কালনার পথে বাড়তি বালি বোঝাই ট্রাক। নিজস্ব চিত্র।
নজরদারির অভাবে গভীর রাতে কালনার বিভিন্ন রাস্তা ধরে ছোটে অতিরিক্ত পরিমাণ বালি-পাথর বোঝাই ট্রাক-ডাম্পার। যেখানে যেমন ‘নজরানা’ প্রয়োজন, তা দিলে নির্বিঘ্নে চালানো যায় এই কারবার। অভিযোগ, আইন বহির্ভূত ভাবে অতিরিক্ত পরিমাণ বালি ও পাথর নিয়ে কালনার এসটিকেকে রোড-সহ নানা রাস্তা ধরে যায় এই সব ট্রাক ও ডাম্পার। ভোরের আগেই সে সব সামগ্রী পৌঁছে যায় গোলায়। কালনার বাসিন্দাদের একাংশ মনে করেন, প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে।
বিষয়টি অজানা নয় প্রশাসনেরও। কালনা মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়িতে অতিরিক্ত পরিমাণ মাটি, বালি, পাথর পরিবহণ রুখতে বুধবার বৈঠক হয়েছে। অভিযান চালানোর জন্য তৈরি হয়েছে একটি দল। তাতে রয়েছেন পরিবহণ দফতর এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকেরা। মহকুমাশাসক (কালনা) শুভম আগরওয়াল বলেন, ‘‘অবৈধ ভাবে মাটি, বালি, পাথরের কারবার বন্ধে অভিযান চালাব।’’ জেলা পরিবহণ দফতরের তিন সদস্যের কমিটির রয়েছে। সেই কমিটির সদস্য তথা কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ জানিয়েছেন, তাঁর কাছে মাটি, বালি বা পাথরের বেআইনি কারবার চলছে বলে নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে এলে তা নিয়ে জেলাশাসক এবং জেলা পরিবহণ আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা হবে।
বালি-পাথ কারবারিদের সূত্রে জানা যায়, নতুনহাট, বড়শুল, গলসির বিভিন্ন ঘাট থেকে ট্রাক ও ডাম্পারে বালি তোলা হয়। পাথর বোঝাই হয় রামপুরহাট, নলহাটি, পাঁচামি, শালবাতরার মতো বিভিন্ন এলাকার খাদান থেকে। নিয়ম অনুয়ায়ী একটি ছ’চাকার ট্রাকে সর্বোচ্চ ১২ টন বালি পরিবহণ করা যায়। সেখানে প্রায় ৩৬ টন বালি নিয়ে যাতায়াত করে বহু ট্রাক, দাবি বালির কারবারের সঙ্গে যুক্তদের একাংশের। অন্য দিকে, আইন মোতাবেক ১২ চাকার ডাম্পারে সর্বোচ্চ ২২ টন পাথর পরিবহণ করার কথা। সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ৫৫-৫৬ টন পাথর।
কালনার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এই সব ট্রাক ও ডাম্পারগুলির বড় অংশ যাতায়াত করে এসটিকেকে রোড ধরে। পাথরের গাড়িগুলি কীর্ণাহার, লাভপুর, ফুটিসাঁকো, কেতুগ্রাম, কাটোয়া হয়ে এসটিকেকে রোড ধরে। কিছু গাড়ি পূর্বস্থলীর হেমায়েত মোড় হয়ে চলে যায় কৃষ্ণনগরের দিকে। কিছু গাড়ি আসে কালনার দিকে। বেশ কিছু বালির গাড়ি মঙ্গলকোট, ভাতার, মন্তেশ্বর হয়ে সাতগাছিয়া যায়। সেখান থেকে কিছু গাড়ি মেমারি অভিমুখে চলে যায়। আবার কিছু ট্রাক বর্ধমান-কালনা রোড ধরে যায় বিভিন্ন ঠিকানায়।
এক বালি ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘অতিরিক্ত বালি আনা গেলে ১৫-১৭ হাজার টাকা লাভ হয়। পরিবহণ দফতর গাড়ি ধরে ফেললে প্রায় চার গুণ জরিমানা দিতে হয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বেআইনি ভাবে পাথর-বালি পরিবহণ করতে হলে কিছু টাকা নানা জায়গায় দিতে হয়। গাড়ি যাতে না আটকায়, তার জন্য আগেই টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়।’’ বালি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এখন ১০০ সিএফটি বালি তাঁরা কিনছেন ৫,১০০ টাকা দরে। বিক্রি করছেন ৫৩০০-৫৪০০ টাকায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy