Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

প্রার্থনাসভায় পথ চলার পাঠ

কথায় আছে— ‘নদীর ধারে বাস, চিন্তা বারো মাস’। আর স্কুল যদি জাতীয় সড়কের পাশে হয়? সেই রাস্তায় যদি দুর্ঘটনা লেগেই থাকে,তা হলে?বর্ধমান-বোলপুর এনএইচ ২বি জাতীয় সড়কের একেবারে গা-ঘেঁষে রয়েছে গুসকরার ইটাচাঁদা প্রাথমিক বিদ্যালয়।

পাঠ: প্রতি দিন এ ভাবেই দেওয়া হয় পথ-নিরাপত্তার শিক্ষা। নিজস্ব চিত্র

পাঠ: প্রতি দিন এ ভাবেই দেওয়া হয় পথ-নিরাপত্তার শিক্ষা। নিজস্ব চিত্র

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
গুসকরা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৭ ০১:০৯
Share: Save:

কথায় আছে— ‘নদীর ধারে বাস, চিন্তা বারো মাস’। আর স্কুল যদি জাতীয় সড়কের পাশে হয়? সেই রাস্তায় যদি দুর্ঘটনা লেগেই থাকে,তা হলে?

বর্ধমান-বোলপুর এনএইচ ২বি জাতীয় সড়কের একেবারে গা-ঘেঁষে রয়েছে গুসকরার ইটাচাঁদা প্রাথমিক বিদ্যালয়। শ’দেড়েক খুদে পড়ুয়াকে ওই জাতীয় সড়ক পার করেই প্রতিদিন স্কুলে যেতে হয়। এ ভাবে যাতায়াত করতে গিয়ে বিপদ হতে কতক্ষণ? সেই আশঙ্কা থেকে কয়েক বছর ধরে ক্ষুদে পড়ুয়াদের পথ নিরাপত্তার পাঠ দিচ্ছেন মাস্টারমশাইরা। তাঁদের বিশ্বাস, আর ছোট থেকেই এই শিক্ষা মজ্জায় ঢুকে গেলে ভবিষ্যতে আর ভুল হবে না।

প্রধান শিক্ষক কার্তিক ঘোষ বলেন, ‘‘প্রতিদিন জাতীয় সঙ্গীতের পর প্রার্থনার লাইনেই পড়ুয়াদের শেখানো হয় কী ভাবে রাস্তা পারাপার করতে হবে। কী কী সাবধানতা নিতে হবে।” শিক্ষক সুদীপ চন্দ জানালেন কী ভাবে সেই পাঠ দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘‘ক্লাসের মধ্যে একটা রাস্তা করে দু’চার জন পড়ুয়াকে গাড়ি করা হয়। সেই রাস্তা ধরে তারা ছুটতে থাকে। দু’দিক দেখে পড়ুয়াদের সেই রাস্তা পার হতে বলা হয়।’’ সুদীপবাবুর জানান, শুরুতে কিছুটা ভুলচুক হলেও পরে সব কিছুই ঠিকঠাক হয়েছে।

পথ চলার পাঠ হাতেকলমে শেখানোয় কাজ হয়েছে বলে মনে করেন অভিভাবকেরা। স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী জাহানারা খাতুনের ঠাকুমা ইটাচাঁদার শুকরুনা খাদিম বলেন, “ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর পর থেকেই খুব চিন্তায় থাকি। বাড়ির কেউ না কেউ স্কুলে দিয়ে আসি। এরপর মাস্টারমশাইরা আর ওদের বাউন্ডারির বাইরে যেতে দেন না। স্কুল শেষে মাস্টারমাশাইরা আবার রাস্তা পার করিয়ে দেন।” পাপিয়া বেগম বলেন, ‘‘এই রাস্তাটা বিপজ্জনক। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। সে দিক থেকে মাস্টারমশাইরা ভাল কাজ করছেন।’’ বাউরিপাড়ার বিকাশ দাসও মনে করে, স্কুল নিয়মিত রাস্তা পারাপারের শিক্ষা দেওয়ায় তা ছেলেমেয়েদের মনে গেঁথে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেমেয়েরাই অনেক সময় আমাদের বলে, রাস্তার ধার দিয়ে যাওয়ার কথা। দু’দিক দেখে রাস্তা পেরোনোর কথা।”

এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা। আউশগ্রাম ১ এর বিডিও চিত্তজিৎ বসু বলেন, “এই উদ্যোগ অত্যন্ত কার্যকরী এবং ব্যতিক্রমী।” এ ব্যাপারে গুসকরা ফাঁড়ির ইনচার্জ পুষ্পেন্দু জানা জানান, ছোট থেকে পড়ুয়াদের সচেতনতার পাঠ দেওয়া খুব ভাল উদ্যোগ। রাজ্য সড়কের ধারে অন্য যে স্কুল আছে সেখানেও এ রকম প্রশিক্ষণের বিষয়ে উদ্যোগী হবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

তবে প্রশাসনের কিছু আর্জি রয়েছে ইটাচাঁদা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। তাঁরা চান, পড়ুয়াদের সুবিধার জন্য স্কুলের সামনের রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং করে দেওয়া হোক। স্কুলের সামনে আস্তে গাড়ি চালানোর নির্দেশ দিয়ে বোর্ডও টাঙানো হোক। সে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন আউশগ্রাম ১ এর বিডিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Safety
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE