মেটাতে ডিম আনতে হয় পড়শি বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদনীপুর এবং ভিন্-রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে।

কিন্তু এই শিল্পে রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্প, ভর্তুকির ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে, সেখানে পশ্চিম বর্ধমানে ডিমের উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না কেন? পোলট্রি ফেডারেশন সূত্রে চারটি কারণের কথা জানা যাচ্ছে—

এক, জেলায় মূল সমস্যা জমির দাম। শিল্পাঞ্চল বলে পরিচিত এই জেলায় জমির দাম অনেকটাই বেশি। আর লেয়ার ফার্মের জন্য জমির প্রয়োজনও হয় বেশি। ৩০ হাজার ডিম উৎপাদন করতে পারে, এমন ফার্ম তৈরি করতে জমি দরকার প্রায় দশ বিঘা। জমির দাম বেশি হওয়ায়, বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হচ্ছেন না। তুলনামূলক ভাবে, পড়শি জেলায় জমির দাম তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম। ফলে, সেখানে চলে যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। দুই, শ্রমিকের সমস্যা। এই জেলায় বেশির ভাগ শ্রমিক নানা কারখানায় কাজ করেন। ফলে, পোলট্রি শিল্পে শ্রমিক পাওয়াটা সমস্যার। তিন, এই ধরনের ফার্ম জঙ্গল লাগোয়া, জনবসতিহীন ফাঁকা জায়গায় করতে হয়। কারণ, তা না হলে, জনসাধারণের সমস্যা হবে। কিন্তু এমন জায়গা জেলায় কম রয়েছে। চার, মুরগির বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলা যাবে না। তা না হলে, দূষণের সমস্যা হতে পারে। এ দিকে, জেলায় বছরভর চাষাবাদ সে ভাবে হয় না। তাই, বর্জ্য কৃষিক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায় না।

এই পরিস্থিতিতে ফেডারেশনের জেলা সম্পাদক অখিল সাহা বলেন, “নানা সমস্যা রয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি আগেও জানিয়েছি।” এ বিষয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সমীর বিশ্বাস বলেন, “সমস্যার কথা শুনেছি। আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।”

পাশাপাশি, ডিমের দাম নিয়েও তৈরি হয়েছে সমস্যা। অন্য বছর এই সময় ডিমের দাম থাকে পাঁচ-সাড়ে পাঁচ টাকা করে। এখন সেটাই ছয়-সাড়ে ছয় টাকা। কেন এই পরিস্থিতি? অখিল জানাচ্ছেন, মুরগির খাবারের দাম আগের থেকে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। যেমন, মুরগির খাবারের প্রধান উপকরণ সয়াবিন। সেটির কেজি প্রতি দর বছরখানেক আগে ছিল ৩৫-৪০ টাকা। সেটা এই মুহূর্তে ৭৫-৮০ টাকা প্রতি কেজি। তা ছাড়া, ভুট্টার দর কেজি প্রতি ছিল ১২-১৫ টাকা। এ বার সেটাই ২০-২৫ টাকা। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে, পরিবহণের খরচও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিরই প্রভাব পড়ছে ডিমের দরে, জানাচ্ছে পোলট্রি ফাউন্ডেশন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Eggs West Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE