Advertisement
১১ মে ২০২৪
Manteswar

নিথর বাবা-মা খাটে, ঘরের কোণে স্তব্ধ মেয়ে

তবে ঘটনার রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনও বচসা হয়েছিল কি না, আলমারি সরানোর আওয়াজ কেন নীচতলায় পৌঁছয়নি, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় আর্তনাদ কারও কানে যায়নি কেন বা বড় মেয়েকে কেন ‘রেহাই’ দিলেন ওই কনস্টেবল—সে সব প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজন। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজন। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মন্তেশ্বর শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২০ ০১:১৪
Share: Save:

‘তুই কি মরতে চাস?’ ঘরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালানোর আগে মেয়েকে এই প্রশ্নই করেছিলেন আরপিএফের কনস্টেবল, এমনই দাবি তদন্তকারীদের। তাঁরা জানিয়েছেন, অসুস্থ ১১ বছরের মেয়েটি যেটুকু কথা বলতে পেরেছে, তাতে সে তাঁদের জানিয়েছে, বাবা তাকে ঘুম থেকে তুলে জানতে চান, ‘তুই কি মরতে চাস’? সে মাথা নেড়ে জবাব দেয়, ঠাকুমার সঙ্গে থাকতে চায় সে। তবে তার পরে কী হল, ভাই-মা কোথায় ছিল—কিছুই বলার অবস্থা নেই সে। ঘটনার কতক্ষণ পরে এক আত্মীয়কে ফোন করে সে, তা-ও নিশ্চিত নয় পুলিশ। তবে এই বয়সে এমন অভিজ্ঞতা সামলে ওঠা সহজ নয়, বলছেন চিকিৎসক থেকে পুলিশকর্মীরা।

দে পরিবারের সদস্যদের দাবি, ঘুম পাড়িয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে তাকে। তবে ঘুম ভাঙলেই চিৎকার করছে ওই কিশোরী। হঠাৎ করে ছেলে-বৌমা-নাতি হারানোর শোক মানতে পারছেন না বৃদ্ধা অন্নপূর্ণা দেবীও। তিনি বলেন, ‘‘নাতিকে নিয়ে মালডাঙা বাজারে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছিল ছোট ছেলে। ফিরে এসে বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলে। রাতে এক বার ওর আওয়াজ পেয়ে গেটে তালা লাগানোর কথাও বলি। বুঝিনি এমন কিছু হবে!’’

বাড়ির বড় ছেলে বাসুদেব দে-ও জানান, ভাইয়ের দাম্পত্য জীবনে বা কারও সঙ্গে অশান্তি ছিল বলে কখনও শোনেননি তাঁরা। বাসুদেববাবুর স্ত্রী কাকলি দে বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় কালীপুজো নিয়ে দুই ভাই কত পরিকল্পনা করল। রাতেই এমন ঘটে গেল, ভাবতে পারছি না। কিছুই বুঝতে পারছি না আমরা।’’ তাঁর দাবি, ছোট জা রেখার বাপেরবাড়ির সঙ্গে দীর্ঘদিন তেমন সম্পর্ক ছিল না। তবে তা নিয়েও কোনও অশান্তি ছিল না।

ঘটনার কথা চাউর হতে সকাল থেকেই ভিড় জমে বাড়ির আশপাশে। তবে কেউই ঘটনার কোনও সূত্র দিতে পারেননি। বাঘাসনের তৃণমূল নেতা স্বপন রায় বলেন, ‘‘এলাকায় বেশ মিশুকে বলে পরিচিত ছিল সুদেব। কয়েকবার দলীয় কার্যালয়েও এসেছিল। আমরা ঘটনাটি শুনে অবাক হয়ে গিয়েছি।’’

তবে ঘটনার রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনও বচসা হয়েছিল কি না, আলমারি সরানোর আওয়াজ কেন নীচতলায় পৌঁছয়নি, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় আর্তনাদ কারও কানে যায়নি কেন বা বড় মেয়েকে কেন ‘রেহাই’ দিলেন ওই কনস্টেবল—সে সব প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, সুদেববাবু কী কারণে ঋণ নিয়েছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manteswar Police constable Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE