Advertisement
০২ মে ২০২৪

তুমহারা বাপ কা ঘর নেহি, থানায় তড়পাচ্ছে চোর

বসন্তের সন্ধে। চোর-ছ্যাঁচোড়-নেতার ভিড় নেই। ঠাঙের উপরে ঠ্যাঙ তুলে মেজাজে লঙ্কা-মুড়ি চিবোচ্ছেন মেজোবাবু। শুক্রবার ঘড়ির কাঁটা সবে ছ’টা পেরিয়েছে। জনা তিন-চার কনস্টেবল কত্তার কাছ ঘেঁষে এসে একটু গালগল্প জুড়েছে কি জোড়েনি, গরাদের ওপার থেকে ছিটকে এল চড়া ধমক “ইয়ে তুমহারা বাপ কা ঘর নেহি, পুলিশ স্টেশন হ্যায়!” ‘জঞ্জির’-এ অমিতাভ!

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৫ ০৩:২২
Share: Save:

বসন্তের সন্ধে।

চোর-ছ্যাঁচোড়-নেতার ভিড় নেই। ঠাঙের উপরে ঠ্যাঙ তুলে মেজাজে লঙ্কা-মুড়ি চিবোচ্ছেন মেজোবাবু।

শুক্রবার ঘড়ির কাঁটা সবে ছ’টা পেরিয়েছে। জনা তিন-চার কনস্টেবল কত্তার কাছ ঘেঁষে এসে একটু গালগল্প জুড়েছে কি জোড়েনি, গরাদের ওপার থেকে ছিটকে এল চড়া ধমক “ইয়ে তুমহারা বাপ কা ঘর নেহি, পুলিশ স্টেশন হ্যায়!”

‘জঞ্জির’-এ অমিতাভ!

তবে কি না হাইট মেরেকেটে সাড়ে পাঁচ, ছিপছিপে বডি, রং ময়লা, মাথায় আমির-টাইপ স্পাইক। হাতে-পায়ে দগদগে কাটা। ওই কাটা দেখেই না কি পুলিশ আঁচ করে নেয়, দিন চার আগে দুর্গাপুর স্টেশন বাজারে টিভির দোকানের কাচ ভেঙে ঢুকেছিল কে! তার পরেই খপাত।

দুর্গাপুর কোক ওভেন থানায় যখন তাকে ধরে আনা হয়, এক কনস্টেবল ভালবেসে বলতে গিয়েছিলেন, “তোর কষ্ট হচ্ছে না?” কটমট করে তাকিয়ে তাকিয়ে তার জবাব, “মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা।”

‘মর্দ’-এ অমিতাভ।

এ তো আজব চাপ! খাকি উর্দির রাগ উঠে যায় টিভি চুরি করে ধরা পড়েছিস আর কথায় কথায় ডায়লগ ঝাড়ছিস! কত দিন ঘানি টানতে হবে জানিস? “দুনিয়া কি কিসি জেল কি দিওয়ার ইতনি পাক্কি নেহি কি রহিম কো বিশ বরস রাখ সকে!”

এ বার ‘শোলে’। শুধু ‘গব্বর’-এর বদলে ‘রহিম’।

সেটাও আবার নিজের নাম নয়। বাপ-মায়ে নাম দিয়েছিল রাজু। কিন্তু ‘জেন্টলম্যান’ বনতে সে মোটেই চায় না। তাই দুর্গাপুরে গাঁধীনগর কলোনির ‘রাজু ভুঁইয়া’ নাম পাল্টে হয়ে গিয়েছে ‘রহিম শেখ’। তা বলে ধম্মকম্মের ধার সে ধারে না। মোটেই মন্দির-মসজিদ করতে যায়নি। নাম পাল্টেই সোজা ধান্দায় নেমে পড়েছে তা-ও বছর এগারো হয়ে গেল।

এত দিনে পুলিশও তাকে চিনে ফেলেছে। চুরি-ডাকাতির অভিযোগে আগেও ধরা পড়েছে সে। সোজা পথে ফেরানোর জন্য এক বার পুলিশ তাকে একটা গুমটিও করে দিয়েছিল। কিন্তু রহিমের তাতে বেশি দিন পোষায়নি। ইতিমধ্যে সে বিয়ে করেছে। তিন ছেলেও হয়েছে। কিন্তু ধান্দা বলতে সে ‘হাতের কাজ’ই বোঝে এখনও।

তাই দোকানের গ্রিল আর কাচ ভেঙে ছ’টা এলইডি টিভি চুরি হতেই পুলিশ রহিমের খোঁজ করেছিল। হাত-পায়ে কাটা থাকায় সে ধরা পড়ে যায়। খোওয়া যাওয়া টিভি আর দলের বাকিদের খোঁজ পেতে গত ১০ মার্চ রহিমকে আদালতে তুলে সাত দিনের হেফাজতে নেয় পুলিশ। বোঝেনি, খাল কেটে কোন অমিতাভ আনছে! তার পর থেকেই অষ্টপ্রহর সিনেমা চালু।

শুধু কি ডায়লগ? অ্যাকশনও চলছে ভরপুর। দ্বিতীয় রাতেই লক-আপে অন্য দুই আসামিকে ধরে পিটিয়ে দেয় রহিম। তাদের তখনকার মতো সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়। তার পর থেকে সারাক্ষণ সিসিটিভি-তে চোখ রেখে বসে আছেন থানার কেউ না কেউ। কিন্তু তাতে কী? রহিমের অনর্গল উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে এক অফিসার নিজের টেবিল থেকে ‘চোপ’ বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন। তাতে পাল্টা হাঁক আসে “মা কা দুধ পিয়া হ্যায় তো সামনে আ!”

‘লাওয়ারিস’-এ অমিতাভ।

দিশেহারা পুলিশ রহিমের স্ত্রীকে বুধবারই থানায় ডেকে এনেছিল। বাইরে যার প্রবল দাপট, সে-ও যে ঘরে বউয়ের কাছে ঢিট, পুলিশের চেয়ে বেশি আর কে জানে? ফর্মুলায় যে কাজ হয়নি, তা নয়। খানিক শান্ত হয়েছিল রহিম। তার সামনে বসেই স্ত্রী বলেন, “সিনেমা দেখতে ও খুব ভালবাসে। তবে বড্ড খামখেয়ালি। কখন কী করে, ঠিক নেই। খুব চিন্তায় থাকি।” শুনে সে মিচকি-মিচকি হাসে। ‘পুলিশ স্যার’দের কাছে আব্দার জোড়ে, হাজার ছয়েক টাকা মাইনের একটা চাকরি জুটিয়ে দিতে হবে, তা হলে এ সব লাইন ছেড়ে দেবে।

কিন্তু বউ বাড়ি যেতেই আবার যে-কে-সেই। এক কনস্টেবল যেই না এক বার বলে ফেলেছেন, ‘তুই ব্যাটা চোর, তোর জন্য এখন চাকরি খুঁজতে যেতে হবে?’ গরাদের ও পার থেকে রহিম হেঁকে উঠছে, “হুঁঃ! চুরি করেই তো কত জন বড়লোক হয়ে গেল। ছাড়া পেলে আবার চুরি করব।

‘কালিয়া’য় অমিতাভ (ঈষৎ বদলে নিয়ে)। পুলিশ খালি দিন গুনছে সাত দিন— কত দিনে হয়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

thief police durgapur subrata sit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE