Advertisement
০৩ মে ২০২৪
তিন নার্সিংহোমকে শো-কজ

এমনি প্রসব কি হয় না !

সবে দুপুরের ভাতঘুম দিচ্ছিলেন মালিক। হঠাৎ প্রশাসনের কর্তাদের দেখে ভিরমি খেলেন। রেজিস্টারের ফাইল চেয়ে ঘাঁটতেই থ স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক। রোগীর পরিবারকে দেওয়া বিলের জেরক্স কপি কোথায়?

হানা: কাটোয়ার নার্সিংহোম ঘুরে দেখছেন কর্তারা। নিজস্ব চিত্র

হানা: কাটোয়ার নার্সিংহোম ঘুরে দেখছেন কর্তারা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৭ ০১:৩০
Share: Save:

সবে দুপুরের ভাতঘুম দিচ্ছিলেন মালিক। হঠাৎ প্রশাসনের কর্তাদের দেখে ভিরমি খেলেন। রেজিস্টারের ফাইল চেয়ে ঘাঁটতেই থ স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক। রোগীর পরিবারকে দেওয়া বিলের জেরক্স কপি কোথায়? বেরিয়ে এল বিলের আসল কপি। অর্থাৎ রোগীকে বিল না দিয়েই যেমন খুশি টাকা নিচ্ছেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।

সদ্যোজাতকে নিয়ে শুয়ে প্রসূতি। পাশের তোষক ছেঁড়া, তাতে রক্তের ছাপ। ঘর ভর্তি ঝুল। হাল দেখে প্রসূতিকে অন্যত্র সরিয়ে ঘরে তালা ঝোলালেন কর্তারা।

আর এক নার্সিংহোমের খাতায় প্রসূতিদের নামের পাশে লেখা ‘সিজারিয়ান’। সাধারণ প্রসব কী হয় না? বেশি উপার্জনের জন্য অস্ত্রোপচার করানোয় ধমক খেলেন নার্সিংহোম মালিককে।

বেসরকারি নার্সিংহোমগুলোর বিরুদ্ধে রোগীদের ক্ষোভে যখন তোলপাড় রাজ্য, তখনই শুক্রবার দুপুরে কাটোয়ার তিন নার্সিংহোম পরিদর্শন করলেন স্বাস্থ্য কর্তারা। ধরা পড়ল একাধিক গাফিলতি। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ দিন মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিককে নিয়ে শান্তি, কাটোয়া ও মাতৃকল্যাণ নামে তিনটি নার্সিংহোম পরিদর্শনে যান মহকুমাশাসক। কোথাও রেজিস্টারে গরমিল, তো কোথাও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, বেহাল অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা দেখে তিনটি নার্সিংহোমকেই শো-কজ করা হয়। কাটোয়া নার্সিংহোমের একটি ওয়ার্ড বন্ধও করা হয়। পাঁচদিনের মধ্যে পরিষেবায় বদল না আনলে নার্সিংহোমগুলোতে তালা ঝোলানোর হুঁশিয়ারিও দেন মহকুমাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি।

ঠাকুরপুকুর পাড়ের শান্তি নার্সিংহোমের রেজিস্টারে খামতি পান কর্তারা। মাসদুয়েক ধরে রেজিস্টার আপডেট তো দূর, রোগীদের বিলও দেওয়া হয়নি। সিঁড়িতে ডাঁই হয়ে থাকা স্যালাইন সিলিন্ডার দেখেও জোটে ধমক। মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক কবিতা শাসমল জানতে চান, সিলিন্ডার বদলের লোক আসে না? চুপ নার্সিংহোমের ম্যানেজার। পরে মহকুমাশাসক ওয়ার্ডে ঢুকতেই তাঁকে নালিশ জানাতে এগিয়ে আসে এক রোগীর পরিবার। জরায়ুতে টিউমার নিয়ে দিন চারেক আগে ভর্তি হলেও এখনও চিকিৎসাই শুরু হয়নি বলে দাবি তাঁদের। রোগী আরতি ঘোষের ছেলে তরুণবাবুর কথা শোনে মালিককে ভৎর্সনা করেন মহকুমাশাসক। দেখা মেলে না চিকিৎসক, নার্সেরও। মালিক জয়া রায়ের যদিও দাবি, ‘‘তাঁরা খেতে গিয়েছেন।’’

স্টেশনবাজারের কাটোয়া নার্সিংহোমে আবার প্রসূতির পাশের শয্যা নোংরা হওয়ায় ও ঘরে আবর্জনা থাকায় ওয়ার্ডটি বন্ধ করে দেন কর্তারা। বছর তিনেক অন্তর নার্সিংহোম ভবন রং করার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন তা না হওয়ায় মালিককে এক হাত নেন স্বাস্থ্য আধকারিক। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘২১ দিনের মাথায় জন্ম বা মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়ার কথা। হয়নি কেন?’’ মালিক বিথীকা চট্টোপাধ্যায়ের অজুহাত, ‘‘কর্মী কম। তাই দেরি হয়ে যায়।’’ ম্যানেজারকে বেড ভাড়া জিজ্ঞাসা করায় উত্তর আসে দিন প্রতি ১৫০ টাকা। অথচ দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে ২০০ টাকা। এখানেও চিকিৎসক ও নার্স ‘‘খেতে গিয়েছেন’’ বলে জানান মালিক পক্ষ।

সার্কাস ময়দানের মাতৃকল্যাণের প্রসূতি বিভাগের বিছানাও অপরিচ্ছন্ন। ১৫টি শয্যা অথচ রোগী আছেন ৩৫। চার দিন আগে মাত্র এক জনের সাধারণ প্রসব দেখে কর্তাদের প্রশ্ন, সিজার হয় না? চিকিৎসকের অকপট জবাব, ‘‘বেশিরভাগই নার্সিংহোমে আসেন সিজার করার জন্য।’’ মেয়াদ উত্তীর্ণ অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রও দেখা যায়। মালিক অশোক ঘোষের জবাব, ‘পাল্টে দেব স্যার’।

এ বার কী তবে সচেতন হবেন? কর্তাদের গাড়ি বেরোতেই নার্সিংহোমের এক কর্মী বলে উঠলেন, ‘ধুর রোজ যন্ত্রপাতি পাল্টাবো নাকি!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nusing Home Show Cause
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE