Advertisement
১৯ মে ২০২৪

জোটে ঝুঁকি আঁচ করেই পুরনো নেতায় ভরসা

লোকসভা ভোটে দলীয় প্রার্থীর হারের পরে তোপের মুখে পড়েছিলেন তাঁরা। শুরু হয়েছিল নতুন নেতা তুলে আনার কাজ। কিন্তু, বিধানসভা ভোটে তাঁদের দূরে সরিয়ে রাখার ঝুঁকি নিতে পারলেন না তৃণমূল নেতৃত্ব।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৬ ০১:৩৪
Share: Save:

লোকসভা ভোটে দলীয় প্রার্থীর হারের পরে তোপের মুখে পড়েছিলেন তাঁরা। শুরু হয়েছিল নতুন নেতা তুলে আনার কাজ। কিন্তু, বিধানসভা ভোটে তাঁদের দূরে সরিয়ে রাখার ঝুঁকি নিতে পারলেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। আসানসোল খনি-শিল্পাঞ্চলের চার আসনে প্রার্থী করা হল পুরনো বিধায়কদেরই। তৃণমূল সূত্রের খবর, বাম-কংগ্রেস জোটের পরিস্থিতিতে এলাকায় প্রভাবশালী এই নেতাদের প্রার্থী না করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে বুঝেই দলীয় নেতৃত্ব খানিক নরম হয়েছেন। প্রার্থী হওয়ার পরে নেতারা অবশ্য এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপি-র বাবুল সুপ্রিয়ের থেকে দলের প্রার্থী দোলা সেন আসানসোল উত্তরে প্রায় ২৫ হাজার, আসানসোল দক্ষিণে প্রায় একুশ হাজার, কুলটিতে প্রায় চল্লিশ হাজার ও বারাবনিতে হাজার দেড়েক ভোটে পিছিয়ে পড়েন। মোট ষাট হাজারেরও বেশি ভোটে হারেন তিনি। এর পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই মূল দায়ী বলে ধারণা হয়েছিল শীর্ষ নেতৃত্বের। তারই জেরে তখন মন্ত্রিত্ব খোয়াতে হয়েছিল আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটককে। পরে অবশ্য ফের মন্ত্রী হন তিনি।

কিন্তু সেই হারের রেশ যে মিটে যায়নি তা বোঝা গিয়েছিল ২০১৫ সালে কুলটি, জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জ ও আসানসোলকে নিয়ে গঠিত নতুন পুরনিগমের ভোটের সময়ে। সাবেক কুলটি পুরসভার চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থীই করেনি দল। পুরনো আসানসোল পুরসভার মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জিতলেও তাঁকে আর মেয়র করা হয়নি। পুরনিগমের মেয়র হিসেবে জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে বেছে নেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সূত্রের খবর, আসানসোলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যাতে আর না মাথাচাড়া দেয় সে জন্যই মলয়বাবুর ঘনিষ্ঠ কাউকে বা তাপসবাবুকে না বেছে জিতেন্দ্রবাবুকে মেয়র করা হয়। এরই মধ্যে দলের আসানসোল জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ভি শিবদাসনকে। কোন্দল এড়াতেই আসানসোলে নেতৃত্বে নতুন মুখ তুলে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে জেলা তৃণমূল নেতাদের একাংশ দাবি করেছিলেন।

দলীয় নেতৃত্বের পরপর এমন সিদ্ধান্তের জেরে এ বার আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তাপসবাবু বা কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বলবাবুকে ফের প্রার্থী করা হবে কি না, সে নিয়ে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার বিকেলে বিধানসভা ভোটের প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পরে স্বস্তিতে ওই সব নেতাদের শিবির। আসানসোল উত্তরে মলয়বাবু, আসানসোল দক্ষিণে তাপসবাবু, কুলটিতে উজ্জ্বলবাবু ও বারাবনিতে গত বার জয়ী বিধান উপাধ্যায়কেই ফের প্রার্থী করে লড়াইয়ে নামছে দল।

জেলা তৃণমূলের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘বাম ও কংগ্রেস যদি জোট করে সেক্ষেত্রে লড়াই কঠিন হতে পারে। সে জন্যই এই নেতাদের উপেক্ষা করতে পারলেন না দলীয় নেতৃত্ব। কারণ, খনি অঞ্চলে তাঁদের যথেষ্ট লোকবল রয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, আসানসোল বা কুলটিতে নতুন কাউকে প্রার্থী করতে হলে বহিরাগত কোনও মুখ আনতে হত। সেক্ষেত্রে গত লোকসভা ভোটের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারত। একটি কেন্দ্রে এলাকারই দলের এক ছাত্রনেতাকে প্রার্থী করার চিন্তাভাবনা হয়েছিল। কিন্তু তা কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে জানাজানি হতেই বিরোধিতা শুরু হয়ে যায়। সে জন্যই আর ঝুঁকি নেয়নি নেতৃত্ব, দাবি ওই নেতার।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন নেতারা। মলয়বাবু বলেন, ‘‘আমি সারা বছরই নিজের এলাকার মানুষের সঙ্গে থাকি। দলনেত্রী প্রার্থী করেছেন, বাকিটা এলাকার বাসিন্দারা ঠিক করবেন।’’ তাপসবাবুরও বক্তব্য, ‘‘দলনেত্রী ভাল বুঝেছেন বলেই প্রার্থী করেছেন। এ বার কর্মীদের আরও উদ্বুদ্ধ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ব।’’ আর উজ্জ্বলবাবু বলেন, ‘‘নেত্রী ফের সুযোগ দিয়েছেন। দলকে জিতিয়ে আনাই প্রধান কাজ।’’ বিধানেরও বক্তব্য, ‘‘এখন জেতা ছাড়া অন্য কথা ভাবছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC election constituency assambly election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE