দুর্গাপুরের রাস্তায় বিশ্বনাথ মশানের তোলা ছবি।
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪: নিয়ামতপুরের কাছে জিটি রোডে বাসের ছাদ থেকে জিনিস বোঝাই বস্তা গড়িয়ে পড়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর পা ভেঙে যায়।
২৮ জুলাই ২০১৬: দুর্গাপুরের এবিএল মোড়ে জাতীয় সড়কে যাত্রী বোঝাই বাসের ছাদ থেকে বেশ কিছু ফাঁকা গ্যাস সিলিন্ডার আটক করেন প্রশাসনের কর্তারা।
১ অগস্ট ২০১৬: আউশগ্রামের চণ্ডীপুরের পলিটেকনিক কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সন্দীপ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয় দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। পুলিশকে তাঁর সহপাঠীরা জানান, বাসের পিছনে ছাদে ওঠার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন সন্দীপ। হাত ফস্কে পড়ে গিয়েই চোট পান।
নিয়ম করা হয়েছে, কিন্তু বাসের ছাদে ওঠা যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, পরপর এই সব দুর্ঘটনা থেকেই তা পরিষ্কার। প্রশাসনের কোনও হেলদোল অবশ্য নজরে পড়ে না। কোনও ঘটনা ঘটলে দু’এক দিন অভিযান চলে। তার পরে আবার আগের পরিস্থিতি। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে বেআইনি জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক সময়ে বাসের ছাদ ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ।
অধিকাংশ বাসেই লেখা থাকে, বাসের ছাদে ওঠা নিষেধ। অথচ, রাস্তায় প্রায় সব বাসের মাথাতেই যাত্রীদের বসে যেতে দেখা যায়। শুধু গ্রামীণ এলাকা নয়, শিল্পশহর দুর্গাপুরেও এমন দৃশ্য নিত্য চোখে পড়ে। পরিবহণ দফতরের নিয়ম, বাসের ছাদ একমাত্র পণ্য পরিবহণে ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনও ভাবে যাত্রী তোলা যাবে না। কিন্তু বেসরকারি বাসগুলি বেশি লাভ করতে গিয়ে ছাদে যাত্রী তোলার রেওয়াজ রেখে দিয়েছে। ফলে, বিপদও হচ্ছে প্রায়শই। এমনকী, অনেক সময় রাস্তার পাশে নিচু হয়ে থাকা গাছের ডালে লেগে জখম হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। তবু প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই রোজ যাতায়াত করেন অসংখ্য যাত্রী।
আউশগ্রামের অভিরামপুর থেকে মানকর যাওয়ার পথে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাসের ছাদে ওঠা রেলিং থেকে সন্দীপ পড়ে যান বলে তাঁর কিছু সহপাঠী জানান। তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন, সন্দীপের মোবাইলে একটি ফোন আসে। তখন বাসের ঝাঁকুনিতে হাত ফস্কে যায় সন্দীপের। সেই অবস্থাতেই বেশ কিছুটা যাওয়ার পরে রাস্তায় পড়ে যান সন্দীপ। রক্তাক্ত সন্দীপকে সহপাঠীরা দুর্গাপুরের হাসপাতালে ভর্তি করেন। রবিবার তাঁর মৃত্যু হয়।
সোমবার দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব বাসের ছাদেই যাত্রী বসে রয়েছেন। কোনও বাসের ছাদে ওঠার রেলিংয়ে ঝুলতে-ঝুলতে যাচ্ছেন যাত্রীরা। বোলপুর, সিউড়ি, বহরমপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া— সব রুটের বাসেই এক ছবি। বাঁকুড়াগামী একটি বাসের কর্মী জানালেন, কয়েক বছর আগে এক বার প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ছাদে ওঠার সিঁড়িটি খুলে দিয়েছিল। তার পরেও কেউ ছাদে যাত্রী তুললে নজরদারি চালিয়ে জরিমানা আদায়ের ব্যবস্থা করেছিল। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘ভিতরে ভিড় থাকলে অনেক সময় ছাদে যাত্রীরা ওঠেন। আমরা যে তাঁদের ছাদে যেতে বলি এমনটা নয়। ছাদে বসে যেতে অনেকে পছন্দ করেন।’’ তবে তাঁরা যে ছাদে ওঠার সময়ে যাত্রীদের বারণ করেন না, সে কথা মেনে নেন বাসের কর্মীরাই।
বাসের ছাদে বসার এই প্রবণতা বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন, প্রশাসনের তরফে সদুত্তর মেলেনি। মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) শঙ্খ সাঁতরা শুধু জানান, ইতিমধ্যে পরিবহণ দফতর এ ব্যাপারে নজরদারি শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy