Advertisement
১৭ জুন ২০২৪

কোন্দল মেটাতে বার্তা

একশোয় একশো।— পঞ্চায়েত ভোটে এই জেলায় তৃণমূলের ‘মার্কশিট’ যাতে এটাই হয়, সে জন্য বারবার বার্তা দিতে দেখা যাচ্ছে শীর্ষ নেতৃত্বকে। কিন্তু সেই পরীক্ষায় একশো পেতে গোষ্ঠীকোন্দলের কঠিন প্রশ্নের মোকাবিলা করাটাই মূল চ্যালেঞ্চ, এমনটাই মনে করছেন তৃণমূল কর্মীরা।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩১
Share: Save:

একশোয় একশো।— পঞ্চায়েত ভোটে এই জেলায় তৃণমূলের ‘মার্কশিট’ যাতে এটাই হয়, সে জন্য বারবার বার্তা দিতে দেখা যাচ্ছে শীর্ষ নেতৃত্বকে। কিন্তু সেই পরীক্ষায় একশো পেতে গোষ্ঠীকোন্দলের কঠিন প্রশ্নের মোকাবিলা করাটাই মূল চ্যালেঞ্চ, এমনটাই মনে করছেন তৃণমূল কর্মীরা। তাঁদের দাবি, সেই ‘প্রশ্ন’কে কী ভাবে সরিয়ে রেখে ভোট-পরীক্ষায় যাওয়া যায়, গত কয়েক দিনে পূর্ব বর্ধমানের নানা প্রান্তে ‘পঞ্চায়েতি রাজ’ সম্মেলন থেকে সেই বার্তাই দিয়েছেন জেলা পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।

কী রকম? বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমায় জামালপুরের প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিক ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মেহেমুদ খান, কাটোয়ার পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও প্রাক্তন পুরপ্রধান অমর রাম, পূর্বস্থলীতে প্রাক্তন বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় ও জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল দাস, বর্ধমান উত্তরের জেলা পরিষদ সদস্য নুরুল হাসান ও ব্লক সভাপতি কাকলি তা— এই চার মহকুমায় এই নেতাদের কোন্দল সুবিদিত তৃণমূলের অন্দরেই। জামালপুর বিধানসভাটি হাতছাড়া হওয়ার কারণ হিসেবে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকেই দুষেছিলেন তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। এ ছাড়া মাস খানেক আগে কোন্দল মেটানোর বার্তা দিতে গিয়ে জেলা নেতাদের সামনেই উল্টে মার খান প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বলবাবু।

দু’দিনের পূর্ব বর্ধমান সফরে এই নেতাদের এক মঞ্চে বসিয়ে কোন্দল মেটানোর বার্তা দিতে দেখা গিয়েছে অরূপবাবুকে। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, অরূপবাবু বর্ধমানে এসে মেহেমুদকে নির্দেশ দেন, প্রাক্তন বিধায়ককে নিয়েই সংগঠন করতে হবে। কাটোয়ার সভাতেও দেখা যায়, অমরবাবুকে কাছে টেনে নিয়ে রবীন্দ্রনাথবাবুর পাশে বসাচ্ছেন অরূপবাবু। পূর্বস্থলীতেও তপনবাবু এবং বিপুলবাবুকে জড়িয়ে ধরতে দেখা যায় মন্ত্রীকে। অরূপবাবু দাবি করেন, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই বলেই আমরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এগিয়ে চলেছি।” যদিও বিজেপির নেতা মুকুল রায় বর্ধমানে এসে দলের কর্মীদের বার্তা দিয়েছিলেন, “তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে আমাদের এগোতে হবে।”

পঞ্চায়েতের ‘প্রার্থীপদ’ নিয়ে যাতে কোন্দল না হয় সে জন্য ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে দলের প্রত্যেক পঞ্চায়েত পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের উপর ‘ত্রিস্তরীয় নজরদারি’ রাখতে দলীয় বৈঠকে জেলার সভাপতিকে নির্দেশ দিয়েছেন অরূপবাবু। শুধু তাই নয়, জেলার পাঁচ পুরসভার সদস্যদেরও পঞ্চায়েত ভোটে দলের ‘মাইক্রো অবজার্ভার’ করা হবে বলে তৃণমূল সূত্রে জানা যায়। প্রকাশ্যেই অরূপবাবুকে বলতে শোনা গিয়েছে, “যাঁরা সরকারি প্রকল্পের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন, তাঁরাই দলের প্রার্থী হবেন।” জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ আবার বলেন, ‘‘পাঁচ বছর ধরে অফিস সামলেছেন। এ বার বাড়ি বাড়ি ঘুরুন। মহিলার পুকুর পাড় থেকে রাস্তায় সরকারের প্রকল্পগুলি প্রচার করুন।”

কিন্তু পঞ্চায়েত সদস্য বা সমিতির সদস্যদের কাজের খতিয়ান কী ভাবে বোঝা সম্ভব হবে? বিষয়টি খোলসা করে পূর্ব বর্ধমানের জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “আমাদের রাজা সাজা শেষ হয়ে গিয়েছে। মানুষের কাছে কৈফিয়ৎ দেওয়ার সময় এসেছে। সে জন্য দলের নির্দেশে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যেরা নিজেদের এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে সামাজিক প্রকল্প পৌঁছেছে কি না লিপিবদ্ধ করবেন। না-পৌঁছালেও, কেন পেল না তা-ও জানবেন।” এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ব্লক সম্মেলন হবে বলে জানান অরূপবাবু। সেই সম্মেলনে দলের জেলা সভাপতির প্রশ্নের জবাব দেবেন পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যেরা। পঞ্চায়েতের রণকৌশল হিসেবে, এ ছাড়া বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় যে সব জায়গায় সভা করেছেন, সেখানে পাল্টা হিসেবে তাঁর স্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রচারে নামানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Group Clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE